১১ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৮শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
মৃগী রোগীর ক্ষেত্রে করণীয়, বর্জনীয়
36 বার পঠিত

অধ্যাপক ডা. হারাধন দেব নাথ : মৃগী স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতাজনিত রোগ। সুস্থ স্বাভাবিক কোনো ব্যক্তি যদি হঠাৎ করে অস্বাভাবিকভাবে কাঁপুনি বা খিঁচুনির শিকার হন, চোখ—মুখ উল্টিয়ে হাত—পা ছুড়ে কাতরাতে থাকেন, অজ্ঞান হয়ে যান, মুখ দিয়ে ফেনা বা লালা বের হয় কিংবা কোনো শিশুর চোখের পাতা স্থির হয়ে যায়, এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে অথবা মানসিকভাবে সুস্থ কোনো ব্যক্তি যদি হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন, তবে তাকে মৃগী রোগী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খিঁচুনি বা মৃগী রোগের কারণ পাওয়া যায় না। এ ধরনের খিঁচুনিকে প্রাইমারি এপিলেপসি বা কারণবিহীন মৃগী রোগ বলা হয়। শিশুর ক্ষেত্রে মস্তিষ্কে সংক্রমণ হলে অথবা জন্মের সময় মাথায় কোনো আঘাত পেলে, অক্সিজেন পেতে দেরি হলে কিংবা শিশুর ওজন কম হলে বা সময়ের আগে জন্ম নিলে, তাদের কখনো কখনো এপিলেপসি বা মৃগী রোগ হতে দেখা যায়।

আরও কিছু সমস্যা বড়দের ক্ষেত্রে দেখা দেয়। যেমন রক্তে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য নষ্ট হলে, শর্করা কমে গেলে, মাথায় কোনো আঘাত পেলে বা টিউমার হলে, মস্তিষ্কে সংক্রমণ বা স্ট্রোক হলে খিঁচুনি হতে পারে। মৃগীরোগীর ক্ষেত্রে অনিয়মিত ওষুধ সেবনেও খিঁচুনি দেখা দিতে পারে। তবে ৭০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনো কারণই জানা যায় না। কিছুটা বংশগত কারণেও খিঁচুনি হতে পারে।

লক্ষণ : একজন মৃগী রোগীর মধ্যে এক বা একাধিক লক্ষণ পরিলক্ষিত হতে পারে। উল্লেখযোগ্য লক্ষণগুলো হলো হঠাৎ শরীরের কোনো অংশে খিঁচুনি শুরু হওয়া ও পর্যায়ক্রমে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়া, হঠাৎ নমনীয়ভাবে ঢলে পড়া, শরীর শক্ত হয়ে গিয়ে হঠাৎ পড়ে যাওয়া, হঠাৎ জ্ঞান হারানো, ঘন ঘন কাজে অমনোযোগী হয়ে পড়া, ছোট শিশুদের শরীর হঠাৎ ঝাঁকি খাওয়া, হঠাৎ মাথা বা পিঠ কিংবা পুরো শরীর সামনে ঝুঁকে আসা, হাত থেকে হঠাৎ করে কিছু ছিটকে পড়া, হঠাৎ করে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করা এবং হাত—পা ও মুখের অস্বাভাবিক নাড়াচাড়া শুরু হওয়া, হঠাৎ শরীরের কোনো অংশে ভিন্ন ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি।

করণীয় : আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিরাপদ জায়গায় রাখতে হবে। পরিধানের কাপড়—চোপড় ঢিলেঢালা করে দিতে হবে। রোগীর কাছাকাছি আগুন, গরম পানি, ধারালো কিছু থাকলে তাড়াতাড়ি হাতের নাগাল থেকে সরিয়ে নিতে হবে। আরামদায়ক অবস্থায় কাত করে শুইয়ে দিতে হবে, যাতে মুখের সব লালা বাইরে পড়ে যেতে পারে। মুখে এই সময় চামচ, পানি বা কোনো কিছুই দেওয়া যাবে না। এতে দাঁত বা জিহ্বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, শ্বাসকষ্টও শুরু হতে পারে। অনেক সময় আমরা রোগীকে চেপে ধরি, যেন খিঁচুনি না হয়। নাকে জুতা ধরা হয়। এগুলো মোটেও করা যাবে না। রোগীকে যত দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে, ততই মঙ্গল।

চিকিৎসা : বেশির ভাগ ক্ষেত্রে খিঁচুনির কারণ নির্মূল হলেই রোগ ভালো হয়ে যায়। সেই ক্ষেত্রে আবার খিঁচুনি হওয়ার আশঙ্কা নেই বললেই চলে। কিন্তু মৃগীরোগের চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদি। সারা জীবন চিকিৎসা গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। তাই একজন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে থেকে মৃগীরোগের চিকিৎসা করানো উচিত। যথাসময়ে শিশুর চিকিৎসা না হলে তার মেধা ও বুদ্ধিমত্তা কমে যেতে পারে।

লেখক : অধ্যাপক, নিউরো সার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ। চেম্বার : ল্যাবএইড হসপিটাল, ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোন : ০১৭১১৩৫৪১২০

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram