৩রা মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২০শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
ফকিরহাটে নারকেল উৎপাদনে ধস

আবুল আহসান টিটু, ফকিরহাট (বাগেরহাট) :জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আশঙ্কাজনক হারে কমেছে নারকেলের ফলন। নারকেলের রাজধানী হিসেবে খ্যাত বাগেরহাট জেলার ফকিরহাটে জলবায়ু পরিবর্তন অভিঘাতে উষ্ণতা ও শীতের ভারসাম্য নষ্ট, লবণাক্ততার সহনশীল মাত্রা অতিক্রম, হোয়াইট ফ্লাইয়ের আক্রমণ, স্যুটি মোল্ড ছত্রাক, শূতিমূলসহ নানা রোগ ব্যাধির কারণে নারকেল উৎপাদন বর্তমানে অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে।

বাগেরহাট জেলায় সবচেয়ে বেশি নারকেল উৎপাদন হয় ফকিরহাট উপজেলায়। কৃষি সম্প্রসারণ অফিসের তথ্য মতে, বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাগান না থাকলেও ফকিরহাট উপজেলায় উৎপাদিত ৪১ ধরণের অর্থকরি ফল জাতীয় ফসলের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে নারকেল গাছ রয়েছে। উপজেলার প্রায় প্রতিটি বাড়ির সীমানায়, ঘেরের পাড়ে, রাস্তার পাশে নারকেল গাছ আছে। সরকারি হিসেবে ৪০০ হেক্টর জমিতে নারকেল চাষের কথা বলা হলেও জমির প্রকৃত পরিমাণ আরো বেশি বলে মনে করেন স্থানীয় লোকজন। তবে বর্তমানে নারকেল গাছে ফলনের হার ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কমেছে বলে জানা গেছে।

<<আরও পড়তে পারেন>> গোলাপ বাগানে ছত্রাকের আক্রমণ

কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) এর তথ্য মতে, ২০১৯ সালে রুগোস স্পাইরালিং হোয়াইটফ্লাই নামের একটি বিদেশী পোকা উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের নারকেল গাছে ব্যাপকভাবে আক্রমণ শুরু করে। ক্যারিবীয় দ্বীপের এ পোকা ২০১৬ সাল থেকে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে আক্রমণের পর বাংলাদেশেও বিস্তার লাভ করে। পরবর্তীতে এ পোকা অভিযোজন করে দ্রুত আক্রমণে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষোভাবে দেশের নারকেল উৎপাদন আশঙ্কাজনক হারে কমিয়ে দেয়। স্পাইরালিং হোয়াইটফ্লাই নারকেল গাছে পরোক্ষভাবে স্যুটি মোল্ড নামের ছত্রাকের আক্রমনে সহযোগিতা করায় নারকেল গাছ দ্রুত সজিবতা হারিয়ে উৎপাদন হ্রাস করে।

বাংলাদেশ সরকারের ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি) এর তথ্য অনুযায়ী ২০০৭, ২০০৯, ২০১৬, ২০১৭, ২০১৯, ২০২১ ও ২০২৩ সালে উপর্যুপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় এলাকার ইকো—সিন্টেম। সিডর, আইলা, মোখা, ইয়াসের মতো ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এ অঞ্চলের আবহাওয়ায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছে। তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের সময়কাল, তীব্রতা ও পৌণপনিকতার হেরফেরের জন্য নারকেল গাছে বিভিন্ন রোগ বালাই দেখা দিয়েছে।

চাষিরা জানান, নারিকেলের কুঁড়ি পচা, ফল পচা, ফল ঝড়া, পাতায় দাগ পড়া, ছোট পাতা, কাণ্ডের রস ঝড়া ও শিকড় পচা রোগ দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে হোয়াইট ফ্লাইং পোকার তীব্র আক্রমনে নারকেলের ফলন একেবারে কমে গেছে। সরকারি হিসাব মতে, ফকিরহাট উপজেলায় বার্ষিক ৪ হাজার মেট্রিক টন নারকেল উৎপাদন হয়। তবে সম্প্রতি সময়ে নারকেল উৎপাদনের হার সবচেয়ে কম বলে জানান চাষিরা। ফলে ডাব ও ঝুনা নারকেলের দামও এখন আকাশ ছোঁয়া। ছোট—বড় গড়ে নারকেলের জোড়া ১০০ টাকা থেকে ১৬০ টাকায় পর্যন্ত।

উপজেলার পিলজঙ্গ ইউনিয়নের বাসিন্দা শওকত শেখ জানান, তার ঘেরের পাড়ে প্রায় ১০০টি নারকেল গাছ রয়েছে। বছর পনেরো আগে তিনি এই গাছ থেকে ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার নারকেল বিক্রি করতেন। কিন্তু বর্তমানে ২০ হাজার টাকারও নারকেল উৎপাদন হয় না তার গাছে। অনেক গাছের পাতায় সাদা সাদা পোকায় ভরে গেছে। আবার গোড়ায় সাদা রোগে (শূতিমূল ছত্রাক) পচে যাচ্ছে।’ উপজেলার অন্যান্য চাষীরা প্রায় একই ধরনের কথা বলেন।

একটি গাছে মোটামুটি ৩৬টি পাতা থাকলে সেটিকে আমরা স্বাস্থ্যবান গাছ বলে থাকি। কিন্তু বর্তমানে একেকটি গাছে গতে ১৫ থেকে ২০টি পাতা দেখা যায়। এটি নারকেল উৎপাদনের জন্য আদর্শ নয়। নারকেল গাছের মূল সাধারণত ১০ ফিট পর্যন্ত গভীরে যায়। মাটিতে লবণাক্ততা সহনশীল মাত্রা অতিক্রম করলে মূলের ক্ষতি হয়’ বলে জানান উপসহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা নয়ন কুমার সেন।

বাগেরহাটে নারকেলের পাইকারী ব্যবসায়ী কানাই লাল চক্রবর্তী, সৈয়দ আলী, শেখ হাফিজুল ইসলাম জানান, বর্তমানে সপ্তাহের রবি ও বুধবার হাটের দিনে তারা ১হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার নারকেল কিনছেন। কিন্তু বছর দশেক আগেও একেক জন পাইকার ৭ থেকে ৮ হাজার নারকেল কিনতেন।

ফকিরহাট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন, নারকেল গাছে সাদা মাছির আক্রমন ও ছত্রাকজনিত কারণে উৎপাদন কমেছে। এসব অঞ্চলের নারকেল গাছ অনেক উঁচু ও অপরিকল্পিতভাবে রোপন করায় সমন্বিত বালাইনাশক ব্যবহার করা কষ্টসাধ্য। কৃষক কারিগরি সহযোগিতা চাইলে কৃষি বিভাগ সহযোগিতা করে বলে তিনি জানান।’

ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ বলেন, অর্থকরি ফসল নারকেলের ফলন মারাত্মকভাবে কমে গেছে। এ নিয়ে তেমন কোন গবেষণা ও প্রতিকার লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। নারকেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য কৃষি বিভাগ সহযোগিতা চাইলে উপজেলা পরিষদ সহযোগিতা করবে। ফকিরহাটে নারকেল উৎপাদনে তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পেতে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষাবাদ, গবেষণা, জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল জাত উদ্ভাবন ও কৃষি বিভাগকে প্রকল্প গ্রহণের জন্য পরামর্শ প্রদান করেছেন বলেও তিনি জানান জানান।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram