২২শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৮ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
রেকর্ড ভাঙ্গা তাপ প্রবাহ যশোরে
রেকর্ড ভাঙ্গা তাপ প্রবাহ যশোরে

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে যশোরসহ সারাদেশে যে তাপপ্রবাহ শুরম্ন হয়েছিল, মাসের শেষ দিনটিতে এসে মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল তা বিগত দিনের সব রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড গড়েছে। এর আগে দীর্ঘ একমাস ধরে তাপ প্রবাহ দেখেনি কেউ। তাপমাত্রার এই উচ্চ প্রবাহ বিগত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। তাছাড়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রার ক্ষেত্রেও গত ৫২ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ হয়েছে।

গতকাল যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকরে চেয়ে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এই তাপমাত্রা দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। একই সময়ে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে, ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল, যা বাংলাদেশের নথিভুক্ত ইতিহাসের সর্বোচ্চ। এদিকে, দীর্ঘ এ তাপ প্রবাহ, উচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড, মরম্নময় আবহাওয়া, দীর্ঘদিন বৃষ্টিহীনতা যশোরসহ এ অঞ্চলের মানুষকে নতুন সমস্যার মুখে দাঁড় করিয়েছে। এ অবস্থাকে শরীর ও ফসল, প্রাণীকে নতুনভাবে ঝুঁকিতে ফেলছে।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যে রয়েছে, ২০১৪ সালের ২১ মে চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা এত দিন ছিল ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। মঙ্গলবার সেই রেকর্ডকে ভেঙে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড হলো যশোরে। অন্যদিকে চুয়াডাঙ্গায় পাওয়া ৪৩ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এখন দেশের ইতিহাসের তৃতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তরা গতকাল বিকেলে গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এদিন ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল দক্ষিণের জেলা খুলনায় তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি আর সাতক্ষীরায় ছিল ৪২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর উত্তরের জেলা পাবনার তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় এ মৌসুমে গত ২০ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠেছিল তাপমাত্রা। আর গত বছরের ১৬ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগে ১৯৬৫ সালে এপ্রিল মাসে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। আর ১৯৬০ সালে ঢাকার তাপমাত্রার রেকর্ড রয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ফলে উচ্চ তাপ্রপবাহ শুধু যে যশোরে তা নয়, সব জেলায় এর প্রভাব রয়েছে।

 

 এদিকে, এপ্রিলের প্রথম দিন থেকেই দেশে চলছে উচ্চ তাপপ্রবাহ। এই মাসের পুরোটা সময়েই টানা এই তাপপ্রবাহ বজায় রয়েছে। এর আগে কখনোই এপ্রিলের পুরোটা সময় তাপপ্রবাহ দেখেনি বাংলাদেশ। তাপপ্রবাহের এই অবস্থা বিগত ৭৬ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গেছে বলে আবহাওয়া অফিসের দাবি। গত বছর (২০২৩) একটানা ১৬ দিন তাপপ্রবাহ হয়েছিল দেশে। মঙ্গলবারও তাপপ্রবাহ বইছে দেশের বিভিন্ন প্রাšেত্ম। ফলে টানা ৩০ দিন তাপপ্রবাহ দেখলো বাংলাদেশ। আবহাওয়াবিদদের মতে, এবারের এপ্রিল মাসটি ছিল দেশের ইতিহাসে অন্যতম উষ্ণ মাস। এপ্রিলের এ সময়ে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা থাকে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু মাসজুড়েই সড়ে সারাদেশে তাপমাত্রা ছিল ৩৭ ডিগ্রির ওপরে। দেশের সাথে যশোরেও টানা প্রায় এক মাস ধরে অব্যাহত রয়েছে মাঝারি, তীব্র ও অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।

 * স্বাধীনতার পর যশোরে রেকর্ড সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩.৮ডিগ্রি সে.
 * ৫২ বছরের মধ্যে দেশের সর্বোচ্চ
 *  টানা ৩০ দিনের তাপপ্রবাহে ৭৬ বছরের রেকর্ড ভঙ্গ
 * কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদের উপর বিরূপ প্রভাব

আবহাওয়াবিদরা এখনো আরও ২-৩দিন তাপমাত্রার এমন অবস্থার আশঙ্কা করছেন। তাদের মতে, এই অবস্থায় চলতে থাকলে আগামী ২/১ দিনের মধ্যে এই রেকর্ডও অতিক্রম হয়ে যেতে পারে। তবে বৃষ্টির ফলে মে মাসের ২-৭ তারিখের ভেতরে তাপমাত্রা প্রশমিত হয়ে আসবে বলে তারা আশা প্রকাশ করেন। এসময়ে পুরো বাংলাদেশেই বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। ২ মের আগে তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা নেই।

আবহাওয়া অফিসের মতে, মঙ্গলবার যশোরের তাপমাত্রা ৪৩.৮ ডিগ্রি ছিল, এর আগের দিন সোমবার ছিল ৪২.৮ ডিগ্রি। রোববার এই তাপমাত্রা ছিল ৪২.২ ডিগ্রি। এ নিয়ে ২০ এপ্রিল থেকে গতকাল পর্যšত্ম ৫দিন ৪২ ডিগ্রির উপরেই ছিল যশোরের তাাপমাত্রা। তাছাড়া পুরো এপ্রিল মাস উচ্চ তাপপ্রবাহ ছিল যশোরে। সকালের তাপমাত্রা ৩৭/৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস দিয়ে দিন শুরম্ন হয়। সারা দিন জ্বলšত্ম সূর্য আগুন ছিটায়। ফলে বলা যায় এখন, যশোরে রাত পোহায়ে সকাল হয় না, সরাসরি দুপুরের দেখা পায় মানুষ, এমনই অভিব্যক্তি স্থানীয় অনেকের। তাদের মতে ঘুম থেকে উঠেই সূর্যের কড়া রোদ আর অসহনীয় গরম, যেমনটি গরমকালের দুপুরে হয়। সকালের শীতলতা অনেকদিনই খুঁজে পাচ্ছে না তারা।

দীর্ঘ তাপ্রপ্রবাহে বিপর্য¯ত্ম এ জেলার মানুষ। তীব্র গরমের কারণে বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়গুলো। এদিকে, মানুষ তাদের কর্ম রম্নটিনের পরিবর্তন এনেছেন আবহাওয়ার এ পরিস্থিতিতে। সকালের দিকে শহরের রা¯ত্মায় লোক চলাচল কম থাকছে। বাড়ছে বিকেলের পর। দাফতরিক কাজ ছাড়া মানুষ তাদের প্রাত্যহিক অন্যান্য কাজ বিকেলেই সারছেন। যারা বাইরে বেরম্নচ্ছেন তারা অধিকাংশই ছাতা সাথে নিচ্ছেন, পানির বোতল নিচ্ছেন। সহজেই হাফিয়ে উঠছেন সকলে। সুযোগ পেলেই ছায়া কোনো স্থান খুঁজে নিচ্ছেন মানুষ।
তাপরপরও থেমে নেই মানুষের জীবন ও জীবিকার লড়াই। মাঠের ধান যেমন কাটতে হবে তেমনি সংসারের চাকা ঘোরাতে রিকসা, ভ্যাান, ইজিবাইক, ফেরি মালের সামগ্রী নিয়ে বের হচ্ছে নি¤্ন আয়ের মানুষ। শ্রমজীবীদের সমস্যা আরও বেশি তাই রোদ গরম উপেড়্গা করেই তাদেরকে মহাজনের কাজ শেষ করতে হচ্ছে। ইতোমধ্যে গত রোববার যশোরে গরমজণিত কারণে একজন শিড়্গকের মৃত্যু হয়েছে। সত্তোরোর্ধ কয়েকজন জানান, তাদের জীবনে এত দীর্ঘ দিন একটানা গরম, খরা ও শুষ্কতা দেখেননি-দেখেননি এমন ঝাঁঝালো বৈশাখ।

এদিকে, দীর্ঘ তাপপ্রবাহ, উচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড, বৃষ্টিহীনতা ও মরম্নময় আবহাওয়ায় মানুষ, প্রাণীকুল ও কৃষিফসলের উপর ব্যাপক প্রভাব পড়ছে। অনভ্য¯ত্ম এই আহবাহওয় মেনে নিতে বেগ পেতে হচ্ছে। শিড়্গা প্রশাসন যেমন স্কুল, কলেজ বন্ধ করছে, ধানকাটা শ্রমিকরা ভোরে এবং সন্ধ্যায় ধানকাটা, বাঁধা, মাড়াই করছেন।

অতিরিক্ত গরমে পোল্টি শিল্পও ঝুঁকির মুখে পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাণিসম্পদ বিভাগ ও পোল্ট্রি ব্যবসায়ীরা। খরা ও তাপে আম, লিচুর মুকুল ঝরে যাচ্ছে বলে কৃষক ও কৃষি বিভাগের দাবি। তাপের কারণে বৃদ্ধিও কম হবে বলে কৃষকের আশঙ্কা। তাছাড়া সবজির বিকাশেও ড়্গতি হচ্ছে। চাষিদের যেমন কষ্ট হচ্ছে তেমনি শুষ্কতায় সবজির বৃদ্ধিও ড়্গতি হচ্ছে। যশোরে মাছ চাষ শিল।প সমৃদ্ধ। বৃষ্টি না হওয়ায়, গরমে ও অতিরিক্ত তাপে মাছের ব্রিডিং, রেণু উৎপাদন ও মাছ চাষ দারম্নণভাবে ড়্গতিগ্রস্থ হচ্ছে বলে চাঁচড়ার মাছচাষিরা জানান।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram