২০শে মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আল্লাহর পর সবচেয়ে বড় অধিকার কার
79 বার পঠিত

সমাজের কথা ডেস্ক : মানুষের প্রধানতম ফরয বা কর্তব্য হলো আল্লাহর উপর ঈমান আনয়ন এবং তার নিষ্ঠাপূর্ণ আনুগত্য বা বন্দেগী। এরপরই পারিবারিক কর্তব্য পালন শুরু হয়। এ সকল দায়িত্ব পালন এবং পারিবারিক জীবন সংশোধন ও পুনর্গঠনের চিন্তা করা এক দিক দিয়ে সামাজিকভাবে যেমন প্রয়োজন, তেমনি এটা একটা দীনী কর্তব্যও।

পারিবারিক জীবনের পর শুরু হয় বংশীয় জীবনের সীমা। এ জীবনে সবচেয়ে উঁচু স্থান এবং সবচেয়ে বড় অধিকার হলো মাতা—পিতার। মাতাপিতার উঁচু মর্যাদা এবং অধিকারের গুরুত্ব পবিত্র কুরআনের বর্ণিত বর্ণনা ভঙ্গী থেকেই আঁচ করা যায়। পবিত্র কুরআনের স্থানে স্থানে আল্লাহর অধিকারের সাথে সাথে মাতা—পিতার অধিকারের কথা বর্ণনা করা হয়েছে এবং আল্লাহর শোকর গুজারির সাথে সাথে মাতা—পিতার শোকর গুজারির প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।

“এবং আপনার রব ফায়সালা করে দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁকে ছাড়া অবশ্যই অন্যের বন্দেগী করবে না এবং মাতা—পিতার সাথে সুন্দর ব্যবহার করতে থাকবে। তাঁদের মধ্যে কোনো একজন অথবা উভয়েই তোমাদের সামনে বার্ধক্যে পৌঁছে যায়, তাহলে তাঁদেরকে উহ্! শব্দ পর্যন্ত বলবে না এবং তাদেরকে ধমকের স্বরে অথবা ভর্ৎসনা করে কোনো কথার জবাব দেবে না। বরং তাদের সাথে আদব ও সম্মানের সাথে কথা বলো এবং নরম ও বিনীতভাবে তাঁদের সামনে অবনত হয়ে থাকো এবং তাঁদের জন্য এ ভাষায় দোয়া করতে থাকো যেমন, রব্বির হামহুমা কামা রব্বা ইয়ানি সগীরা (হে পরওয়ারদিগার ! তাঁদের উপর (এ অসহায় জীবনে) রহম করো, যেমন শিশুকালে (সহায়হীন সময়ে) তাঁরা আমাকে রহমত ও স্নেহ দিয়ে লালন—পালন করেছিলেন।"—সূরা বনী ইসরাঈল : ২৩—২৪।

আরও পড়তে পারেন : আজ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে হজের নিবন্ধন

কুরআন হাকিমের এ দুটি আয়াত বার বার পাঠ করলে এবং এ সম্পর্কে চিন্তা করলে কতিপয় জিনিস সুন্দরভাবে ধরা দেবে :
প্রথমত, মুমিনের উপর আল্লাহর পর সবচেয়ে বড় অধিকার হলো মাতা—পিতার। কুরআনে হাকিমে রবের একত্ববাদের পর সর্বপ্রথম নির্দেশে বলা হয়েছে যে, মাতা—পিতার সাথে ভালো ব্যবহার করো। অতপর এ তাকিদ একই ধরনের বর্ণনার মাধ্যমে কুরআনে বার বার উল্লেখ করা হয়েছে।

দ্বিতীয়ত, মাতা—পিতা যখন বৃদ্ধ হয়ে যান তখন আবশ্যিকভাবে তাঁদের মেজাজে কিছুটা রুক্ষতা ও খিটখিটে ভাব সৃষ্টি হয় এবং বয়সের কারণে এমন সব কথাও তাঁদের দিক থেকে আসা শুরু হয় যা অনাকাঙ্ক্ষিত। মুসলমানদের উচিত, এ বার্ধক্যের বয়সে মাতা—পিতার রুক্ষ্ম মেজাজের প্রতি দৃষ্টি রাখা, তাঁদের প্রতিটি কথা খুশীর সাথে বরদাশত করা এবং তাঁদের কোনো কথায় বিরক্ত হয়ে জবাবে উহ্ শব্দও না বলা এবং ধমকের সাথে কোনো কথার জবাব না দেয়া।

