নিজস্ব প্রতিবেদক : বাঙালি সনাতন ধর্ম বিশ্বাসীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব দীপাবলী ও শ্রীশ্রী শ্যামাপূজা (কালী পূজা) আজ। অশুভ শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তির আনয়নে ভক্তবৃন্দ এ মহাশক্তির বন্দনা করেন। ভক্তদের বিশ্বাস মহাশক্তির বন্দনায় সকল অশুভ শক্তির বিনাশ হয়ে অন্ধকার থেকে আলোর পথ সুগম হয়।
শাস্ত্র মতে, কার্তিক মাসের ভূতচতুর্দশীর পর অমাবশ্যার পূর্ণতিথিতে গভীর রাতে উৎসাহ উদ্দীপনায় ধর্মীয় আচারানুষ্ঠানে সারা দেশের সাথে যশোরেও অনুষ্ঠিত হবে মহাশক্তির বন্দনা। পঞ্জিকা মতে আজ রোববার দুপুর ২টা ৩৫ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে অমাবশ্যা শুরু হবে। অমাবশ্যা থাকবে সোমবার বিকেল ৩টা ২ মিনিট ৫১ সেকেন্ড পর্যন্ত। তবে শাস্ত্রীয়মতে আজ নিশিরাতেই এ পূজা সম্পন্ন হবে।
এদিকে পূজার আগে সন্ধ্যায় আজ পৃথক বর্ণাঢ্য আলোক উৎসবের আয়োজন করেছে জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ ও সনাতন বিদ্যার্থী সংসদ। শহরের লালদিঘির চারিপাড়ে সন্ধ্যায় পূজা উদযাপন পরিষদ এবং সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজ চত্বরে বিকেল সাড়ে ৫ টায় অনুষ্ঠিত হবে আলোক উৎসব।
সরেজমিনে দেখা যায় যশোরে দিপাবলী উৎসব আয়োজনের ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় উৎসবমুখর পরিবেরশ পূজার আয়োজকরা এবার ব্যতিক্রমী সব আয়োজন করেছে। শ্রীশ্রী শ্যামাপূজায় প্রতিমা নির্মাণ শৈলী, বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা সদৃশ অস্থায়ী সুদৃশ্য মণ্ডপ, সুদৃশ্য তোরণ নির্মাণ ও আলোকসজ্জায় এক নতুন মাত্রা এসেছে এবার।
যশোর পৌর এলাকায় এবারও শতাধিক মন্দির ও মণ্ডপে দীপাবলী উৎসব ও শ্রীশ্রী শ্যামাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এদিকে দীপাবলী উৎসব ও শ্যামাপূজা (কালীপূজা) উপলক্ষে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে পুলিশ প্রশাসন কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। এদিকে শ্যামাপূজা উপলক্ষে মন্দির— মণ্ডপে আয়োজন হবে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠামালার।
উল্লেখ্য, পুরাণ মতে কালী দেবী দুর্গারই একটি শক্তি। সংস্কৃত ভাষার ‘কাল’ শব্দ থেকে কালী নামের উৎপত্তি। কালী পূজা হচ্ছে শক্তির পূজা। জগতের সকল অশুভ শক্তিকে পরাজিত করে শুভশক্তির বিজয়ের মধ্যেই রয়েছে কালীপূজার মহাত্ম। কালী দেবী তার ভক্তদের কাছে শ্যামা, আদ্য মা, তারা মা, চামুণ্ডি, ভদ্রকালী, দেবী মহামায়াসহ বিভিন্ন নামে পরিচিত।
কালী পূজার দিন হিন্দু স¤প্রদায় সন্ধ্যায় তাদের বাড়িতে ও শ্মশানে প্রদীপ প্রজ্বালন করে স্বর্গীয় পিতা—মাতা ও আত্মীয়—স্বজনদের স্মরণ করেন। এটিকে বলা হয় দীপাবলী।
দুর্গাপূজার মতো কালীপূজাতেও গৃহে বা মণ্ডপে মৃন্মময়ী প্রতিমা নির্মাণ করে পূজা করা হয়। মন্দিরে বা গৃহে প্রতিষ্ঠিত প্রস্তরময়ী বা ধাতুপ্রতিমাতেও কালীপূজা করা হয়। মধ্যরাত্রে তান্ত্রিক পদ্ধতিতে মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
তবে গৃহস্থ বাড়িতে সাধারণত অতান্ত্রিক ব্রাহ্মণ্যমতে আদ্যাশক্তি কালীর রূপে কালীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়। লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কালী শ্মশানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী। এই কারণে বিভিন্ন অঞ্চলে শ্মশানে মহাধুমধামসহ শ্মশানকালী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে সার্বজনীন ও ব্যক্তি উদ্যোগে বিভিন্ন বাসা—বাড়ি ছাড়াও যশোর শহরে শতাধিক দৃষ্টিনন্দন পূজা মন্দির ও মণ্ডপে এবারও পূজা হচ্ছে। অমাবশ্যা শুরুর আগেই প্রতিটা পূজা মন্দির—মণ্ডপে শ্রীশ্রী শ্যামা বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হবে। বিগ্রহ স্থাপনের পর আনুসাঙ্গিক সকল প্রস্তুতি সম্পন্নের পর রাতেই পূজা অনুষ্ঠিত ও সম্পন্ন হবে। পূজা সম্পন্ন শেষে মঙ্গলবার সকালে ভক্তবৃন্দের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হবে। এদিন একই সাথে অনুষ্ঠিত হবে শ্রীশ্রী অলক্ষ্মীপূজা।