১০ই মে ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
কালের সাক্ষী সাড়ে পাঁচশ বছরের খান জাহান আলী মসজিদ
কালের সাক্ষী সাড়ে পাঁচশ বছরের খান জাহান আলী মসজিদ


মাসুদ তাজ, অভয়নগর (যশোর) : যশোরের অভয়নগরে কালের সাক্ষী হয়ে আজও টিকে রয়েছে হজরত খানজাহান আলী (রহ.) নামের মসজিদ। যে মসজিদে গত সাড়ে পাঁচশ বছর ধরে পাঁচ ওয়াক্তের নামাজসহ তারাবি নামাজ আদায় হয়ে আসছেন মুসুল্লিরা। সাড়ে পাঁচশ বছর আগে মুসলিম ধর্ম প্রচারক ও খুলনা বিভাগের বাগেরহাট জেলার তৎকালীন স্থানীয় শাসক হজরত খান জাহান আলী (রহ.) এ মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। কারুকার্য ও নির্মাণশৈলী বিবেচনায় স্থাপত্যশিল্পের অনন্য নিদর্শন এই মসজিদ। উপজেলার শুভরাড়া ইউনিয়নের শুভরাড়া গ্রামে ভৈরব নদের তীরে মসজিদটির অবস্থান।

ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৫ শতকের শেষ দিকে হজরত খান জাহান আলী (রহ.) তার অনুসারী ও সৈন্যবাহিনী নিয়ে যশোরের বারবাজার এলাকা হতে ভৈরব নদের তীর ধরে পূর্ব দিকে এগিয়ে যান। চলতি পথে তিনি রাস্তা নির্মাণ, দীঘি খনন ও ইসলাম ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে মসজিদ স্থাপন করেন।

উপজেলার নওয়াপাড়া বাজার থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরত্বে সড়ক ও নদী পথে শুভরাড়া গ্রামে যাওয়া যায়। সেখানে অসংখ্য গাছগাছালি ও বাঁশবাগানের মাঝে ভৈরব নদের তীরে এক গম্বুজ ও চার মিনার বিশিষ্ট খানজাহান আলী (রহ.) নামের মসজিদটি রয়েছে।

প্রখ্যাত ঐতিহাসিক সতীশচন্দ্র মিত্রের যশোর ও খুলনার ইতিহাস গ্রন্থের প্রথম খ-ে ‘খলিফাতাবাদ’ অধ্যায়ে খান জাহান আলী (রহ.) কর্তৃক নির্মিত মসজিদের বিষয় উল্লেখ রয়েছে। লেখকের বর্ণনা অনুযায়ী, হজরত খান জাহান আলী (রহ.) নড়াইল জেলার দিকে না গিয়ে ভৈরব নদের কূল ধরে অভয়নগরের শুভরাড়া গ্রামে পৌঁছান। খ্রিস্টিয় ১৪৪৫ থেকে ১৪৫৯ সালের মধ্যে কোন এক সময় তিনি মসজিদটি নির্মাণ করেন। এছাড়া পার্শ্ববর্তী বাশুয়াড়ী গ্রামে মাত্র এক রাতের মধ্যে একটি দীঘিও খনন করেন।

সরেজমিনে শুভরাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গাছগাছালি ও বাঁশবাগানের মাঝে লাল পোড়া মাটির রঙের মসজিদের মাঝামাঝি একটি গম্বুজ ও চার কোণে চারটি মিনার রয়েছে। প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের লেখা অনুযায়ী বর্গাকার মসজিদটির অভ্যন্তরীণ পরিমাপ ৫.১৩ বর্গমিটার। এর চার কোনায় ৪টি অষ্টমকোনাকৃতি টারেট রয়েছে।
মসজিদের ভেতরের আয়তন ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি বাই ১৬ ফুট ১০ ইঞ্চি। উচ্চতা ২৫ ফুট। বাইরের মাপ এক মিনারের মধ্যবিন্দু হতে অন্য মিনারের মধ্যবিন্দু পর্যন্ত ২৮ ফুট ৬ ইঞ্চি। মসজিদের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণে ৩টি দরজা আছে। পূর্বদিকে সদর দরজা এবং এর খিলান ১১ ফুট উঁচু এবং ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি প্রস্থের। বিশেষ পদ্ধতিতে নির্মিত মসজিদে ছোট-বড় সব ধরণের ইট রয়েছে।

গ্রামবাসী ও প্রবীণ লোকজন জানান, প্রায় ১০০ বছর আগে মসজিদের ছাদ ভেঙে পড়ে। পরে এলাকাবাসীর উদ্যোগে গোলপাতার ছাউনি দিয়ে নিয়মিত নামাজ আদায় করা হত। পরবর্তীতে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। বর্তমানে এই মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দেখতে আসছে। আকৃতি ঠিক রেখে আরো বড় করা এবং ইমাম ও মোয়াজ্জিনের থাকার সুব্যবস্থা করার দাবি জানান তারা।
খুল তত্ত্ব অফিস সূত্রে জানা গেছে, নীতিমালা বা কোড অনুসরণ করেই মসজিদটি সংস্কার ও সংরক্ষণ করা হয়েছে। ৫ বার সংস্কারে প্রায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। মৌলিকতত্ত্বের কোন পরিবর্তন করা হয়নি। তবে কিছু সংস্কার কাজ এখনও বাকি রয়েছে।

এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দীন জানান, খান জাহান আলী মসজিদ ও দীঘিসহ অন্যান্য প্রাচীন স্থাপনা টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram