২রা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
স্মার্ট ভিলেজ হরিনাকুন্ডর হিজলী গ্রাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, কালীগঞ্জ: ঝিনাইদহ জেলার হরিনাকুন্ডু উপজেলার কাপাশহাটিয়া ইউনিয়নের বাওড় পাড়ের হিজলী গ্রাম। গ্রামের প্রবেশদ্বারে ‘স্বাগতম, স্মার্ট ভিলেজ হিজলী’ লেখা একটি বোর্ড লাগানো হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসনের লাগানো বোর্ডে বলা হয়েছে, এই গ্রাম বাল্য বিবাহমুক্ত, অপরাধমুক্ত, আত্মহত্যামুক্ত, স্বনির্ভর, ডিজিটাল এবং পরিবেশ বান্ধব।

তবে যে কারণে এটিকে স্মার্ট ভিলেজ হিসেবে প্রশাসন ঘোষণা করেছে তা বাস্তবায়িত হলে এত দিনের অজ্ঞান অন্ধকার থেকে পাল্টে যাবে গ্রামটি, তৈরি হবে মডেল ও অনুকরণীয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সে কাজটি করছে সবাই মিলে।


জানাগেছে, এক সময় এটি ছিল একটি চরমপন্থীদের অধিক্ষেত্র। সেময় এলাকায় বসবাসরত মানুষের সাথে উন্নয়নের ধারার সম্পৃক্ততা ছিল না বললেই চলে।

বর্তমান সরকারের ব্যাপক অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের ছোঁয়ায় এই ভীতি, কুসংস্কার এবং অন্ধকারাচ্ছন্ন জনপদ আলোর মুখ দেখলেও এখানকার মানুষ এখনো অপরাধপ্রবণ, শিক্ষাগ্রহণে অনাগ্রহী এবং প্রচলিত কৃষি নির্ভর সমাজ ব্যবস্থার যাপিত জীবনে অভ্যস্ত।

আত্মহত্যার প্রবণতা, মাদকাসক্তি, স্মার্ট ফোনের যথেচ্ছাচার অপপ্রয়োগসহ সুদে কারবারীর পাতা মরণ ফাঁদে আটকা ছিল।


৩৩৪টি পরিবার রয়েছে হিজলী গ্রামে। যেখানে ৪৯৩ জন পুরুষ ও ৫১৯ জন মহিলার বসবাস। এই গ্রামের ২৩৯জন পুরুষ এবং ২৬৮জন মহিলা লিখতে পড়তে পারেন। যে গ্রামের মাত্র ২জন মহিলা ও ২জন পুরুষ চাকরি করেন। কৃষি কাজই গ্রামের মানুষের মূল পেশা। সব মিলিয়ে বলতে গেলে পিছিয়ে পড়া একটি গ্রাম হিজলী।

হিজলী গ্রামটিকে স্মার্ট ভিলেজে বা মডেল করার উদ্দেশ্য প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগকে বাস্তবায়নের জন্যে একটি প্রটোকল তৈরি করা যা অনুসরণ করে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির ভাল থাকা নিশ্চিত করা যায়।

এই গ্রামটিতে ক্ষুদ্র কুটির ও হস্তশিল্পের কাজের ক্ষেত্র তৈরি করে গ্রামবাসীর বিশেষ করে নারীদের দক্ষতা বাড়ানো এবং অফলাইন অনলাইন উভয়ক্ষেত্রেই বাজার ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্তকরণ করা।

ইন্টারনেট সংযোগ শক্তিশালীকরণের মাধ্যমে কানেক্টিভিটি বৃদ্ধিকরণ, চাষযোগ্য জমি বিশেষ করে বাড়ির আঙিনার অনাবাদি জমিসহ শতভাগ জমিকে চাষের আওতায় এনে দেশের উৎপাদনশীলতাকে ত্বরান্বিতকরণ করা।

বাল্য বিবাহ বন্ধ করার মাধ্যমে মাতৃস্বাস্থ্যের কল্যাণ এবং সুস্থ-সবল ভবিষ্যত প্রজন্ম নিশ্চিতকরণ। কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা বিশেষ করে যুবক শ্রেণির কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।

ঝরে পড়া ,অটিষ্টিক এবং এতিম শিশুসহ সকল শিশুকে শিক্ষার মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করা। সন্ত্রাস, নেশা এবং মোবাইল আসক্তি থেকে কিশোর কিশোরীদের দূরে রাখা।

ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে সরকারি অফিসগুলোকে সেবাগ্রহীতাদের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া এবং নবায়নযোগ্য শক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে টেকসই পরিবেশ নিশ্চিতকরণ করাই স্মার্ট ভিলেজ ধারণা। সে ধারণাকে বাস্তবায়ন করার জন্যে প্রশাসন এই গ্রামটিকে স্মার্ট ভিলেজ হিসেবে বেছে নিয়েছে।


স্মার্ট ভিলেজের কারণে এই গ্রামে এখন ৩টি বাড়িতে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। জাইকা প্রকল্পের সহায়তায় ৫টি সোলার শক্তির স্ট্রিট লাট স্থাপন, গ্রামের নামে ফেসবুক গ্রুপখোলা হয়েছে, গ্রামের ৭০ শতক জমিতে পারিবারিক পুষ্টির বাগান স্থাপন করা হয়েছে।

২০টি বাড়িতে রান্নাঘরের আবর্জনা দিয়ে জৈব সার তৈরি করা হচ্ছে। মৃদু প্রতিবন্ধীদের মধ্যে থেকে ৩ জনকে মাশরুম চাষের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। গ্রামের শিক্ষিত যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্যে ৯ জনকে আউটসোর্সিং কাজের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।


স্মার্ট ভিলেজ হিজলীতে ইন্টারনেট সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। গর্ভবতী মায়েদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে এবং তাদের কাউন্সিলিং করাসহ নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। গ্রামের ২০২টি টিউবওয়েল আর্সেনিক পরীক্ষা করা হয়েছে।

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মাধ্যমে হিজলী গ্রামে স্মার্ট যুব ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে যাতে গ্রামের যুব সমাজকে মোবালই ফোনে আসক্তি কমানো যায়।

উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাফিজ হাসান জানান, হিজলী গ্রামকে স্মার্ট ভিলেজ করতে গ্রামের প্রায় ৪৫০টি উঠানের অনাবাদী জমির অর্ধেক অংশে পারিবারিক পুষ্টি বাগান স্থাপন করা হয়েছে। অবশিষ্ট সকল জমিও আবাদের আওতায় আসবে এবং বিষমুক্ত সবজি চাষাবাদ করা হবে।

স্মার্ট ভিলেজ ঘোষণার পর এই গ্রামে একটাও বাল্য বিবাহ হয়নি। সপ্তাহে একদিন হিজলী গ্রামের বৈঠকখানায় ইউডিসি উদ্যাক্তা বৈঠকখানা অ্যাপস ব্যবহার করে অপর প্রান্তে থাকা উপজেলার সকল দপ্তরসমূহের সাথে ভার্চুয়ালি যুক্ত করা হচ্ছে।

হিজলী নামের একটি ফেসবুজ গ্রুপে গ্রামবাসী এবং উপজেলার সকল অফিসারকে সংযুক্ত করা হয়েছে। যেখানে গ্রামবাসীদের পক্ষে যে কেউ কোনো সমস্যা, অভিযোগ বা প্রস্তাবনা পেশ করেন তা যাচাইবাছাই পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মুন্সি ফিরোজা জানান, স্মার্ট ভিলেজের সুফল ইতিমধ্যে পেতে শুরু করেছে। এই উদ্যোগের আওতায় অর্ধশতাধিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

হিজলী গ্রামের নারীদেরকে উপার্জনক্ষম করে গড়ে তুলতে ইতিমধ্যে আয়েশা আবেদ ফাউন্ডেশন, স্থানীয় নারী উদ্যোক্তা লিয়া পারভীন এবং নাসরিনের সহযোগিতায় গড়ে তোলা হয়েছে একটি সাবসেন্টার। যেখানে বর্তমান৪০জন নারীর কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে।

হরিনাকুন্ডু উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুস্মিতা সাহা জানান, প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ ঘোষণার নিয়ে স্মার্ট ভিলেজ তৈরিতে কাজ করছি।

একটি গ্রামকে স্বনির্ভর করা, গ্রামকে সবুজয়ান করা, সন্ত্রাসমুক্ত, বেকারমুক্ত করাই এর লক্ষ্য। ইতিমধ্যে গ্রাম সার্ভে করা হয়েছে, সমস্যাগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা, নারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। যুবক ও নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সরকারের সকল দপ্তর এক সাথে এই গ্রামটিকে মডেল করার জন্যে কাজ করছে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram