২রা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ছয়টি সংসদীয় আসনে নৌকার ‘মাঝি’ হতে লড়াইয়ে নেমেছেন ৬৯ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী। আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনে জমা দিয়েছেন তারা।

প্রতিটি আসনে গড়ে ১১টি করে ফরম বিক্রি হয়েছে। এর মধ্যে বর্তমান প্রতিমন্ত্রী, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্যের সঙ্গে সাবেক আমলা, উপজেলা চেয়ারম্যান—মেয়র, বাবা—ছেলেও আছেন।

আবার কখনো উপজেলার রাজনীতি করেননি, এমন অনেকেও আছেন এ তালিকায়। এত বেশি নেতাকমীর্ মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়ায় বিভ্রান্ত ও অবাক হয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় ও তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও।

ফলে বর্তমান এমপিই থাকবেন; না তাকে হটিয়ে নতুন কেউ মনোনয়ন বাগিয়ে আনবেন, সেই আলোচনা এখন গোটা জেলা জুড়ে। কাল রোব্বারের মধ্যে ঘোষণা করা হবে নৌকার কান্ডারীদের নাম।

এদিকে, শেষ মুহূর্তে দলীয় টিকিট নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতারা। সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে ফেসবুকেও নিজ নিজ প্রার্থীর সমর্থকরা তাদের ছবি পোস্ট করে মনোনয়নের দাবিকে জোরালো করছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড বৃহস্পতিবার থেকে দলীয় প্রার্থী বাছাই শুরু করেছে। ওই সভায় বৃহস্পতিবার রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত হওয়ার কথা থাকলেও এদিন শুধু রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত হয়েছে। এদিন রংপুরের ৩৩ ও রাজশাহীর ৩৯টিসহ মোট ৭২ আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়। শুক্রবার খুলনা বিভাগের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার কথা ছিল।

যশোর—১ (শার্শা) : আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত যশোর—১ (শার্শা) আসনটি ২০০১ সালে হাতছাড়া হলেও পরবর্তীতে শেখ আফিল উদ্দিনের হাত ধরে সেটি পুনরায় উদ্ধার হয়। টানা তিনবারের এমপি আফিল উদ্দিনের আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন তারই একসময়ের রাজনৈতিক সহচর জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম লিটন, জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক নবী নওয়াজ মো. মুজিবুদ্দৌলা সরদার কনক, যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য নাজমুল হোসেন ও আওয়ামী লীগনেতা শাহাজাহান আলী গোলদার।

ইতোমধ্যে এই প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন কিনে জমাও দিয়েছেন। আফিলের অনুসারীদের ভাষ্য, শিল্পপতি এই রাজনীতিকের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক অটুট। টানা তিন বারের এই সংসদ সদস্য তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে এবার দলীয় প্রধান তাকে মনোনয়ন দিতে পারেন। অন্যদিকে লিটনের অনুসারীদের ভাষ্য, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা আশরাফুল আলম লিটন রাজনীতির শুরু থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদেরও সঙ্গে তার সম্পর্ক ভালো।

দলটির শীর্ষনেতারা যখনই বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়া আসা করেন তখনই লিটনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ফলে তিনিও আলোচনায় আছেন। এছাড়া মনোনয়ন কেনা বাকী তিন জন মজিবুদ্দৌলা সরদার কনক, নাজমুল হোসেন ও শাহাজাহান আলী গোলদার জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন।

যশোর—২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) ঝিকরগাছা—চৌগাছা উপজেলা নিয়ে যশোর—২ আসন। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন। এই আসনে দ্বাদশ নির্বাচনে দলের ১৯ নেতা প্রার্থী হতে আগ্রহী হয়েছেন। ইতোমধ্যে তারা দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মনোনয়ন সংগ্রহ করে জমাও দিয়েছেন।

বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. নাসিরের দাবি, পাওয়া না পাওয়া নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ থাকতে পারে। তবে নৌকার পক্ষে সবাই এক।

এই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ডা. নাসির ছাড়াও সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, তার ছেলে জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মোস্তফা আশীষ ইসলাম, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম, বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি আব্দুস সালাম, জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মোহাম্মদ আলী রায়হান, এ বি এম আহসানুল হক, চৌগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এসএম হাবিব, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আনোয়ার হোসেন, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতা গিলবার্ট নির্মল বিশ্বাসসহ ১৯ জন।

যশোর—৩ (সদর) : যশোরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আসন যশোর—৩ (সদর)। এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় পুরো জেলার রাজনীতি। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর সদর আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে প্রথমবারের মতো এমপি হন কাজী নাবিল আহমেদ।

এবার এই আসনে নাবিলের মনোনয়ন যুদ্ধে কিছুটা উত্তাপ ছড়াচ্ছেন জেলার সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন। এছাড়াও এই আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রার্থী হয়েছেন ৫ জন। দলীয় মনোনয়ন জমা দিয়েছেন আওয়ামী লীগনেতা মোবাশ্বের হোসেন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, যশোর পৌর সভার সাবেক সভাপতি জহিরুল ইসলাম চাকলাদার রেন্টু, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য দেলোয়ার হোসেন দিপু।

যশোর—৪ (বাঘারপাড়া—অভয়নগর) : অভয়নগর ও বাঘারপাড়া উপজেলা এবং সদরের বসুন্দিয়া ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন যশোর—৪। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য রণজিত রায়। আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের মেয়াদের সংসদ সদস্য তিনি। এবার নির্বাচনে এই আসনে দলের ১৫ নেতা মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।

রণজিতের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন সাবেক হুইপ শেখ আবদুল ওহাব, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ, অভয়নগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এনামুল হক বাবুল, সাধারণ সম্পাদক সরদার অলিয়ার রহমান, সিনিয়র সহসভাপতি শাহ্ ফরিদ জাহাঙ্গীর, জেলা আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল কবির বিপুল ফারাজী, আওয়ামী লীগ নেতা আরশাদ পারভেজ, সোলায়মান হোসেন বিশ্বাস।

এছাড়া নতুন করে যোগ দিয়েছেন যশোর মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক নিকুঞ্জ বিহারী গোলদার ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব (প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়) সন্তোষ অধিকারী।

যশোর—৫ (মণিরামপুর) : যশোরের সবচেয়ে বড় উপজেলা মণিরামপুর। বরাবরই এই আসন আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত। এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য স্থানীয় সরকার পল¬ী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচায্যর্।

এখানে নৌকার মাঝি হতে চেয়েছেন ১৩ জন। প্রতিমন্ত্রী বাদে অন্য ১২ জন হলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাজমা খানম, জেলা কৃষক লীগের সহ সভাপতি ইয়াকুব আলী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আমজাদ হোসেন লাভলু, যুবলীগের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক জয়দেব নন্দী, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচায্যর্, আওয়ামী লীগনেতা কামরুল হাসান বারী, আওয়ামী লীগনেতা সুশান্ত কুমার মন্ডল, নিতাই কুমার বৈরাগী, সাবেক সংসদ সদস্য টিপু সুলতানের ছেলে হুমায়ন সুলতান সাদাব।

যশোর—৬ (কেশবপুর) : যশোর—৬ (কেশবপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। যশোর জেলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এবারও এই আসনের শক্তিশালী প্রার্থী। এই উপজেলার আরও ৯ নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশায় আবেদন করেছেন। তারা হলেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী রফিকুল ইসলাম, সাবেক উপজেলার চেয়ারম্যান এইচ এম আমির হোসেন, উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুর রফিক, এস এম এবাদত সিদ্দিক বিপুল, সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমাত আরা সাদেকের মেয়ে নওরীন সাদেক, আওয়ামী লীগ নেতা হোসাইন মোহাম্মদ ইসলাম, তাপস কুমার দাস ও প্রশান্ত বিশ্বাস ও জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল আজিজ।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপি বলেন, ‘দলের মধ্যে কোনো গ্রুপিং—দ্বন্দ্ব নেই। সবাই এখন ঐক্যবদ্ধ। বড় দল আওয়ামী লীগ; তাই নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা রয়েছে। অনেকেই এমপি হওয়ার মনোনয়ন দাবি করবেন। দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন; সবাই বিভেদ ভুলে নৌকার পক্ষে কাজ করবেন। আমরা সাংগঠনিকভাবে ঐক্যবদ্ধ। আগামী নির্বাচনে যশোরের ৬টি আসন বিজয়ী করে আবারও দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিবো। আর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, আমাদের ৮ উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের শক্ত অবস্থান রয়েছে। ভেদাভেদ থাকলেও নেতাকর্মীরা নৌকার প্রশ্নে সবাই এক।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram