নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজে ছুটি ঘোষণা করে ১৭ দিন মালয়েশিয়া কাটিয়ে আসলেন অধ্যক্ষ ডা. হাফিজুর রহমান। নিজের উচ্চতর ডিগ্রির জন্য তিনি প্রতিষ্ঠানে এই ছুটি ঘোষণা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
তবে শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ছুটি না নিয়ে এবং কলেজের কাউকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব না দিয়েই তিনি মালয়েশিয়া যান বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। এই অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার অধ্যক্ষকে শোকজ করেছেন। শোকজের চিঠি পাওয়ার তিন কর্মদিবসের মধ্যে তাকে জবাব দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে, অধ্যক্ষের ব্যক্তিগত কারণে পুরো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটি থাকাতে ক্ষুব্ধ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে যশোর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের কয়েকজন শিক্ষক জানান, ‘স্যার উচ্চতর ডিগ্রির জন্য বিদেশ যাবেন; এটা ভালো কথা। তবে এর জন্য তো পুরো কলেজ ছুটি দেওয়ার দরকার নেই। কাউকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দায়িত্ব দিয়ে ছুটিতে গেলেন তিনি ভালো করতেন। তারা আরও জানান, ‘সামনে পরীক্ষা ও নতুন ব্যাচের ক্লাস শুরু হবে। এমন সময়ে দীর্ঘদিন ছুটি দেওয়ায় শিক্ষার্থীদের একাডেমির ক্লাস পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত হবে।’
অভিযোগে জানাগেছে, যশোর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. হাফিজুর রহমান মালেশিয়ার লিংকন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার জন্য তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএসসি ব্যাচের পরীক্ষার্থী। পরীক্ষা এবং ক্লাসে যোগদান করার জন্য তিনি পাঁচ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় যান।
তবে তিনি শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে ছুটি না নিয়ে এবং কলেজের কাউকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব না দিয়েই দেশ ত্যাগ করেন। ৮ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি বিধিবহির্ভূতভাবে নোটিশের মাধ্যমে শীতকালীন ছুটি ঘোষণা করেন। ক্লাস ও পরীক্ষার এমন সময়ে হঠাৎ করে কলেজ ছুটি দেওয়ায় একাডেমিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ রয়েছে শিক্ষার্থীদের মনে।
এদিকে, শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে বিনা ছুটিতে বিদেশ গমন এবং কলেজের কাউকে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব না দিয়ে এই ছুটি ঘোষণা করায় কারণ দর্শানোর (শোকজ) নোটিস দিয়েছেন কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। গেল ২১ জানুয়ারি জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষরিত চিঠিতে উলে¬খ করা হয়েছে, ‘গত ৮ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত বিধিবহির্ভূতভাবে নোটিশের মাধ্যমে শীতকালীন ছুটি ঘোষণা করে কলেজের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন।
উক্ত বিধিবহির্ভূত ছুটি ঘোষণা সংক্রান্ত উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনা নেই। এমনকি গভর্নিং বডিও এ বিষয়ে অবগত নয়। বিধিবহির্ভূত শীতকালীন ছুটি ঘোষণা করার বিষয়টি চাকুরি বিধি ও শৃঙ্খলা পরিপন্থী। এমতাবস্থায় এ বিষয়ে কেন আপনার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না পত্র প্রাপ্তির তিন দিনের মধ্যে তার কারণ দর্শনোর জন্য বলা হয়েছে।’
এই বিষয়ে যশোর হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. হাফিজুর রহমান বলেন, উচচতর ডিগ্রির জন্য আমি পাঁচ জানুয়ারি মালয়েশিয়ায় গিয়েছিলাম। এর জন্য আট জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছিলাম। এখন তেমন ক্লাস বা কোন পরীক্ষা নেই। তাই শীতকালীন ছুটি ঘোষণা করেছিলাম। পাঠদান না থাকলেও কলেজের কার্যক্রম চালু ছিলো বলে দাবি করেন তিনি।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘শোকজ করেছিলো। আমি গত ২৮ জানুয়ারি শোকজের চিঠি পেয়েছিলাম। শোকজের জবাব দিয়েছি ২৯ জানুয়ারি। এই ছুটিতে প্রতিষ্ঠানে কোন প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেন তিনি।’
যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খালেদা খাতুন রেখা বলেন, ‘বুধবার জেলা প্রশাসকের হেল্পডেক্সে অধ্যক্ষ তার শোকজের জবাবের চিঠি পাঠিয়েছেন। তবে এই বিষয়ে কিছু বলতে পারবো না বলে জানান তিনি।
এই বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার বলেন, ‘অধ্যক্ষকে শোকজ করা হয়েছে। আমার কাছে এখনো শোকজের জবাবের চিঠি আসেনি। শোকজের জবাব সন্তোষজনক না হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।’