নিজস্ব প্রতিবেদক : ব্যস্ততম জীবনযাত্রায় বৃদ্ধ বাবা-মা ও শিশুদের দেখাশোনা এবং বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হতে পারে রোবট। একই সাথে রোবটের মাধ্যমে বৃদ্ধ ও শিশুদের খাবার খাওয়ানো, ওষুধ প্রদান, বিনোদনে জন্য গল্প ও গান শোনাবে। এছাড়া অগ্নিকা- সমস্যার সমাধানকল্পে রোবট গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রোবটটির অবস্থানের চারদিকে ১০০- ৫০০ মিটারের মধ্যে অগ্নিকা- সংঘটিত হলে তা সেন্সরের মাধ্যমে সনাক্ত করে দ্রম্নত ফায়ার সার্ভিসকে জানিয়ে দিবে। এমন একটি রোবট তৈরি করেছেন ঝিকরগাছা বদরম্নদ্দীন মুসলিম হাইস্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী কাজিম নাহইয়ান।
বৃহস্পতিবার সকালে জিলা স্কুলে আয়োজিত ৪৫তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, বিজ্ঞান মেলা এবং ৮ম জাতীয় বিজ্ঞান অলিম্পিয়ার্ড প্রতিযোগিতায় এ রোবটটি প্রদর্শন করে নাহইয়ান। এর আগে বেলুন ও ফেস্টুন উড়িয়ে মেলার উদ্বোধন করে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। এসময় উপস্থিত ছিলেন যশোরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিড়্গা ও আইসিটি) খালেদা খাতুন রেখা, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিপন বিশ্বাস, সদর উপজেলা মাধ্যমিক শিড়্গা অফিসার রবিউল ইসলাম, জিলা স্কুলের প্রধান শিড়্গক শোয়াইব হোসেন, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিড়্গক নারায়ন চন্দ্র দেবনাথ, কালেক্টরেট স্কুলের অধ্যড়্গ মোদাচ্ছের হোসেন, জেলা শিশু বিষয়ক কর্মকর্তা সাধন দাস প্রমুখ। এরপর স্কুল অডিটোরিয়ামে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ প্রতিযোগিতায়য় প্রশ্ন পর্বে ছিলেন খুলনা বিভাগীয় স্থানীয় সরকার বিভাগের পরিচালক হুসাইন শওকত। প্রতিযোগিতায় ৫৪টি প্রকল্প নিয়ে শিড়্গার্থী ও উদ্ভাবকরা অংশ নিয়েছেন। আজ বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হবে।
ঝিকরগাছা বদরম্নদ্দীন মুসলিম হাইস্কুলের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী কাজিম নাহইয়ান জানান, দীর্ঘ তিন মাসের অক্লাšত্ম প্রচেষ্টায় সে এই রোবট তৈরি করেছে। রোবটটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নতুন প্রযুক্তিতে তৈরি রোবটটি বহুমুখী কাজ করতে সক্ষম। যেখানে টেসলা কোম্পানির একটি রোবটের দাম তিন লাখ টাকার বেশি সেখানে নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি রোবটটি অনেক কম মূল্যে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেওয়া সম্ভব।
রোবটটি তৈরি করতে ৮-৯ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। দেশীয় প্রযুক্তি ও উন্নত মানের ডিভাইস ব্যবহার করেও অনেক কম মূল্যে এটি তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। অগ্নিকা- দেশের অন্যতম মারাত¥ক সমস্যা। এই সমস্যার সমাধানকল্পে রোবটটি অত্যšত্ম গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। রোবটটির অবস্থানের চারদিকে ১০০-৫০০মিটারের মধ্যে অগ্নিকা- সংঘটিত হলে তা সেন্সরের মাধ্যমে সনাক্ত করে দ্রম্নত ফায়ার সার্ভিসকে এসএমএস করে জানিয়ে দিবে। সেই সাথে এর অ্যাপ ব্যবহারকারীর ফোনে ইমেইল ও এসএমএম পাঠাবে। এছাড়াও ওই স্থানের জিপিএস লোকেশন ফায়ার সার্ভিসকে পাঠিয়ে দিবে।
অগ্নিকান্ডস্থানে ফায়ার সার্ভিস না পৌঁছানো পর্যšত্ম রোবটটি তার ট্যাঙ্কে থাকা পানি অথবা কার্বন-ডাই-অক্সাইড দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করবে। রোবটটি রাগীদের চিকিৎসা সেবায়ও গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখার পাশাপাশি নার্সগণ নিরাপদ দূরত্বে থেকে রোগীদের পর্যবেক্ষণ, চিকিৎসা প্রদান ও সেবা প্রদান করতে পারবেন এই রোবটের মাধ্যমে। বিশ্বের যেকোন স্থান থেকে রোবটের মাধ্যমে শ্রেণিকার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন শিক্ষকরা। যেমন-পাঠদান, কথোপকথন ও বিনোদনের মতো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবেন অতি সহজে।
কৃষি কাজে রোবটটি সকল ক্ষেত্রে গুরম্নত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে। যেমন- কৃষক ঘরে বসেই জমিতে সেচ, কীটনাশক ও সার প্রদান করতে পারবেন। মৎস্য চাষে জলাশয়ে পানি দেওয়া, মাছের ওষুধ প্রদান খামার মালিক বাড়িতে বসেই করতে পারবেন। এই ক্ষেত্রগুলো ছাড়াও রোবটটি বিশ্বের সকল দেশের সকল ভাষায় কথা বলা ও গুরম্নত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম। গুরম্নত্বপূর্ণ বা¯ত্মব সমস্যা সমাধানে অবদান রাখবে এই রোবট।
রোবটটি তৈরি করে কাজিম নাহইয়ান ইতিমধ্যে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতা-২০২৩ এ জেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অধিকার করেছে ও বিভাগীয় পর্যায়ে অংশগ্রহণ করেছে। এছাড়াও ৪৫ তম জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সপ্তাহে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান ও বঙ্গবন্ধু জাতীয় সৃজনশীল মেধা অন্বেষণ প্রতিযোগিতা-২০২৪ এ দৈনন্দিন বিজ্ঞান বিভাগে উপজেলা পর্যায়ে প্রথম স্থান অর্জন করেছে।