৯ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
বিজয়ের মাস ডিসেম্বর

সমাজের কথা ডেস্ক : ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১, বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে বাঙালি। মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর যৌথ আক্রমণে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় পাকিস্তানি বাহিনীর অনেক ইউনিট। এদিন চট্টগ্রামের কুমিরায় পাকিস্তানি ঘাঁটিতে জোর আক্রমণ চালায় মুক্তিযোদ্ধারা। পাকিস্তানি সৈন্যরা পালিয়ে যায় ফৌজদারহাটের দিকে। সেখানেও আক্রমণ চালায় অমিত তেজ বীর বাঙালি। মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযানে হাটহাজারীতেও পাকিস্তানি সেনারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।

প্রচন্ড যুদ্ধের পর এদিন হানাদার মুক্ত হয় সিলেটের খাদিমনগর। আশপাশের শহরগুলো শত্রুমুক্ত করার পর মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী ঘিরে ফেলে রাজধানী ঢাকাকে। টার্গেট একটাই— হানাদার বাহিনীর সর্বশেষ অবস্থান ঢাকা জয়।
পাকিস্তানি বাহিনীকে আত্মসমর্পণের জন্য ভারতীয় সেনাপ্রধানের ঘোষণার পর ১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে পাকিস্তানি অবস্থানের ওপর বোমা বর্ষণ বন্ধ করে মিত্রবাহিনী। চার দিক থেকে পরাজিত হতে হতে পাকবাহিনী বুঝে ফেলে, এই যুদ্ধে তাদের জন্য আর কোনো সুযোগ অবশিষ্ট নেই।

এদিন দেশের অধিকাংশ রণাঙ্গনে চলছিল মুক্তিকামী জনতার বিজয়োল¬াস। বস্তুত যুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় ঘটে যায়। পরাজয় মেনে নেওয়া এবং বিজয়ের ঘোষণা দেওয়ার আনুষ্ঠানিকতা বাকি থাকে মাত্র।
এদিন অসংখ্য নদীনালা খালবিলসহ নানা প্রাকৃতিক প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত যৌথ বাহিনী চারদিক থেকে ঘেরাও করে ফেলে ঢাকা শহর। অবরুদ্ধ ঢাকা কার্যত অচল হয়ে পড়ে। ইস্টার্ন কমান্ডের প্রধান লে. জে. আমির আবদুল¬াহ খান নিয়াজি মার্কিন দূতাবাসের মাধ্যমে ভারতের কাছে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব পাঠান। কিন্তু ভারত তা প্রত্যখ্যান করে বিনা শর্তে আত্মসমর্পণের দাবি জানায়।

ভারতীয় সেনাপ্রধান জেনারেল মানেকশ ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টার মধ্যে আত্মসমর্পণের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে জরুরি বার্তা পাঠান জেনারেল নিয়াজির কাছে। বার্তায় তিনি বলেন, আত্মসমর্পণের প্রস্তুতির জন্য ১৫ ডিসেম্বর বিকেল ৫টা থেকে ১৬ ডিসেম্বর ৯টা পর্যন্ত বিমান হামলা বন্ধ রাখা হবে। কিন্তু এর মধ্যে আত্মসমর্পণ না করলে প্রচন্ড বিমান হামলা শুরু করা হবে। নিয়াজির আত্মসমর্পণের খবরে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক বসে।

এদিন জাতিসংঘে উত্থাপিত সবগুলো প্রস্তাব ছিঁড়ে ফেলেন জুলফিকার আলী ভুট্টো। সদলবলে বেরিয়ে যান অধিবেশন থেকে। বেরিয়ে যাওয়ার আগে তিনি বলেন, ‘এটাই বোধ হয় আমার শেষ বক্তৃতা। এখানে আত্মসমর্পণ করতে আসিনি।’ জাতিসংঘকে জালিয়াতি ও ধোঁকাবাজির পীঠস্থান আখ্যায়িত করে ভুট্টো বলেন, ফ্রান্স ও ব্রিটেন স্পষ্টভাবে কোনো পক্ষ না নেওয়ায় পাক—ভারত যুদ্ধবিরতি বিষয়ে কোনো চুক্তি হতে পারল না।

মার্কিন সপ্তম নৌবহরকে মোকাবিলা করবার জন্য এদিন বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সোভিয়েত রণতরীর ২০টি জাহাজ ভারত মহাসাগরে অবস্থান নেয়। এরপর মার্কিন রণতরী সপ্তম নৌবহর যুদ্ধে অংশ নেওয়া থেকে নিজেদের গুটিয়ে ফেলে। এ ঘটনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তানের মনে যুদ্ধে সাহায্য পাওয়ার যেটুকু আশা ছিল, সেটিও শেষ হয়ে যায়। পরাজয়ের শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়েও পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ না করায় মিত্রবাহিনী চূড়ান্ত আঘাতের পরিকল্পনা করে।

১৫ ডিসেম্বর গভীর রাতে পাকিস্তানের তখনকার প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ঢাকায় জেনারেল নিয়াজিকে নির্দেশ দেন, ‘ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণের জন্য যেসব শর্ত দিয়েছেন, যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার জন্য তা মেনে নেওয়া যেতে পারে।’ আত্মসমর্পণের এ নির্দেশ পেয়ে সেনানিবাসে নিজের কক্ষে বসে কান্নায় ভেঙে পড়েন কথিত পরাক্রমশালী পাকিস্তানি জেনারেল নিয়াজি। কিছুটা ধাতস্থ হয়ে রাত ২টার মধ্যে বাংলাদেশের সব জায়গায় অবস্থানরত হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়ে তারবার্তা পাঠান।

এ দিনটি মূলত দখলদার বাহিনীর চূড়ান্ত আত্মসমর্পণের দিন—ক্ষণ নির্ধারণের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হয়। কিছুক্ষণ পরপর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও আকাশবাণী থেকে মানেকশর আত্মসমর্পণের আহ্বান প্রচার করা হয়। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে যৌথবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে উপস্থিত হতে লে. জে. জগজিৎ সিং অরোরা এদিন সস্ত্রীক ঢাকায় এলে তাকে বিমানবন্দরে অভ্যর্থনা জানান পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর ইস্টার্ন কমান্ড প্রধান লে. জে. এ এ কে খান নিয়াজি।

একাত্তরের এই দিনে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দির জাহাঙ্গীর শহিদ হন। গেরিলাদের সঙ্গে অপারেশনে চাঁপাইনবাবগঞ্জ দখলের যুদ্ধে তিনি সরাসরি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। মহানন্দা নদী পেরিয়ে তিনি একের পর এক শত্রু বাংকার দখল করে যখন প্রবল বিপদ উপেক্ষা করে এগুচ্ছিলেন, তখন হঠাৎ মাথায় গুলি লাগে তার। স্বাধীনতার পর বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ উপাধিতে ভূষিত করে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram