নতুন মন্ত্রিসভায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রি মহিবুল হাসান চৌধুরী দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা ও শিক্ষানীতি নিয়ে কিছু অকপট কথা বলেছেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি দীর্ঘদিন ভেবেছেন এবং এ বিষয়ে যথার্থ অর্থে কিছু করতে আন্তরিকভাবে ইচ্ছুক। এর জন্য তিনি সাধুবাদ পেতেই পারেন।
উলে¬খ করা আবশ্যক, সরকার ২০২৩ সাল থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে নতুন পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন ও পরীক্ষা পদ্ধতির প্রচলন করেছে। যা এখনো রয়েছে পরীক্ষা—নিরীক্ষার পর্যায়ে। নতুন শিক্ষাক্রমের সিলেবাস, পাঠদান পদ্ধতি ও মূল্যায়ন পদ্ধতি ইতোমধ্যেই বিতর্ক ও সমালোচনা তৈরি করেছে অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে। বিভিন্ন অংশীদারির কাছ থেকে কিছু সংস্কারমূলক পরামর্শও এসেছে। এসবের কিছু গ্রহণ করা হয়েছে ইতোমধ্যে।
দু—একটি বই প্রত্যাহারসহ পুনর্লিখিত ও পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে পরীক্ষা গ্রহণের পদ্ধতি নিয়ে। নতুন শিক্ষাক্রমে দেশে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত গতানুগতিক পরীক্ষা পদ্ধতি নেই, যা অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। পরিবর্তে এসেছে মূল্যায়ন পদ্ধতি। এতে শ্রেণি কক্ষে সার্বিক পাঠ গ্রহণের যোগ্যতার মূল্যায়ন করা হবে এবং তদনুযায়ী নির্ধারিত হবে শিক্ষার্থীর অবস্থান।
এতে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত পড়ালেখায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে; পরীক্ষা না থাকায় তারা বাড়িতেও পড়ালেখা করবে না বলে অভিভাবকরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। প্রকৃতপক্ষে মূল্যায়ন পদ্ধতির মূল উদ্দেশ্য শিক্ষার্থীদের কোচিং সেন্টার, গাইড বই ও গৃহশিক্ষকের পাঠদানকে নিরুৎসাহিত করা। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, মূল্যায়ন পদ্ধতি ইতিবাচক ও ফলপ্রসূ না হলে প্রয়োজনে সংস্কার করা হবে। এটি স্থায়ী কোনো বিষয় নয়।
শিক্ষামন্ত্রী সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন সরকারের ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ তথা স্মার্ট সিটিজেন গড়ে তোলার ওপর। এর জন্য সবিশেষ জোর দেওয়া হবে কর্মমুখী শিক্ষার ব্যাপক সম্প্রসারণসহ কর্মসংস্থানের ওপর। শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, দেশে ও বিদেশে কর্মসংস্থান সংশি¬ষ্ট যত দক্ষতা আছে, সেসব নিয়ে আসা হবে নতুন কারিকুলামে। যাতে শিক্ষার্থীরা কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে শিক্ষাগ্রহণসহ ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারে।
এর জন্য প্রয়োজনে পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠ্যক্রম ঢেলে সাজানো হতে পারে। উলে¬খ্য, সরকার ইতোপূর্বে দেশের সব বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণি থেকে সিলেবাসে কারিগরি শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত ও বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করেছে।
তবে দেশে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার অবস্থা বেহাল। সরকারি—বেসরকারি মিলিয়ে সারাদেশে মোট কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাত হাজারের বেশি। পরিতাপের বিষয় হলো, অধিকাংশেরই প্রায় চাল—চুলো নেই, নামেই কারিগরি শিক্ষা!
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কথা বাদ দিলেও অধিকাংশ সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নেই। একই অবস্থা অন্যান্য পলিটেকনিকেও। প্রতিবছর বিপুল শিক্ষার্থী এসএসসি ও এইচএসসিতে জিপিএ—৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য কাক্সিক্ষত বিশ্ববিদ্যালয়সহ বুয়েট, মেডিক্যালে ভর্তির সুযোগ পায় না।
অথচ পলিটেকনিক ডিপে¬ামা শিক্ষার মান উন্নত ও মানসম্মত হলে শিক্ষার্থীরা এখানে স্বচ্ছন্দে ভর্তি হতে পারে। বৈশ্বিক শ্রমবাজার সংকুচিত হওয়ার পাশাপাশি প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে দেশেই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিষয়টি আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে।
তবে এর জন্য অত্যাবশ্যক কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার ওপর সবিশেষ গুরুত্বারোপ করা। নতুন শিক্ষামন্ত্রীর অধীনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এদিকে জরুরি দৃষ্টি তথা বাজেট বরাদ্দ দেবে বলেই প্রত্যাশা।