সমাজের কথা ডেস্ক : রাজপথের বিরোধী দল বিএনপির জাতীয় কাউন্সিল হয় না ৮ বছর। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোকে ৩ বছর পর পর কাউন্সিল করার বাধ্যবাদকতা থাকলেও এর তোয়াক্কা করছে না বিএনপি। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতেই চলছে নেতা নিয়োগ। সর্বশেষ ২১ ফেব্রুয়ারি, বুধবারও ঝালকাঠি জেলা বিএনপির সদস্য রফিকুল ইসলাম জামালকে দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কেন্দ্রীয় কমিটির পদবঞ্চিত বিএনপি নেতারা চরম ক্ষুব্ধ বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায় ।
রাজপথের আন্দোলনে ব্যর্থ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি এখন রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায়। দলটির অধিকাংশ নেতাকর্মী রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ অনেক নেতাকর্মী বন্দি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডন প্রবাসী। এ পরিস্থিতিতে দলের সর্বস্তরে কমিটি পুনর্গঠন ও জাতীয় কাউন্সিল করে সামনে এগিয়ে যাওয়া জরুরি বলে বিএনপির মঙ্গল চায় এমন দেশী—বিদেশী বিভিন্ন মহল মনে করলেও দলটির হাইকমান্ডের এ নিয়ে কোনো চিন্তাই নেই বলে সূত্র জানায়।
<<আরও পড়তে পারেন>> কাউন্সিলর ‘টাক মিলন’কে যুবলীগ থেকে বহিস্কার
বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। এর পর ৮ বছর ধরে জাতীয় জাতীয় কাউন্সিল হচ্ছে না। দলের একটি বড় অংশ ২০১৯ সাল থেকে বারবার জাতীয় কাউন্সিলের দাবি জানিয়ে এলেও বিএনপি হাইকমান্ড চায় না বলে তা সম্ভব হচ্ছে না। এ নিয়ে দলটির একটি বড় অংশ ক্ষুব্ধ থাকলেও প্রকাশ্যে কেউ বলতে সাহস পাচ্ছে না। পদ হারানোর ভয়ে এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ কথা বলছে না বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়।
সূত্র মতে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর ৩ বছর পর পর জাতীয় কাউন্সিল করার বাধ্যবাধকতা থাকলেও বিএনপি তা তোয়াক্কা করছে না। করোনাকালে কাউন্সিলের জন্য সময় বৃদ্ধির আবেদন করলেও এখন নিবন্ধন ঝুঁকিতে থাকার পরও দলের নেতারা এ নিয়ে কিছু ভাবছে না। তাই ইসি আইন অনুসারে যে কোনো সময় বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে।
এটি জানার পরও বিএনপি হাইকমান্ড দলের কাউন্সিলের চিন্তা না করে নতুন করে বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিচ্ছে। অথচ যোগ্যতা থাকার পরও যুগ যুগ ধরে কেন্দ্রীয় কমিটির পদ পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছেন যারা তাদের পদ দেওয়া হচ্ছে না বলে জানা যায়।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে না আসায় বিএনপি কিছুটা নিবন্ধন ঝুঁকিতে রয়েছে। কারণ, কোনো কারণে আর একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেই আরপিও অনুসারে দলটির নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। এ পরিস্থিতিতে কোনো কোনো মহল থেকে দলটিকে নিষিদ্ধ করারও দাবি উঠেছে। তাই সরকার কোনো গ্রাউন্ডে বিএনপিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত করলে আরপিও’র ১১ (খ) ধারা অনুসারে নির্বাচন কমিশন দলটির নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে। এ ছাড়া দ্রুত জাতীয় কাউন্সিল করে নতুন নির্বাহী কমিটি গঠন না করলে বা আরেকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে নির্বাচন কমিশন সরাসরি বিএনপির নিবন্ধন বাতিল করতে পারবে বলে ইসি সূত্র জানায়।
বিএনপির বিভিন্ন স্তরের ক’জন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জনের পর সবাই আশা করেছিলেন জাতীয় কাউন্সিল করে দলের সর্বস্তরে কমিটি পুনর্গঠন করা হবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তার লক্ষ্যণ দেখা যাচ্ছে না। আগের জাতীয় কাউন্সিলের পর ৮ বছর পার হলেও আমরা জাতীয় কাউন্সিল করতে পারছি না। এ কারণে, অনেক যোগ্য নেতা কেন্দ্রীয় কমিটিতে আসতে পারছে না।