১১ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ভৈরব পাড় বিক্রি হয়ে গেছে!

মনিরুজ্জামান মনির : ভৈরব খননের মাটি দিয়ে বাঁধাপাড় বিক্রি হয়ে গেছে। প্রকাশ্যে পাড় কেটে মাটি নিয়ে বিক্রি করে দিচ্ছে একটি চক্র। নদ খননের বছর পার না হতেই মাত্র ১০০ টাকা ট্রাক চুক্তিতে উজাড় হয়ে যাচ্ছে পাড়। যশোর শহরতলীর নওয়াপাড়া ইউনিয়নের বোলপুর গ্রামের উত্তরপাড়া এলাকার ঈদগাহের পাশে নদের পাড় থেকে মাটি কাটা হচ্ছে বেশকিছু দিন। অথচ স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কিছুই জানে না।

২০১৬ সালে ২৭২ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। 'ভৈরব রিভার বেসিন এলাকার জলাবদ্ধতা দূরীকরণ ও টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৯২ কিলোমিটার নদ খনন করা হয়। খনন প্রকল্পের মেয়াদ ২০২০ সালের ২০ জুন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তিন দফায় সময় বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০২২ সালের ২২ জুন ঘোষণা দিয়ে খননকাজ শেষ করে পাউবো। খনন চলাকালেই শুরু হয় মাটি বিক্রির কারবার। ওই কারবারীরা বর্তমানে পাড় কেটে বিক্রি শুরু করেছে।

৭ ফেব্রুয়ারি বুধবার বোলপুর গ্রামে যেয়ে দেখা যায় দুটি স্কেবেটর দিয়ে ভৈরব নদের পাড় কাটা হচ্ছে। পাশে মাটি নেয়ার জন্য অপেক্ষা করছে ৫ থেকে ৭ টি ট্রাক্টর। নদের একটি পাড় শেষ হয়ে গেছে। পাড় ও পাশের একটি পুকুর প্রায় একাকার হয়ে গেছে। মাটিবাহী ট্রাক্টর চলাচলের কারণে এলজিইডির কার্পেটিং রাস্তায় বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। মানুষের চলাচলেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

কথা হয় মহিতুল ইসলাম নামের একব্যক্তির সাথে। তিনি নিজেকে মাটি ব্যবসায়ীর হিসাবরক্ষক পরিচয় দেন। তিনি জানান, ‘আমরা মাটি কাটার চুক্তি নিয়েছি। যিনি চুক্তি করেছেন তাকে প্রতি ট্রাকের জন্য ১শ টাকা দেয়া লাগবে। আমরা গাড়ি বিক্রি করছি ১২শ থেকে ১৩শ টাকা। এ মাটি শহরের বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি হচ্ছে।’

কার সাথে তাদের চুক্তি হয়েছে এ বিষয়ে মহিতুল বলেন ‘তার নাম মনে নেই’। বোলপুর গ্রামের নাদিরা বেগম জানান, যেখানে মাটি কাটছে সেখানে আগেও পুকুর ছিল। নদ খননের সময় এ পুকুর ভরাট করে দেয়। এখানে যে গাছগাছালি ছিলো সবই মাটি কাটা গাড়ি দিয়ে ভেঙে দেয়।

বোলপুর গ্রামের বসির উদ্দিন জানান, চার বছর আগে এ নদ খনন করেছে। কিন্তু নদ এখন খাল হয়ে গেছে। নদ আগে খুব চওড়া ছিল। যারা মাটি কাটছে তারা নিজেদের জায়গা থেকে কাটছে বলে, আমরা আসলে বিষয়টা খুব বেশি জানি না। কিন্তু নদে কাটার সব মাটিই প্রায় বিক্রি হয়ে গেছে।

বোলপুর গ্রামের খিলাফত বিশ্বাস জানান, ‘নদে আগে মাছ মেরে খেতাম। এখন তাও বন্ধ হয়ে গেছে। জেলেরা তাই মাছ পায় না আর আমরা। মাটি কাটার সময় সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য নদের পাশ দিয়ে উঁচু করে রাস্তা তৈরি করে। আর সেটার মাটিও বিক্রি হয়ে গেছে। নদে কাটার সময় পাড়ের চিহ্ন দিয়ে যায়। সেই পাড়ের মাটি বিক্রি করে এখন পুকুর তৈরি করেছে। পশ্চিমপাড়ার একজন লোক এ মাটি বিক্রি করে পুকুর করেছে তবে তার নাম বলতে পারবো না। আমার নিজেরও নদের পাড়ে জমি আছে। তবে আমি মাটি বিক্রি করে নদের ভিতর দিয়ে পুকুর করার মধ্যে নেই। আমি জানি অভিযোগ গেলে সবই মাটি কাটা গাড়ি দিয়ে ভরাট করে দেবে।’

নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আব্দুস ছালাম জানান, মাটি কাটার বিষয়ে আমার নজরে আসেনি। যদি নদের মাটি কেটে অপরাধ করে থাকে তাহলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। তবে আমি এ বিষয়ে জানতাম না। আমার নিকট কোনো অভিযোগও দেয়নি।

নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির তুহিন বলেন, ‘এ মাটি কাটা ট্রাকের জন্য এলাকার রাস্তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমি কয়েকবার গাড়ি আটকে দিয়েছি। উপজেলাতেও এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কিন্তু বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। সবাই নিজেদের পাওয়ার দেখিয়ে চলে।’

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পলাশ কুমার ব্যানাজীর্ বলেন, সরকারি মাটি কেটে বিক্রি করা বা নদীর পাড় কাটা অবৈধ। আমাদের নিকট কোনো অভিযোগ ছিলো না। এখন যেহেতু জানতে পারছি এখনি মাটি যারা কাটাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram