রমজানে যেসব পণ্যের প্রয়োজন হয়, দেশে সেগুলোর পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকার বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারপরও কেউ কৃত্রিম সংকট তৈরি করে দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে প্রয়োজনে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রবিবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয় আন্তঃমন্ত্রণালয়ের সভা। অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে খাদ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী, বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর উপস্থিত ছিলেন। ফলে, এই সভার গুরুত্ব অনেক।
দ্রব্যমূল্য ও মূল্যস্ফীতির চাপে নাজেহাল দেশবাসীর আশা, নতুন সরকার দ্রব্যমূল্যের লাগাম টানায় সফল হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পণ্যের দাম বৃদ্ধিকারীদের শাস্তি দেওয়ার কথাও বলেছেন। প্রতিবছর রমজান এলেই এক শ্রেণির অসাধু চক্র ওত পেতে বসে থাকে বাজার ব্যবস্থাকে অসহনীয় করে তুলে কিভাবে মুনাফার হার বাড়ানো যায়, যা রীতিমতো উদ্বেগজনক। নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখাই মূল বিবেচ্য বিষয়। সরকার বাজার ব্যবস্থা স্থিতিশীল রাখাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছে। তবে শুধু রমজান নয়, সারাবছর যেন নিত্যপণ্যের দাম স্থিতিশীল থাকে এবং সাধারণ মানুষের দুঃখ—কষ্ট দুর্ভোগ কমে— সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কাজটা মোটেও সহজ নয়। আবার একেবারে অসম্ভবও নয়। তবে বেশ ভেবেচিন্তে এবং বিচার—বিশে¬ষণ করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে এবং ব্যবসায়ীদের কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চালিয়ে যেতে যেন কোনো সমস্যা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। মোটকথা, অন্যান্য সংশি¬ষ্ট মন্ত্রণালয়, ব্যবসায়িক সংগঠন এবং ব্যাংকারদের সমন্বয়ে সম্মিলিত উদ্যোগ নিতে পারলেই দেশে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সফলতা পাওয়া যাবে।
দেশের মানুষ যাতে স্বস্তিতে থাকতে পারে, সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নবনিযুক্ত মন্ত্রীদের আসন্ন পবিত্র রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে বড় মজুতদাররা যেন রমজানে জরুরি পণ্য মজুত করে বাজারে সেসবের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করতে না পারে, সে লক্ষ্যে নিয়মিত মজুতবিরোধী অভিযান পরিচালনারও নির্দেশ দেন তিনি।
রমজানে চাহিদা বেড়ে যাওয়া কয়েকটি পণ্য, যেমন— ভোজ্যতেল, চিনি, খেঁজুরসহ আমদানিনির্ভর ভোগ্যপণ্যের শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্তকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এখন দেখার বিষয়, ভোগ্যপণ্য আমদানিতে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ শতভাগ নিশ্চিত হবে কিনা। ডলার নিশ্চিত করা না গেলে অন্যান্য মুদ্রায় আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।
উৎপাদন ও আমদানি পর্যায় থেকে ভোক্তা পর্যন্ত যৌক্তিক পণ্যমূল্য নির্ধারণে বাজার মনিটরিং আরও জোরদার করা হলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সুফল আসবে বলে পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা। বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক অঙ্গীকার হচ্ছে, নিত্যপণ্য মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা এবং এগুলো সহজলভ্য হওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। সরকার কঠোর হলে পরিস্থিতির যে উন্নতি হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।