সমাজের কথা ডেস্ক : মাতা—পিতার খিদমত এবং অনুগত হওয়ার সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো এতে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও বেহেশত নসীব হয়। এ তো আখেরাতের পুরস্কার। কিন্তু যারা সাচ্চা অন্তরে মাতা—পিতার খিদমত করে এবং অধিকারের প্রতি খেয়াল রাখে আল্লাহ পাক এ দুনিয়াতেও তাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকেন। বস্তুত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার স্বয়ং নিজের সাথীদেরকে তিন ব্যক্তির চিত্তাকর্ষক কাহিনী বর্ণনা করেছিলেন।
আরও পড়তে পারেন : “মাতা—পিতা বেহেশত এবং মাতা—পিতা দোযখ”
তিনি বলেন, একবার তিন ব্যক্তি কোথাও সফরে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে তাদেরকে মুষলধারে বৃষ্টিতে ঘিরে ধরলো। আশ্রয়ের জন্য তারা এক গুহায় প্রবেশ করে বসে গেলো। আল্লাহর মহিমা! পাহাড় থেকে একটি বড় পাথর ধসে গুহার মুখের উপর এসে পড়লো এবং গুহার মুখ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গেলো। তিন বন্ধু সাংঘাতিকভাবে ঘাবড়ে গেলো। ঘাবড়ানোর কথাও। পাথর সরানো তাদের সাধ্যের বাইরে ছিলো। সেখানে কোনো মানুষও ছিলো না যে, সাহায্যের জন্য ডাক দেয়। নিরাশ হয়ে তারা বসে রইলো এবং ধারণা করলো যে, জীবিত দাফন হয়ে গেছি এবং সেই গুহাই তাদের কবর।
আরও পড়তে পারেন : আল্লাহর পর সবচেয়ে বড় অধিকার কার
তাদের মধ্যে একজন বললো, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হলে চলবে না। এসো আমরা প্রত্যেকেই জীবনের সবচেয়ে ভালো কাজের উদ্ধৃতি দিয়ে আল্লাহর নিকট দোয়া করি। আশা করি, আল্লাহ নিজের রহমতের মাধ্যমে আমাদেরকে এ মুসিবত থেকে মুক্তি দেবেন।
তাদের মধ্যে একজন মুসাফির বলতে শুরু করলো, হে আল্লাহ! আমার মাতা—পিতা বৃদ্ধ ছিলেন এবং আমার ছোট ছোট সন্তান ছিলো। আমি দিনে বকরী চরিয়ে ঘরে ফিরতাম এবং দুধ দুইয়ে সর্বপ্রথম মাতা—পিতাকে পান করাতাম। এরপর নিজের শিশুদেরকে দিতাম। ঘটনাক্রমে আমি একদিন অনেক দূরে চলে গেলাম এবং ফিরতে যথেষ্ট দেরী হয়ে গেলো। রাতে যখন আমি ঘরে ফিরলাম তখন মাতা—পিতা ঘুমিয়ে পড়েছিলেন।
প্রতিদিনের মতো আমি বকরীর দুধ দোহন করলাম এবং এক পেয়ালায় ভরে মাতা—পিতার শিয়রে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেলাম। কখন তাঁরা জাগবে এবং আমি তাঁদের সামনে দুধ পেশ করবো। বেশ খানিক রাত হয়ে গেলো। আমার শিশুরা ক্ষুধায় কাতরাতে লাগলো। তারা বারবার আমার পায়ের কাছে এসে লুটিয়ে পড়ছিলো এবং দুধ দুধ করছিলো। কিন্তু পিতা—মাতার আগে তাদেরকে দুধ পান করানো আমি সহ্য করতে পারলাম না। মাতাপিতা অভুক্ত শুয়ে থাকবেন আর আমার শিশুরা পেট পুরে আরাম করবে, এটা হতে পারে না।
মোটকথা, সারা রাত আমি তেমনি পেয়ালা হাতে দাঁড়িয়ে রইলাম। মাতা—পিতা ঘুমুতে লাগলেন এবং শিশুরা ক্ষুধায় কেঁদে কেঁদে লুটিয়ে পড়তে লাগলো। এভাবে সারা রাত কেটে গেলো। হে আল্লাহ! আমি যদি মাতা—পিতার সাথে এ আচরণ শুধুমাত্র তোমার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি, তাহলে তোমার রহমাতের সাহায্যে এ পাথরকে গুহার মুখ থেকে সরিয়ে দাও।
একথা বলতেই পাথর গুহার মুখ থেকে কিছুটা সরে গেলো এবং নজরে পড়তে লাগলো। অতপর অন্য মুসাফির দুজনও স্ব স্ব নেক কাজের মাধ্যম দিয়ে দোয়া করলো এবং আল্লাহ স্বীয় রহমাতের মাধ্যমে গুহার মুখ খুলে দিলেন।