নিজস্ব প্রতিবেদক: হরিজনদের টানা ৪র্থ দিনের কর্মবিরতি আমলে না নিয়ে ভাড়া শ্রমিক দিয়ে শহরে জমা ময়লার স্তূপ সরাতে শুরু করেছে পৌরসভা। এদিকে আগামীকাল শুক্রবার থেকে কাজে যোগ দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে হরিজনা। বৃহস্পতিবার রাতে তারা এ ঘোষণা দিয়েছে। হরিজন নেতা হিরণ লাল সরকার জানিয়েছেন, জেলা প্রশাসকের কাছে সমস্যা সমাধানের আশ্বাস পেয়ে পেয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তবে তাদের দাবিকৃত বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের পরিবর্তে বৃহস্পতিবার বাকি দুটি হরিজন পল্লীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।
যশোর শহরের ৩টি হরিজন পল্লীর বিদ্যুৎ বিল বরাবরই পৌরকতৃর্পক্ষের আওতায় ছিল। সম্প্রতি ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডে (ওজোপাডিকো) যশোর বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ ৩ পল্লীর বকেয়া প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা পরিশোধের জন্য তাগিদ দেয়। এ সময় হরিজনরা জানায়, তাদের বিদ্যুৎবিল কখনো দেয়া লাগেনি। এখনো দেবে না। তবে যশোর পৌরকর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয় হরিজন পল্লীর বকেয়া বিল তারা পরিশোধ করবে না। হরিজনদের বিল তাদেরকেই দিতে হবে।
<<আরও পড়তে পারেন>> ময়লার ভাগাড় যশোর শহর
এনিয়ে গত ২৯ জানুয়ারি বিদ্যুৎ বিভাগের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন কয়েকটি টিম শহরের তিনটি হরিজন পল¬ীতে প্রিপেইড মিটার লাগানোর চেষ্টা করে। হরিজনরা বিদ্যুৎ বিভাগের কাজে বাঁধা দেয় এবং তারা রাস্তায় নামে। পূর্বের মত বিদ্যুৎ ব্যবহারের দাবি জানায়। এরই মধ্যে ৪ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রেল স্টেশন হরিজন পল¬ীর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয় বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। ওই দিনই আন্দোলনে নেমে হরিজনরা। ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্মবিরতি পালন করছে তারা। হরিজনরা কাজ না কারায় শহরে ময়লার স্তূপ জমা হয়।
তাদের আন্দোলনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে পৌরসভা। পৌরসভার পক্ষ থেকে বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে স্পষ্ট করা হয়েছে, এবার তারা হরিজনদের কোন ছাড় দেবে না। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে ভাড়া করা মজুর দিয়ে ময়লা পরিস্কার শুরু করেছে কতৃর্পক্ষ। পৌরসভার দাবি ৩,৪ ও ৫ নাম্বার ওয়ার্ডের ময়লা সরানো হয়েছে। একদিনের মধ্যে বাকি ময়লা পরিস্কার হবে।
এদিকে হরিজনরা পৌরকতৃর্পক্ষের মন গলাতে ব্যর্থ হয়ে আজ জেলাপ্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে। এ সময় জেলা প্রশাসক তাদের কাজে যোগদানের আহবান জানান। সাথে সাথে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব নেন। যশোর পৌরসভা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হিরণ লাল সরকার বলেন, ‘আমরা আজ (বৃহস্পতিবার) জেলা প্রশাসকের কাছে আমাদের দাবি নিয়ে স্মারকলিপি দিয়েছি। জেলা প্রশাসক আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। রাতে সবার সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, জেলা প্রশাসকের প্রতি সম্মান জানিয়ে আমরা আগামী দুদিন কাজ চালিয়ে যাব।
এদিকে, শহরের ময়লা পুরোপুরি অপসারিত না হওয়ায় দুর্ভোগে রয়েছেন পৌরবাসি। শহরের দড়াটানা এলাকায় কথা হয় পথচারী ইকরামুল হোসেনর সাথে। তিনি বলেন, ‘আজ ৪ দিন ধরে শহরের সব এলাকায় ময়লার স্তুপ। পরিবেশ দূষিত হচ্ছে ও রাস্তার সর্বস্তরে ছাড়িয়ে যাচ্ছে।’
বেসরকারি চাকুরীজীবী সাজ্জাদুল আলম বলেন, রাস্তায় ময়লা পড়ে আছে। গরু ও কুকুরে ময়লা নিয়ে টানাটানি করছে, রাস্তায় ময়লা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।
স্কুল শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, গত চারদিন ময়লা এক জায়গায় থাকার কারণে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। রাস্তায় চলাফেরার কায়দা নেই।
এ বিষয়ে যশোর পৌরসভার প্যানেল মেয়র মোকছিমুল বারী অপু বলেন, হরিজন সম্প্রদায়ের যারা পরিচ্ছন্নতার কাজ করে তাদের কোন বেতন বাড়ানো হবে না, এখন থেকে বিদ্যুৎ বিল তাদের দিতে হবে, এ শর্ত মেনে যদি কাজে যোগ দেয় তাহলে পৌরকতৃর্পক্ষ বকেয়া বকেয়া বিল পরিশোধ করবে।