কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি : টানা ২৮ বছর নৌকার দখলে থাকা যশোর—৬ (কেশবপুর) আসনে এবারো নৌকার পালে লেগেছে হাওয়া। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চালকলাদারকে বিজয়ী করতে এবারো একাট্টা হয়েছেন কেশবপুরের ভোটররা। প্রতিটি নির্বাচনী সভায় ছিল গণ জোয়ার।
১৯৯৬ সালের জুনে অনুষ্ঠিত ৭ম সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন আবু শারাফ হিজবুল কাদের সাদেক। ২০০১ এ ৮ম সংসদ নির্বাচনেও বিজয়ী হন আবু শারাফ হিজবুল কাদের সাদেক। ২০০৮ এর ৯ম সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের শেখ আব্দুল ওহাব, ২০১৪ এর ১০ সংসদ ও ২০১৮র একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হন নৌকার প্রার্থী আবু শারাফ হিজবুল কাদের সাদেক এর স্ত্রী ইসমত আরা সাদেক। ইসমত আরা সাদেকের মৃত্যুর পর ২০২০ সালেল ১৫ জুলাই অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে বিজয়ী হন বর্তমান সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদার। এভাবে টানা ২৮ বছর নৌকায় আস্থা রেখেছে চলেছে কেশবপুরের ভোটাররা।
এরও আগে ১৯৭৩ সালে নৌকার প্রার্থী আবুল ইসলাম, ১৯৮৬ সালে নৌকার প্রার্থী আব্দুল হালিম ও ১৯৮৮ সালে নৌকার প্রার্থী আব্দুল কাদের বিজয়ী হন। ১৯৭৯, ১৯৯১ ও ১৯৯৬ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বাদে সকল নির্বাচনে নৌকাকে বিজয়ী করেছে এ অঞ্চলের ভোটরা। বলা যায় নৌকা ভিন্ন অন্য কোন প্রতীকে ভোটই দেয়নি কেশবপুরের মানুষ। এবারো এর ব্যতিক্রম হচ্ছে না এমনটি জানিয়েছেন ভোটাররা। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে নৌকার মাঝি শাহীন চাকলাদারকে বিজয়ী করতে ভোটাররা কোমর বেধে মাঠে নেমেছে।
নির্বাচনী এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নৌকার মাঝি শাহীন চাকলাদার এমপি নির্বাচিত হয়েছেন তিন বছর। এ অল্প সময়ে সাগরদাঁড়ী সড়কসহ উপজেলায় ৭৮ টি কার্পেটিং রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণ, শহীদ মিনার নির্মাণ, বিজয় স্তম্ভ নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। এমপি শাহীন চাকলাদার নির্বাচিত হওয়ার পূর্বে কেশবপুরে হাতৃড়ি বাহিনী ও গামছা বাহিনীর অত্যাচার ও চাঁদাবাজির কারণে উপজেলাবাসী অতিষ্ট হয়ে পড়েছিল।
উপ—নির্বাচনে শাহীন চাকলাদার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়ার পর হাতুড়ি বাহিনী ও গামছা বাহিনী রাতের আধারে কেশবপুর ত্যাগ করে। প্রতিষ্ঠিত হয় স্তস্তি আর শান্তির কেশবপুর। কেশবপুর উপজেলাবাসী শান্তিতে বসবাস করা এবং উপজেলা ব্যাপী ব্যাপক উন্নয়ন হওয়ায় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পান যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমপি শাহীন চাকলাদার।
মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকে এমপি শাহীন চাকলাদার উপজেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনকে সাথে নিয়ে উপজেলা ব্যাপী গণসংযোগ করেন। ইউনিয়নে ইউনিয়নে পথ সভা করেন। পথসভাগুলি জনসভায় পরিণত হয়। এরপাশাপাশি উপজেলা যুবলীগ, উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ ও উপজেলা যুব মহিলালীগ, উপজেলা ছাত্রলীগ পৌর শহরে নৌকা প্রতীকের পৃথক পৃথক প্রচার মিছিল বের করে। ঐ সকল মিছিলে জনতার ঢল নামে। নৌকার শ্লোগানে পৌর শহর প্রকম্পিত হয়।
সর্বশেষ উপজেলা আওয়ামী লীগের আয়োজনে বৃহস্পতিবারে কেশবপুর পাবলিক ময়দানে ৫০ হাজার ভোটারদের উপস্থিতে নৌকা প্রতীকের এক বিশাল জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ড ও উপজেলার ১১ টি ইউনিয়ন পৃথক পৃথক ভাবে মিছিল সহকারে পাবলিক ময়দানে হাজির হয়। ঐতিহাসিক ওই জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমপি শাহীন চাকলাদার।
ভোটাররা বলছেন কেশবপুরের ইতিহাসে এত মানুষের উপস্থিতে কোন জনসভা ইতিপূর্বে হয়নি। তারা বলছেন কেশবপুর উপজেলার ব্যাপক উন্নয়ন ও শান্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এমপি শাহীন চাকলাদের গ্রহণ যোগ্যাতা দিন দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া উপজেলাবাসীর সুখে দুখে পাশে থাকায় এমপি শাহীন চাকলাদারের জনপ্রিয়তা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীকাল ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে ভোট দেওয়ার জন্য ভোটারা উদগ্রিব হয়ে আছে। যার ফলে ব্যাপক ভোটে নৌকা বিজয়ের পথে রয়েছে।
নির্বাচন অফিস সূত্রে জানাগেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোর—৬ (কেশবপুর) আসনে ৮১টি কেন্দ্রে ৫০৮টি কক্ষে ভোটগ্রহণ হবে। এর মধে পুরুষ কক্ষ ২৪৩টি এবং মহিলা কক্ষ ২৬৫টি। এ আসনে ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ১৭ হাজার ৯২৪ জন। যার মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ লাখ ৯ হাজার ৯১৩ জন এবং মহিলা ভোটার ১ লাখ ৮ হাজার ১০জন ও হিজড়া ভোটার ১ জন। ৭ জানুয়ারি সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ হবে।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত এমপি শাহীন চাকলাদার নৌকা প্রতীকে, জাতীয় পার্টি মনোনীত জি এম হাসান লাঙ্গল প্রতীকে, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ—সভাপতি এইচ এম আমির হোসেন কাইচি প্রতীকে এবং উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম—আহ্বায়ক আজিজুল ইসলাম ঈগল প্রতীক নিয়ে সংসদ সদস্য পদে নির্বাচন করছেন।