৬ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
পশ্চিমবঙ্গে সব দলের প্রার্থী তালিকায় পরিবারতন্ত্রের দাপট
পশ্চিমবঙ্গে সব দলের প্রার্থী তালিকায় পরিবারতন্ত্রের দাপট

সমাজের কথা ডেস্ক :  ভারতে শুরু হয়েছে ১৮তম লোকসভা নির্বাচন। তীব্র দাবদাহের মধ্যেও লাইনে দাঁড়িয়ে নিজেদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করছেন দেশটির কোটি কোটি ভোটার। কিন্তু বিশ্বের বৃহত্তম এই গণতান্ত্রিক উৎসবে এবার দেখা যাচ্ছে পরিবারতন্ত্রের দাপট, বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গে।

 

ভারতের লোকসভা নির্বাচনে ৫৪৩টি আসনের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে ৪২টি। এর মধ্যে ১২ আসনেই প্রার্থী করা হয়েছে পরিবারতন্ত্রের সূত্র মেনে। অর্থাৎ যাদের বাবা, মা, চাচা, দাদাসহ পরিবারের কেউ না কেউ একসময় রাজনীতি করতেন, তাদেরই বেছে নেওয়া হয়েছে প্রার্থী হিসেবে।

এবারের লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস ও প্রাচীনতম দল ভারতীয় কংগ্রেস চারটি করে আসনে পরিবারতন্ত্রকে প্রাধান্য দিয়েছে। এমনকি, যে বিজেপি সবসময় পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির বিরোধিতা করে এসেছে, তারাও চলমান লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যের দুটি আসনে পরিবারতান্ত্রিক প্রার্থী দিয়েছে। সিপিআইএম থেকেও একই ধরনের প্রার্থী দেওয়া হয়েছে দুজন।

 

গতবার, অর্থাৎ ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে পরিবারতন্ত্রের এতটা দাপট ছিল না। সেবার রাজ্যের ৪২ আসনের মধ্যে পরিবারতন্ত্র সীমাবদ্ধ ছিল মাত্র তিনটি আসনে।

এ বছর পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর ছোট ভাই সৌমেন্দু অধিকারী কাঁথি লোকসভা আসন থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন। এই আসন থেকে তাদের বাবা শিশির অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে তিনবার সংসদ সদস্য হয়েছিলেন।

 

বনগাঁ আসন থেকে বিজেপির প্রার্থী হয়েছেন মতুয়া সম্প্রদায়ের শান্তনু ঠাকুর। তার ভাই সুব্রত ঠাকুর বর্তমানে বিজেপির বিধায়ক। শান্তনু ঠাকুরের বাবা মঞ্জুল কৃষ্ণ ঠাকুর একসময় তৃণমূলের মন্ত্রিসভার সদস্য ছিলেন এবং তার চাচি মমতা বালা ঠাকুর এখনো তৃণমূলের সংসদ সদস্য। তার চাচা কপিল কৃষ্ণ ঠাকুরও তৃণমূলের টিকিটে জয়ী হয়েছিলেন।

 

তবে পশ্চিমবঙ্গে পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির প্রধান উদাহরণ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ভাতিজা। ডায়মন্ড হারবার আসনে ঘাসফুলের প্রার্থী হয়েছেন অভিষেক। এই আসন থেকে এবার জয়ের হ্যাটট্রিক পাবেন বলে আশাবাদী তিনি।

 

গতবারের মতো এবারও জয়নগর কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী করা হয়েছে প্রতিমা মণ্ডলকে। তার বাবা সাবেক সংসদ সদস্য গোবিন্দ চন্দ্র নস্কর। বর্ধমান-দুর্গাপুর আসন থেকে এবার সাবেক ভারতীয় ক্রিকেটার কীর্তি আজাদকে প্রার্থী করেছে তৃণমূল। কীর্তির বাবা বিহারের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ভাগবত ঝা আজাদ।

 

এছাড়া, উলুবেড়িয়া কেন্দ্র থেকে তৃণমূলের প্রার্থী ওই কেন্দ্রের বর্তমান সংসদ সদস্য সাজদা আহমেদ। এর আগে কেন্দ্রটির সংসদ সদস্য ছিলেন তার স্বামী প্রয়াত সুলতান আহমেদ।

 

পুরুলিয়া কেন্দ্রে ভারতীয় কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন বর্ষীয়ান নেতা নেপাল মাহাতো। তিনিও রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা মানুষ। তার বাবা ছিলেন সাবেক সংসদ সদস্য দেবেন্দ্র মাহাতো।

 

মালদা দক্ষিণ আসনটিতে কংগ্রেস এবার প্রার্থী করেছে আরেক বর্ষীয়ান নেতা ও ভারত সরকারের সাবেক রেলমন্ত্রী প্রয়াত এবিএ গনি খান চৌধুরীর নাতি ঈশা খান চৌধুরীকে। ২০০৬ সালের উপনির্বাচন থেকে এই কেন্দ্রে জিতে এসেছেন ঈশার বাবা ও গনি খানের পুত্র আবু হাসেম খান চৌধুরী।

 

জঙ্গিপুর আসনে কংগ্রেসের প্রার্থী মোর্তাজা হোসেন ওরফে বকুল। তিনি হলেন রাজ্যের কংগ্রেস সরকারের সাবেক মন্ত্রী আবদুস সাত্তারের নাতি। বকুলের বাবা আবু হেনাও ছিলেন কংগ্রেসের পাঁচবারের বিধায়ক ও মন্ত্রী।

 

রায়গঞ্জ কেন্দ্রে আলী ইমরান রামজ (ভিক্টর)-কে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। তিনি সিনিয়র ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা ও চারবারের বিধায়ক মোহাম্মদ রমজান আলীর ছেলে এবং বাম আমলের মন্ত্রী হাফিজ আলম সাইরানীর নাতি। শ্রীরামপুর কেন্দ্রের সিপিআই(এম) প্রার্থী দীপ্সিতা ধর। নতুন প্রজন্মের এই নেত্রী তিনবারের বিধায়ক পদ্মনিধি ধরের নাতনি৷

 

রাজনৈতিক পরিবার থেকে উঠে আসা দক্ষিণ কলকাতা আসনের সিপিআই(এম) প্রার্থী সারিয়া শাহ হালিম। তার শ্বশুর হাসিম আব্দুল হালিম ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার দীর্ঘতম স্পিকার। সারিয়ার স্বামী ডা. ফুয়াদ হালিম সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য।

 

রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের যোগ নিয়ে তৃণমূল নেতা এবং রাজ্যসভার সাবেক সদস্য ডা. শান্তনু সেন বলেন, একজন ডাক্তারের ছেলে যখন ডাক্তার হতে চায় বা আইনজীবীর ছেলে আইনজীবী, তখন রাজনীতিবিদদের সন্তান বা তাদের আত্মীয়-স্বজনরা একই পথ অনুসরণ করলে সেটি ভুল? এটি তখনই সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে, যখন কোনো ব্যক্তির যোগ্যতার মানদণ্ডে আপস করা হয়।

পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির মুখপাত্র ও রাজ্যসভার সদস্য শমীক ভট্টাচার্য বলেন, তার দল রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের বিরোধী। কিন্তু শান্তনু ঠাকুর ও সৌমেন্দু অধিকারীর বিষয়টি আলাদা। তারা উভয়েই সুপরিচিত নেতা। উভয়েই নিজ নিজ যোগ্যতার ভিত্তিতে দলের টিকিট পেয়েছেন।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram