নিজস্ব প্রতিবেদক : নাম তার জাকির হোসেন, পিতা মো. মুনছুর আলী। অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগের মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে গেলে জাকির দাবি করেন, তার নাম মোহাম্মদ মোশরফ হোসেন, পিতা মো. হারুনউর রশিদ। বিভ্রান্তিতে পড়ে পুলিশ তাকে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখাতে বলে। জাকির তখন মোশরফ হোসেন নামের জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) দেখান। একপর্যায়ে পুলিশের জেরার মুখে তিনি স্বীকার করেন, জাকির এবং মোশরফ দুই নামেই তার জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। পরে পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে।
অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ মামলার আসামি গ্রেফতার করতে গিয়ে এনআইডি জালিয়াতির এ ঘটনা উদ্ঘাটনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন যশোর কোতোয়ালি থানার এএসআই টমাস মন্ডল।
<<আরও পড়তে পারেন>> মাদরাসা সভাপতির নামে মামলা : অভিযোগ গুরুতর
গ্রেফতার জাকির হোসেনের দু’টি এনআইডি’র তথ্য অনুযায়ী, একটিতে নাম—জাকির হোসেন, পিতা মো. মুনছুর আলী, মাতা সাফিয়া খাতুন, ঠিকানা— সেক্টর ১, উপশহর, সদর, যশোর; জন্ম তারিখ ১৯ সেপ্টেম্বর ১৯৬৪ ইং, এনআইডি নং—৪১১৪৭৯৫২৫২৩৬৬। অন্যটির নাম্বার— ৭৩৪৯০৬৪৬৫৪, নাম মোহাম্মদ মোশরফ হোসেন, পিতা মো. হারুনউর রশিদ; মাতার নাম ঠিকানা ও জন্ম তারিখ একই।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, যশোর শহরের ঘোপ জেল রোডে ঢাকা হোটেল নামে একটি হোটেল চালান জাকির হোসেন। কিন্তু হোটেলটির ট্রেড লাইসেন্স মোহাম্মদ মোশরফ হোসেন নামে নেওয়া। ২০১৯ সালে ট্রেড লাইসেন্স নিলেও তার নামে কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। কখনো অবৈধ সংযোগ, কখনো বিদ্যুৎ চুরি করে হোটেল চালানোর অভিযোগে গত ২৫ জানুয়ারি ভ্রাম্যমাণ আদালত ওই হোটেলে অভিযান চালায়। অভিযানে বিদ্যুত আদালতের ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ) আয়েশা আক্তার মৌসুমী ৬২ হাজার ৫শ’ টাকা জরিমানা করেন। কিন্তু এই জরিমানা না দেওয়ায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আদালত জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে।
ওইদিন রাতে উপশহরের জলপাইতলা ফকিরার মোড়ে জাকিরের বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় জাকির নিজের পরিচয় লুকাতে পুলিশকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এক পর্যায়ে পুলিশের জেরায় তার দু’টি এনএইডি কার্ড উদ্ধার করা হয়। একইসাথে জাকির নামে ড্রাইভিং লাইসেন্স এবং মোশরফ নামে ট্রেড লাইসেন্সও উদ্ধার করা হয়। এরপর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করে।
শহরের ঘোপ জেল রোড এলাকার বাসিন্দা ফজলে রাব্বী অভিযোগ করেন, জাকির নামের এই ব্যক্তি তাদের মিটারের বিদ্যুৎ চুরি করে হোটেলে ব্যবহার করছিল। এ জন্য তিনি বিদ্যুৎ বিভাগে অভিযোগ দেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে জরিমানার পর গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলে পুলিশ তাকে আটকের অভিযান চালায়। এ সময় তার জাল—জালিয়াতির বিষয়টি জানাজানি হয়।
গ্রেফতার অভিযানে যাওয়া যশোর কোতোয়ালি থানার এএসআই টমাস মন্ডল জানান, জাকির নামের ওই ব্যক্তি বড় ধরণের প্রতারক। ভিন্ন ভিন্ন কাজে তার দু’টি পরিচয়পত্র সে ব্যবহার করেছে। বিদ্যুতের মামলায় তাকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দের পাশাপাশি দু’টি এনআইডিসহ জালিয়াতির ব্যাপারে আদালতে পৃথক প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছে।
দু’টি এনআইডি’র বিষয়ে যশোর সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বাদল চন্দ্র অধিকারী বলেন, একই ব্যক্তির দু’টি এনআইডি কার্ড রাখার সুযোগ নেই। তবে দু’একটি ক্ষেত্রে যাদের প্রথম এনআইডি ২০০৭ সালের আগে করা এবং পরে স্মার্টকার্ড গ্রহণের সময় জালিয়াতি করলে এবং আঙুলের ছাপ ম্যাচ না করলে নিতে পারেন। তবে এটি ধরা পড়লে আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির ব্যাপারে আদালতের নির্দেশনা দিলে বা পুলিশ কোনো সহযোগিতা চাইলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
এ ব্যাপারে জাকির হোসেনের স্ত্রীর নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তার ছেলে রিদম দাবি করেন, তার বাবার একটাই আইডি কার্ড। আরেকটি কার্ড কোথা থেকে এসেছে তা তারা জানেন না। ভিন্ন নামে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ট্রেড লাইসেন্সের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে কোনো উত্তর দেননি।