সমাজের কথা ডেস্ক : পুরান ঢাকার নিমতলীর পর চুড়িহাট্টা, সিদ্দিকবাজারে ক্যাফে কুইন ভবন থেকে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স ও নিউমার্কেট; সর্বশেষ বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ। রাজধানীতে একের পর এক অগ্নিকান্ডে ঝরে গেছে কত শত প্রাণ। ছাই হয়ে গেছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। কিন্তু যেসব কারণে ঘটছে এসব প্রাণঘাতী ও অর্থবিনাশী কান্ড, সেসব সমস্যার সমাধান হয়নি আজও। আগুনের ঝুঁকি প্রতিরোধে বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) ও অগ্নি আইন (২০০৩) অনুযায়ী ৩০টির বেশি নিয়ম মেনে ভবন নির্মাণ করার কথা। কিন্তু কে এসবের তোয়াক্কা করে!
ফায়ার সার্ভিসের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ঢাকার ভবনগুলোর ৫৫ শতাংশেরও বেশি অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি ভবনও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার উদাসিনতায় প্রায় প্রতিদিনই অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে চলেছে। ফায়ার সার্ভিস, সিটি করপোরেশন, রাজউক, বিস্ফোরক অধিদপ্তর ও বিদ্যুৎ বিভাগের উদাসিনতার কারণে ঘটছে একের পর এক ভয়াবহ ট্র্যাজেডি। অগ্নিনিরাপত্তার দিক থেকে রাজধানীর শপিংমল ও মার্কেট সম্পূর্ণ অনিরাপদ অবস্থায় থাকায় যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে বেইলি রোডের চেয়েও বড় দুর্ঘটনা।
রাজধানীর ডেমরায় সারুলিয়ার টেংড়া রোডে পাশাপাশি অবস্থান ‘ছালেহা শপিং কমপ্লেক্স’ ও ‘মনু মোল্লা শপিং কমপ্লেক্স’। দুটি মার্কেটে দোকানের সংখ্যা সহস্রাধিক। ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের তথ্য বলছেÑ দুটি মার্কেটই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। নিয়ম অনুসারে প্রতিবছরই স্ব—স্ব এলাকার মার্কেট পরিদর্শন করে অগ্নিঝুঁকিসহ সার্বিক বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা রয়েছে স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন কর্মকর্তাদের। নিয়মের ব্যত্যয় পেলে সংশোধনের নোটিশ প্রদানসহ মার্কেট ভবন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আইনানুগ কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণেরও কথা রয়েছে।
উদ্বেগজনক তথ্য হলোÑ ফায়ার সার্ভিসসহ ৫টি সংস্থার সমন্বিত টিম গত ৪ মাস আগে ভবন দুটিতে অভিযান চালালেও এ পর্যন্ত তেমন কোনো নোটিশ পাননি বলে দাবি করছে ভবন দুটির মালিকপক্ষ। উপরন্তু ছালেহা শপিং কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলার পুরো অংশ জুড়েই ‘দি রেডসান’ নামে একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড পার্টি সেন্টার। সেখানে দিন—রাত জ্বলছে বেশ কয়েকটি গ্যাসের চুলা।
ফায়ার সার্ভিসের সর্বশেষ জরিপে উঠে এসেছে, ঢাকাসহ দেশের ৮টি বিভাগে ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫ হাজার ৩৭৬টি বহুতল, শিল্পকারখানা, মার্কেট—শপিংমল, সরকারি ও অন্যান্য ভবন পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। এর মধ্যে অতি অগ্নিঝুঁকিতে থাকা ভবনের সংখ্যা পাওয়া গেছে ৪২৪টি আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ১ হাজার ৬৯৪টি। রাজধানীর ১ হাজার ২০৯টি ভবন পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস অতি অগ্নিঝুঁকির মধ্যে থাকা ১২৭টি ভবনের সন্ধান পেয়েছে আর ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের সংখ্যা ৬০২টি। সন্তোষজনক তালিকায় রয়েছে ৪৮০টি ভবন।