আহসান টিটু, ফকিরহাট (বাগেরহাট): নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও পণ্য বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়নে চাঙ্গা বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার কৃষি অর্থনীতি। কৃষক বন্ধব এসএসিপি প্রকল্পের মাধ্যমে টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহার করে উচ্চমূল্যের ফসল উৎপাদন ও বাজার লিংকেজ তৈরির মাধ্যমে বেশি দামে বিক্রি করে স্বাবলম্বী হচ্ছেন চাষিরা।
সরকারি হিসাব মতে এ প্রকল্পের অধীনে গত এক বছরে ফকিরহাট থেকে প্রায় ৯ কোটি ৫১ লাখ টাকার সবজি বিক্রি করেছেন চাষিরা। এসব সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে প্রতিদিন।
<<আরও পড়তে পারেন>> গোলাপ বাগানে ছত্রাকের আক্রমণ
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, স্মলহোল্ডার এগ্রিকালচারাল কম্পিটিটিভনেস প্রজেক্ট (এসএসিপি) প্রকল্পের আওতায় উপজেলার ২হাজার ৬৬৪ জন চাষিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এসব চাষিরা পতিত জমি, উচু জমি, মৎস্য ঘেরের পাড়ে এমনকি নদীর পাড়ের খাস জমিতে উচ্চমূল্যের মৌসুমি সবজি চাষ করছেন।
চলতি এক বছরে রবি, খরিপ—১ ও খরিপ—২ মৌসুমে এই উপজেলায় সাড়ে ৮ হাজার মেট্রিক টন উচ্চ মূল্যের সবজি উৎপাদিত হয়েছে। শুধুমাত্র এ প্রকল্পের অধীনে এসব সবজি থেকে চাষিদের বছরে অন্তত ৯ কোটি ৫১ লাখ টাকার বেশি আয় হয়েছে। উপজেলার বেতাগা ইউনিয়নের মাসকাটা—ধনপোতা গ্রামে নিরাপদ সবজি চাষের বিশেষায়িত জোন তৈরি হয়েছে ইতোমধ্যে। স্থাপিত হয়েছে কৃষি গবেষণা কেন্দ্র। অর্গানিক বেতাগা দেশে ও বিদেশে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে।
উৎপাদিত উচ্চ মূল্যের সবজির মধ্যে আগাম জাতের অফ—সিজন শিম, ব্রকলী, রঙিন ফুলকপি, গ্রীষ্মকালীন টমেটো, আরবীয় সাম্মাম, শিলা বেগুন, আগাম জাতের বাধাকপিসহ ১৩ ধরনের সবজি চাষ হয়। মৌসুম শুরুর আগেই এসব সবজি বাজারে আসায় চাহিদা এবং দাম থাকে প্রচুর। একই সাথে প্রকল্পের থেকে বৈজ্ঞানিকভাবে ফসল কাটার উপকরণ, সংরক্ষনের ক্যারেট ও ফসল ভোক্তাদের কাছে পৌঁছে দিতে চাষীদের বিনামূলে ভ্যান প্রদান করা হয়েছে। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরত্ব বন্ধ হয়েছে। বাজার লিংকেজ তৈরির মাধ্যমে চাষিরা উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাচ্ছেন।
উপজেলার বাহিরদিয়ার চাষি জাহাঙ্গীর শেখ জানান, ৩০ হাজার টাকা ব্যায়ে তিনি ৫০ শতক জমিতে ২ হাজার ৯০০ ব্রকলী চাষ করেছেন। প্রতিটি ব্রকলী এখন ৫০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। এ হিসেবে তিনি এখান থেকে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা আয় করার আশা করছেন। তিনি বলেন, এসএসিপি প্রকল্প থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার, কাটার যন্ত্র, ক্যারেট ও বিক্রয়ের জন্য ভ্যান দিয়েছে। এখন তিনি নিজেই উৎপাদিত ফসল ভ্যানে করে বিক্রি করেন। বাজার মূল্যের চেয়ে একটু কম দামে বিক্রি করছেন বলে সাড়াও পাচ্ছেন ভালো।
একই রকম অভিজ্ঞতার কথা বলেন রঙিন ফুলকপি চাষি শ্যামল পাল, সাম্মাম চাষি রবিউল ইসলাম, মিশ্র সবজি চাষি সুমি হাওলাদার, মাহমুদ শেখ সহ আরো অনেকে। তারা জানান প্রাকৃতিক বালাইনাশক ব্যবহার করে নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও উন্নত প্রযুক্তির চাষাবাদের ফলে লাভের মুখ দেখছেন তারা। ফলে তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতার পাশাপাশি সমৃদ্ধ হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শেখ সাখাওয়াত হোসেন বলেন, নিরাপদ সবজি আবাদের জন্য এসএসিপি প্রকল্পের আওতায় ট্রাইকোকম্পোস্ট, ভার্মিকম্পোস্ট, ফেরোমন ফাঁদ, হলুদ আঠালো ফাঁদ, নীল আঠালো ফাঁদ, জৈব বালাইনাশক বিতরণ করা হয়েছে। নিরাপদ সবজি আবাদে এসব ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। প্রকল্পের আওতায় ফকিরহাটের চাষিরা টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে সক্ষম হয়েছে।
ফকিরহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান স্বপন দাশ জানান, কৃষি সমৃদ্ধ ফকিরহাট উপজেলায় উৎপাদিত উচ্চ মূল্যের সবজি স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যাচ্ছে। উন্নত বিপণন ব্যবস্থার ফলে চাষীরা লাভবান হচ্ছেন। এসএসিপি প্রকল্প প্রকৃত অর্থে একটি কৃষক বান্ধব প্রকল্প।