সন্তানদেরকে শৈশবকালের কথা স্মরণ করতে হবে। সে সময় তারা না বুঝে কত ধরনের অপ্রয়োজনীয় প্রশ্ন এবং নিরর্থক কথা বলে মাতাপিতাকে পেরেশান করতো। কিন্তু মা—বাপ হাসিমুখে তাদের কথা শুনতেন, খুশী হতেন, স্নেহমাখা স্বরে জবাব দিতেন এবং কখনো বিরক্ত হতেন না।

তৃতীয়ত, মাতা—পিতার মান—মর্যাদার প্রতি সম্পূর্ণ সতর্ক দৃষ্টি রাখতে কথা—বার্তা বলার সময় তাঁদের ইজ্জতের প্রতি খেয়াল দিতে হবে। বয়সের শেষ পর্যায়ে যখন শক্তি রহিত হয়ে যায় তখন স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধ মাতা—পিতার মান—সম্মান প্রতিষ্ঠিত রাখা এবং নিজের গুরুত্ব প্রকাশের জন্য বিভিন্ন ধরনের কথা বলে থাকেন। নিজের মত সম্পর্কে অহেতুক পীড়াপীড়ি করেন। বার বার গোস্বা করেন। বিভিন্নভাবে নিজের অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। এ অবস্থায় পবিত্র কুরআনের নির্দেশাবলী হৃদয়ঙ্গম করতে হবে। হাসি মুখে তাঁদের সেইসব কথা সইতে হবে এবং কোনো সময় বিরক্ত হয়ে এমন কথা উচ্চারণ করা যাবে না যা তাঁদের মান—সম্মানের পরিপন্থী হয়।

চতুর্থত, আচার—আচরণে তাদের সাথে বিনয় এবং নরম স্বভাবের হতে হবে। অনুগত হওয়ার সাথে সাথে তাদের সামনে মাথা নিচু রাখা আবশ্যক। তাদের সব নির্দেশ মনযোগ দিয়ে শোনা এবং তা পালন করে স্বস্তি অনুভব করতে হবে। বার্ধক্যে মাতা—পিতা যখন সন্তানের সব ধরনের সাহায্যের মুখাপেক্ষী হন তখন এক অনুগত খাদেম হিসেবে তাদের খিদমত আনজাম দেয়া অভাবশ্যক। কিন্তু কোনো কথা ও কাজ থেকে যেন অহমিকা এবং ইহসান প্রকাশ না পায়। বরং সন্তানসুলভ সম্মান প্রদর্শনপূর্বক গৌরব অনুখব করা উচিত এবং এ খিদমতের সুযোগ লাভে আল্লাহর শোকর আদায় করা দরকার।

পঞ্চমত, মাতা—পিতাকে অসহায় ও দুর্বল বয়সে পেয়ে নিজের শৈশবের সেই সময়ের কথা স্মরণ করা দরকার, যখন শিশু অত্যন্ত দুর্বল, অসহায় থাকে। তখন মাতা—পিতার কত স্নেহ ভালোবাসা এবং মনোযোগ দিয়ে শত ধরনের দুঃখ—কষ্ট সহ্য করে শিশুর লালন—পালন করেন। শিশুর আনন্দে আনন্দিত হন এবং তার কষ্ট দেখে অস্থির হয়ে পড়েন। শৈশবকালের অবস্থা স্মরণ করে মুহাব্বত ও রহমাতের আবেগে অবলীলাক্রমে বার বার দোয়ার জন্য উঁচিয়ে বলতে থাকে, হে পরওয়াদিগার! যেমন শৈশবকালে স্নেহ ও মুহাব্বতের সাথে তাঁরা জান—প্রাণ দিয়ে আমাদের লালন—পালন করেছিলেন, তুমিও তাঁদের প্রতি রহম করো ও তাঁদের মুশকিল আসান করে দাও।

কুরআনে হাকিমের এ দু আয়াতে যে কথাগুলো অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত অথচ সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত বা হাদীসে বিস্তারিতভাবে পাওয়া যায়। (হাদীসের উদ্ধৃতি পরবর্তী দিন)

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram