নিজস্ব প্রতিবেদক : জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা, নোবেল বিজয়ী ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩ তম জন্মদিন আজ। ২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দের (৭ মে ১৮৬১ খিষ্টাব্দ) এ দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন বাংলা সাহিত্যের অনন্য এ কবি। যশোরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ নানা কর্মসূচিতে কবিগুরম্ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়šত্মী উদযাপন করবে।
বিশ্বসাহিত্যের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রতিভাদের একজন হচ্ছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে যার অবদান অসামান্য। তার হাত ধরেই বাংলা সাহিত্য পায় নতুন রূপ। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও মননশীলতা দিয়ে বিশ্ব অঙ্গনে বিরল সম্মান আর্জন করেন তিনি।
বাল্যকালে প্রথাগত বিদ্যালয়-শিক্ষা তিনি গ্রহণ করেননি; গৃহশিক্ষক রেখে বাড়িতেই তার শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা-এ তার ‘অভিলাষ’ কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তার প্রথম প্রকাশিত রচনা।
১৮৭৮ সালে মাত্র সতেরো বছর বয়সে রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ইংল্যান্ডে যান। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তার বিবাহ হয়। ১৮৯০ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ পূর্ববঙ্গের শিলাইদহের জমিদারি এস্টেটে বসবাস শুরু করেন। ১৯০১ সালে তিনি পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন এবং সেখানেই পাকাপাকিভাবে বসবাস শুরু করেন। ১৯০২ সালে তার পত্নীবিয়োগ হয়।
১৯০৫ সালে তিনি বঙ্গভঙ্গ-বিরোধী আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ সরকার তাকে নাইট উপাধিতে ভূষিত করে। কিন্তু ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে তিনি সেই উপাধি ত্যাগ করেন।
১৯২১ সালে গ্রামোন্নয়নের জন্য তিনি শ্রীনিকেতন নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৩ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠিত হয়। দীর্ঘজীবনে তিনি বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেন এবং সমগ্র বিশ্বে বিশ্বভ্রাতৃত্বের বাণী প্রচার করেন। ১৯৪১ সালে দীর্ঘ রোগভোগের পর কলকাতার পৈত্রিক বাসভবনেই তার মৃত্যু হয়।
সামাজিক ভেদাভেদ, অস্পৃশ্যতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধেও তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন- রবীন্দ্রনাথের দর্শনচেতনায় ঈশ্বরের মূল হিসেবে মানব সংসারকেই নির্দিষ্ট করা হয়েছে; রবীন্দ্রনাথ দেববিগ্রহের পরিবর্তে কর্মী অর্থাৎ মানুষ ঈশ্বরের পূজার কথা বলেছিলেন। সংগীত ও নৃত্যকে তিনি শিক্ষার অপরিহার্য অঙ্গ মনে করতেন।
রবীন্দ্রনাথের গান তার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কীর্তি। তার রচিত ‘আমার সোনার বাংলা’ ও ‘জনগণমন-অধিনায়ক জয় হে’ গানদুটি যথাক্রমে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের জাতীয় সংগীত। এছাড়া শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীতের কথাও তার গানের অনুবাদ।
এদিকে, যশোরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন আজ নানা কর্মসূচিতে কবিগুরম্ন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬৩তম জন্মজয়šত্মী উদযাপন করবে। জন্মজয়šত্মী উপলক্ষে আজ নানা কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে, রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা, পুরস্কার বিতরণ, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
বুধবার সকাল ১০টায় শিশু একাডেমি প্রাঙ্গণে শিশুদের অংশগ্রহণে কবিতা আবৃত্তি প্রতিযোগিতা এবং বেলা সাড়ে ১২টায় আলোচনা সভা, পুরস্কার বিতরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বিকেল ৫ টা ৩১ মিনিটে টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে পুনশ্চ যশোরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। সংগীতসহ অনুষ্ঠানের ডালিতে থাকবে নৃত্য ও কবিতা আবৃত্তি।
সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে উদীচী যশোর পরিচালিত মুন্সি রইসউদ্দিন সংগীত আকাদেমির আয়োজনে কবিগুরম্নর জন্মজয়šত্মী স্মরণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সংগঠন প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জেলা শিল্প একাডেমি মিলনায়তনে শুরম্ন হবে সুরবিতান সংগীত এাকাডেমী ও সুরধুনী যশোরের আয়োজনে দুই দিনের অনুষ্ঠান।