১০ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ব্যতিক্রমী সমাজসেবক
58 বার পঠিত

যখন কোনো পুরস্কার/ পদক/ সম্মাননা এমন ব্যক্তি পান, যিনি সত্যিই যোগ্য, যার অবদান অনস্বীকার্য, তখন মানুষ তার প্রশংসা করে। পুরস্কার প্রদানকারী কর্তৃপক্ষকে সাধুবাদ জানায়। এবারে তেমনই একজন ব্যক্তি জিয়াউল হক সমাজসেবার জন্য পেয়েছেন একুশে পদক। নব্বুই বছর বয়সেও তিনি সমানভাবে নিবেদিত সমাজসেবায়। দই বানিয়ে সেটি বিক্রি করে সে টাকা থেকে গরিব শিক্ষার্থীদের জন্য বই কেনেন তিনি। এভাবেই তিনি হয়ে উঠেছেন জ্ঞানের আলো বিতরণকারী।

দুর্নীতিগ্রস্ত, প্রদর্শনবাতিকগ্রস্ত, কূপমণ্ডূক সমাজে এমন একজন সাদা মনের মানুষের সন্ধান পেলে আমাদের বুক গর্বে ভরে ওঠে। সমাজ যে এখনো পচেগলে নষ্ট হয়ে যায়নি, এখনো সেখানে আছেন মহান ব্যক্তি, যিনি পরোপকারী ও পরের কল্যাণে আÍনিয়োজিত, তার উজ্জ্বল উদাহরণ জিয়াউল। বিত্তবানেরা দানখয়রাত করেন, সেটিও প্রশংসাযোগ্য। যদিও ছবি তুলে আÍপ্রচারের স্পৃহা তাদের মধ্যে ব্যাপকভাবে কাজ করে।

অন্যদিকে সমাজে জিয়াউল হকের মতো বহু মানুষ আছেন, যারা অন্যের কল্যাণের জন্যই আÍনিবেদিত, অথচ বিনিময়ে তারা কোনো প্রচার বা পদক চান না। অন্যের প্রশংসারও মুখাপেক্ষী নন তারা। তারাই বাংলাদেশের খাঁটি সোনার মানুষ। চিত্তবান জিয়াউল হক প্রমাণ করেছেন যে, মানবসেবার জন্য বিত্তবান হওয়ার প্রয়োজন নেই।
জিয়াউল হকের জীবনকাহিনী যুগপৎ চমকপ্রদ ও মর্মস্পর্শী। জিয়াউল হক জানান, ১৯৫৫ সালে তিনি পঞ্চম শ্রেণি পাস করে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হতে চান। কিন্তু বাড়ি বাড়ি গরুর দুধ দোহন করে জীবিকা নির্বাহ করা বাবা বই কেনার জন্য মাত্র দেড় টাকা দিতে পারেননি। উচ্চবিদ্যালয়েও ভর্তি হওয়া হয়ে ওঠেনি আর। এরপর বাবার সংগ্রহ করা দুধ দিয়ে দই তৈরি করে ফেরি করে বিক্রি করা শুরু করেন। দুতিন বছর পর কিছু টাকা জমা হয় জিয়াউল হকের হাতে।

তখন তার চিন্তা হয়, যারা তার মতো টাকার অভাবে বই কিনতে না পেরে লেখাপড়া থেকে ছিটকে পড়তে পারে, তাদের এই টাকা দিয়ে বই কিনে দেবেন। তবেই তার বিদ্যালয়ে পড়তে না পারার বেদনা লাঘব হবে। গরিব ছাত্রদের মধ্যে বই বিলি শুরু করেন তিনি। যতদিন পর্যন্ত সরকার বই বিনা মূল্যে দেওয়া শুরু করেনি, ততদিন পর্যন্ত দিতে থাকেন বই। এরপর উচ্চমাধ্যমিক ও স্নাতক শ্রেণির ছাত্রদের বই দিতে থাকেন জিয়াউল।

তাঁর দেওয়া বই পড়ে ও আর্থিক সহায়তা পেয়ে অনেকেই স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে চাকরি করছেন। শুধু তাই নয়, দই বিক্রি করা টাকায় বইয়ের ভা—ার গড়ে তোলেন; ১৯৬৯ সালে নিজের বাড়ির একটি ঘরে প্রতিষ্ঠা করেন ‘জিয়াউল হক সাধারণ পাঠাগার’। পাঠাগারে এখন ১৪ হাজার বই আছে।

আমরা মনে করি, জিয়াউল হকের মতো ব্যক্তিকে একুশে পদক দিয়ে সরকার ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এভাবেই সারা বাংলাদেশে নেপথ্যে থাকা সত্যিকারের অবদান রাখা নিবেদিতপ্রাণ আÍপ্রচারবিমুখ ব্যক্তিদের এই পদক দেওয়া সমীচীন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, অনেক ক্ষেত্রে একুশে পদক এবং স্বাধীনতা পুরস্কারের অপব্যবহার করা হয়েছে অতীতে। আগামী দিনগুলোয় রাষ্ট্রের এ দুটি সর্বোচ্চ সম্মাননা তথা পদক ও পুরস্কার প্রদানে অনন্য ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত নিয়মিত হোক।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram