২রা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সন্তানের দায়িত্ব
77 বার পঠিত

সন্তানের দায়—দায়িত্ব কার— মা নাকি বাবার! অথবা উভয়েরই। যুক্তি ও ন্যায়ের বিচারে বলতেই হয় যে, সন্তানের দায়িত্ব মা—বাবা উভয়েরই সমান সমান। এ ক্ষেত্রে তুলাদে—র হেরফের হওয়ার সুযোগ নেই। তবে প্রশ্ন ওঠে অনেক ক্ষেত্রেই— মা অথবা বাবার আর্থিক সক্ষমতা, আয়—ব্যয়, সহায়—সম্পত্তিসহ সামাজিক অবস্থানের বিবেচনায়। স্বীকার করতে হবে যে, পুরুষতান্ত্রিক সমাজে এসবই প্রাধান্য পেয়ে থাকে। সে অবস্থায় নারীর অবস্থান হয়ে পড়ে গৌণ।

যদিও পারিবারিক আইন সংস্কারের পর নারীর অবস্থান ও মর্যাদা বেড়েছে বহুলাংশে। তবু অসুখী দাম্পত্য জীবনে বিবাহ বিচ্ছেদ অনিবার্য হলে উঠে আসে এসব বিষয়। অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠলে বিষয়টি গড়ায় আদালত পর্যন্ত। আদালত সহায়—সম্পত্তিসহ অর্থবিত্তের মীমাংসা করতে পারেন আইনানুগ উপায়ে। তবে সন্তানের ভাগাভাগি ও দায়—দায়িত্ব সম্পর্কে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে পারেন না। বিষয়টি অতি মানবিক এবং স্পর্শকাতরও বটে। কেননা বিষয়—সম্পত্তি ভাগ করা গেলেও সন্তান ভাগ করা যায় না।

তদুপরি নাবালক অথবা অবুঝ সন্তানের ক্ষেত্রে আইনানুগ বিধান থাকলেও সন্তান বড় হলে সে তার বাবা অথবা মায়ের কাছে থাকবে অথবা উভয়ের কাছেই— সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার একান্ত নিজস্ব। তখন সে আর নাবালক নয়, সাবালক। সেক্ষেত্রে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার তার রয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত দিতে আদালত অসহায় বোধ করতে পারেন।

যেমনটি হয়েছে মার্কিন বাবা এবং বাংলাদেশী মায়ের ক্ষেত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক গ্যারিসন লুটেলের সঙ্গে ২০১৮ সালে বিয়ে হয় বাংলাদেশী নাগরিক ফারজানা করিমের। তাদের সংসারে রয়েছে দুই পুত্রসন্তান। দাম্পত্য জীবনে বিচ্ছেদের পর ফারজানা করিম ফিরে আসেন বাংলাদেশে। এ সময় স্বামীর সঙ্গে কোনো রকম যোগাযোগ না থাকায় মার্কিন নাগরিক গ্যারিসন লুটেল সন্তানের খোঁজখবর নিতে আসেন বাংলাদেশে।

তিনি তার দুই পুত্রকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যেতে চান। এজন্য আবেদন করেন উচ্চ আদালতে। সেই রিট আবেদনের শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত বছরের ২৮ নভেম্বর এক আদেশ দেন। আদেশে দুই সন্তানের জিম্মা নিয়ে মার্কিন নাগরিক বাবা গ্যারিসন লুটেল এবং মা বাংলাদেশের নাগরিক ফারজানা করিমের মামলা ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করার জন্য বলা হয়েছে পারিবারিক আদালতকে। একইসঙ্গে এও বলা হয়েছে, মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাবা গ্যারিসন লুটেল তার দুই সন্তানকে কোনো সুবিধাজনক স্থানে দেখতে যেতে পারবেন। সে পর্যন্ত সন্তান থাকবে মায়ের তত্ত্বাবধানে।

পারিবারিক আদালত উভয়ের পক্ষের শুনানি শেষে কি মীমাংসা করে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। উলে¬খ্য, ইতোপূর্বে বাংলাদেশী বাবা এবং জাপানি মায়ের তিন সন্তানের জিম্মা নিয়েও অনুরূপ মামলা হয়েছে উচ্চ আদালতে। ১৩ ফেব্রুয়ারি এক রায়ে দুই কন্যাকে মায়ের কাছে এবং এক কন্যাকে বাবার কাছে রাখার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তবে উভয় পক্ষই রায় না মেনে উচ্চ আদালতে আপিলের কথা বলেছেন। এ ক্ষেত্রে মা ও বাবা উভয় পক্ষের পারস্পরিক সম্মতিতে সমঝোতা প্রতিষ্ঠাই হতে পারে উত্তম সমাধান।

নানা কারণে সমাজে বেড়েছে তালাক বা বিবাহ—বিচ্ছেদ। এর অন্যতম প্রধান কারণ বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক (পরকীয়া) এবং দাম্পত্যজীবন পালনে অক্ষমতা বা স্বামী—স্ত্রীর মধ্যে বনিবনার অভাব। গত ৩১ জানুয়ারি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ চিত্র। বিবাহ—বিচ্ছেদের নেপথ্যে রয়েছে ভরণ—পোষণের ব্যয় বহন করতে অসামর্থ্য অথবা অস্বীকৃতি, পারিবারিক চাপ, শারীরিক নির্যাতন, যৌন অক্ষমতা বা অনীহা ইত্যাদি।

ইদানীং স্মার্ট ফোনের কারণেও বেড়েছে বিচ্ছেদের হার। তারপরেও বলতে হয় যে, বিবাহ—বিচ্ছেদ কারও কাম্য নয়। দাম্পত্য জীবনে যদি বিবাহ—বিচ্ছেদ অনিবার্য হয়ে ওঠে, তা হলে অন্তত সন্তানের অধিকার নিয়ে যেন কোনো জটিলতা না দেখা দেয়, সেজন্য আইনি মীমাংসা প্রত্যাশিত।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram