সরদার সিদ্দিকী, শ্যামনগর (সাতক্ষীরা): শ্যামনগর লোকালয়ের ঘনবসতি এলাকা থেকে ও নদী ভাঙ্গন এলাকা থেকে উন্নত মানের ড্রেজার মেশিন ও বোরিং করে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। প্রভাবশালীদের ইন্দনে এই বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বালু উত্তোলন বন্ধে এলাকাবাসী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সুন্দরবন তীরবর্তী কালিঞ্চি গ্রামে পুকুর ও চিংড়িঘেরসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বোরিং করে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। রমজাননগর ইউনিয়নে মুজিবর কাগুজীর মৎস্যঘের ও দমদম নামক স্থানে দু’টি পৃথক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে দিনভর ওই বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় কেরামত আলী। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আল মামুনের নির্দেশে এই বালু তুলছেন বলেও দাবি তার। কৈখালী কোস্টগার্ড অফিস থেকে টেংরাখালী ¯¬ুইচগেট পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার কার্পেটিং সড়ক নির্মাণ কাজের জন্যে ওই বালু তোলা হচ্ছে বলে জানানো হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ লোকালয় ও কৃষিজমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন সত্ত্বেও জনপ্রতিনিধি বা প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় মুজিবর কাগুজীর মৎস্যঘের ও দমদম সরকারি পুকুরের মধ্যে দু’টি ড্রেজার মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। বোরিং করে ওই দু’টি অংশ থেকে পাইপের সাহায্যে বালুপাশ্ববর্তী নির্মাণাধীন কোস্টগার্ড—টেংরাখালী সংযোগ সড়কে ফেলা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায় পাশের সড়ক নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারের সাথে ১২ টাকা ফুট হিসেবে বালু সরবরাহের চুক্তি করেছে কালিঞ্চি গ্রামের কেরামত আলী। পরবর্তীতে তিনি কালিগঞ্জের ঘোলা থেকে দুই ড্রেজার মালিককে এনে ছয় টাকা ফুট হিসেবে বালু উত্তোলন করছেন। নিষেধ করলেও বালু উত্তোলনের সাথে ‘উচ্চ পর্যায়ের লোকজন’ জড়িত দাবি করে তাদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
গ্রামবাসী জানায় শ্যামনগরে সরকার নির্দিষ্ট দু’টি বালুমহাল রয়েছে। তবুও বালুমহালের পরিবর্তে এলাকার প্রভাবশালীদের ইন্ধনে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে লোকালয় থেকে বালু তোলা হচ্ছে।
স্থানীয় গ্রামবাসী সামচুর রহমান বলেন উচ্চ শব্দের মেশিন চলার কারণে বাড়ি—ঘরে বসবাস করা যাচ্ছে না। আবার বোরিং করে বালু উত্তোলনে নিষেধ করলেও ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে।
বালু উত্তোলনকারী কেরামত আলী জানায় পাশের দেড় কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের জন্য সেখান থেকে বালু তোলা হচ্ছে। ‘আরও চার/পাঁচ দিন কাজ চলবে’ উলে¬খ করে তিনি বলেন, ড্রেজার মালিকদের ফুটপ্রতি ছয় টাকা দিয়ে বাকি চার টাকা উপজেলা প্রশাসনসহ অন্যান্যদের ‘ম্যানেজ’ করার হচ্ছে। তবে বালু মহলের পরিবর্তে জনবসতি থেকে বালু উত্তোলনে ঝুঁকি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। রমজাননগর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আল মামুনের মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বালু উত্তোলনের বিষয় অস্বীকার করেন।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজিবুল আলমের সাথে গত ১৮ মার্চ মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, অফিসের লোক যখন বালু উত্তোলন এলাকায় যাচ্ছে তখন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। বালু উত্তোলনের মেশিন জব্দ করার কথা বললে তিনি বলেন মেশিন জব্দ করে উপজেলা সদরে আনতে ৭—৮ হাজার টাকা খরচ। তবে তিনি ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
অবশ্য গতকাল বমঙ্গলবার পর্যন্ত মেশিন জব্দের খবর পাওয়া যায়নি এবং বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় স্থানীয়রা।