ইমরান হোসেন পিংকু : ভৈরব তীরে দাঁড়িয়ে থাকা একটি কার্গো থেকে কাঠের সিঁড়ি বেয়ে টলমল পায়ে নামছেন ঘাট শ্রমিক। মাথায় তার শত কেজি বোঝা। নওয়াপাড়া নদী বন্দরে এ দৃশ্য নিত্যদিনের। ৩০ হাজারের বেশি শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই কার্গো থেকে কয়লা, সিমেন্ট, সার, গম, ডাল, বুট ও ছোলাসহ বিভিন্ন পণ্য উঠা-নামার কাজ করছেন।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার নওয়াপাড়া ঘাটে কথা হয় শ্রমিক নাসির শিকদার সাথে। তিনি সমাজের কথাকে বলেন, কাঠের পাটাতন বেয়ে মাল নামাতে নামাতে ৪৩ বছর পার করেছেন। ১৯৮০ সালে বরিশাল থেকে এ বন্দরে এসে কাজ শুরু করেন। দশ ইঞ্চি চাওড়া এই কাঠের সিঁড়ি হেটে তীরে বস্তাভর্তি পণ্য নামানো সবচেয়ে ঝুঁকির বলে মনে করেন তিনি। একটু অসর্তক হলেই বড় ধরণে দুঘর্টনার আশঙ্কা থাকেই।
এক প্রশ্নে জবাবে নাসির বলেন, ঘাটে কাজ করতে যেয়ে বহু বার বস্তাভর্তি মাল নিয়ে পানিতে পড়ে গেছি। তবে ২০ বা ২৫ বছর আগে একবার কাঠের সিড়িঁ ভেঙ্গে তিন জন পানিতে পড়ে গিয়েছিলাম। আমরা দুজন পাড়ে উঠতে পারলেও আমাদের সাথে থাকা একজন উঠতে পারেনি। এখনও তার লাশটাও পাওয়া যায়নি।’
ঘাট শ্রমিক হাবিব খান বলেন, জীবনের ঝুঁকি আছে জেনেও পেটের দায়ে এই কাজ করি। তাছাড়া পণ্যের ধুলোবালি ও বর্জ্য শরীরে ঢুকে শরীর খারাপ করে। শ^াসকষ্ট, কাশি ও চোখ জ্বালাপোড়া করে। গা হাত পা চুলকায়।’
হাবিব আরও বলেন, ৫০ কেজির একবস্তা পণ্য নামালে পণ বুঝে ৪ থেকে ৫টাকা ৫০পয়সা পর্যন্ত আয় হয়। সারাদিন কাজ করতে পারলে ৩০০-৪০০ টাকা পাওয়া যায়।
যশোরের অভয়নগর উপজেলার ছোট শহর নওয়াপাড়া। এখান থেকে প্রতিবছরে ১৫ হাজার কোটি টাকা পণ্য খালাস হয়। এ বন্দর থেকে কয়লা, সার, খাদ্যশস্য যায় সারাদেশে । নওয়াপাড়া ঘাট ঘিরে প্রায় ৫০হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
নওয়াপাড়ার ওপর দিয়ে পাশাপাশি বয়ে গেছে ভৈরব নদ এবং যশোর-খুলনা রেলপথ ও মহাসড়ক। এই তিন পথ নওয়াপাড়ায় এসে সমান্তরাল হয়েছে ১৫০-২০০ মিটার দূরত্বে। তিন পথের যোগাযোগের সুবিধায় দেশের অন্যতম বড় বিপণনকেন্দ্র হয়ে উঠেছে নওয়াপাড়া। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে নওয়াপাড়ায় সার, খাদ্যশস্য, রড, পাথর ও সিমেন্ট ব্যবসার ব্যাপক প্রসার ঘটে। ২০১৬ সাল থেকে সেখানে যোগ হয়েছে কয়লা।
এদিকে, বিদেশ থেকে আমদানি করা বিভিন্ন পণ্য চট্টগ্রাম ও মোংলায় আসে। সেখান থেকে বার্জ ও কার্গোতে তা নওয়াপাড়ায় পৌছায়। অন্যদিকে ভারত থেকে স্থলপথে আমদানি করা পণ্য রেলে বেনাপোল ও দর্শনা স্থলবন্দর হয়ে নওয়াপাড়ায় পৌছে।
অভয়নগর নওয়াপাড়া পৌর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন ম-ল বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন ৩০হাজারও বেশি শ্রমিক। কাঠের ১০ ইঞ্চি সিঁড়ি থেকে পড়ে যেকোন সময় শ্রমিকদের বড় ধরণে দুঘর্টনা ঘটতে পারে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেও সেই পরিমাণ পারিশ্রমিক পায় না শ্রমিকরা।’