পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : লাশ উদ্ধারের পাঁচ দিনের মধ্যে উন্মোচিত হয়েছে গৃহবধু তাজমিরা হত্যা রহস্য। পারিবারিক বিরোধ মেটাতে এসে গ্রাম্য মাতুব্বররা শুভাকাঙাখী সেজে তাজমিরাকে বাড়ি থেকে ডেকে শ্বাসরোধ করে, গলা কেটে লাশ ফেলে যায়। প্রতিপক্ষ মাতুব্বরদের শায়েস্তা করতে তাজমিরার ভাসুরের সহায়তায় তারই পক্ষের মাতুব্বররা এ হত্যাকান্ড ঘটনায়। শনিবার সুন্দরবন সংলগ্ন কুমখালী এলাকা থেকে আটক শহিদুল মোড়ল (৪৫) ওরফে মাস্টার আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক এ জবানবন্দি দিয়েছে। গৃহবধুর ভাসুর শহীদুল্লাহ মীর, মফিজুল গাজী ইতোমধ্যে আটক হয়েছে।
গত ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকালে ধান ক্ষেতের পাশ থেকে উপজেলার ধামরাইল গ্রামের মীর ওবায়দুল্লাহ’র স্ত্রী গৃহবধু তাজমিরা বেগম (৩৮) এর গলাকাটা মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আটককৃত আসামীদের জবানবন্দি ও এলাকাবাসী সূত্রে জানাযায়, গৃহবধু তাজমিরার স্বামী ওবায়দুল্লাহ ও ভাসুর শহীদুল্লাহ মীরের সাথে পৈত্রিক সম্পত্তি নিয়ে তাদের মৃত ভাই সাংবাদিক মামুনের পরিবারের সাথে দীর্ঘদিন বিরোধ চলে আসছিল। মামুনের পরিবার খুলনাতে বসবাস করে। তাদের প্রাপ্য সম্পত্তির কিছু অংশ এলাকার জনৈক ব্যক্তিদের নিকট বিক্রি করে দিলে দখল বুঝে না পাওয়ায় এ নিয়ে আদালতে মামলা হয়। পরবর্তীতে এলাকার কয়েকজন মধ্য¯’কারী হিসেবে বিষয়টি নিরসনের উদ্যোগ নিলে জায়গা জমি সংক্রান্ত এ বিরোধে কয়েকটি পক্ষ জড়িয়ে যায়। এলাকার দুটি পক্ষের একটি পক্ষ গৃহবধু তাজমিরাদের পক্ষ নেয়। অপর একটি পক্ষ সাংবাদিক মামুনের মেয়ে মৌসুমীদের পক্ষ নেয়। তাজমিরাদের যারা পক্ষ নেয় তারা তাজমিরাকে ব্যবহার করে মৌসুমীদের পক্ষ নেওয়া মধ্য¯’াকারীদের ফাঁসানো জন্য ষড়যন্ত্র এবং চক্রান্ত করে। চক্রান্তকারীরা পরিকল্পনা নেয় মৌসুমী ও তাদের লোকজন যেদিন এলাকায় আসবে সেদিন তাদেরকে ফাঁসানো হবে। জমি বুঝে নিতে মৌসুমী ও তার লোকজন ৩০ জানুয়ারি এলাকায় এসে রাত্রী যাপন করে। এদিন সন্ধ্যায় গৃহবধু তাজমিরা সহ ষড়যন্ত্রকারীরা তাজমিরার ভাসুর শহীদুল্লাহ’র চায়ের দোকানে গোপনে বৈঠক করে। বৈঠকে ষড়যন্ত্র সফল হলে কেউ জমিতে ভাগ বসাতে পারবে না বলে গৃহবধু তাজমিরাকে আশ^¯’ করে। এতে তাজমিরা খুশি হয় তাদের উপর। কিš‘ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! সেই ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হয় তাজমিরাকে। রাত ১২টার দিকে ভাসুর শহীদুল্লাহ তাজমিরাকে বসতবাড়ী থেকে ডেকে তার চায়ের দোকানে নিয়ে যায়। এরপর তাজমিরাকে চায়ের দোকানে ঢুকিয়ে দোকানে সাডার লাগিয়ে ভাসুর শহীদুল্লাহসহ ৬জন চক্রান্তকারী তাজমিরার মুখে গামছা দিয়ে শ^াসরোধ করে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার আধা ঘন্টা পর মৃতদেহ এলাকার জনৈক সালেক মীরের ধান ক্ষেতের পাশে নিয়ে যায়। এখানে খেঁজুর গাছের তলায় রেখে ছুরি দিয়ে মৃতের গলা কেটে ক্ষতবিক্ষত করে। এরপর মৃতদেহ ধান ক্ষেতের পাশে রেখে দেয়। সকালে এলাকাবাসীর মাধ্যমে খবর পেয়ে ঘটনা¯’ল থেকে থানা পুলিশ মৃতদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় মৃতের ভাই আলমগীর বাদী হয়ে অজ্ঞাত আসামী করে থানায় হত্যা মামলা করে।
ওসি জিয়াউর রহমান জানান, এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৩জনকে আটক করা হয়েছে। প্রথমে গৃহবধুর ভাসুর শহীদুল্লাহ মীর, পরে মফিজুল গাজী এবং সর্বশেষ শহিদুল মোড়ল ওরফে মাস্টারকে আটক করা হয়েছে। শহিদুল সুন্দরবনে পালিয়ে যা”িছল। বিষয়টি জানতে পেরে সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার ট্রলার থেকে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর তার কাছ থেকে হত্যা ঘটনার মূল রহস্য উদ্ঘাটন হয়েছে। কি ভাবে পরিকল্পনা করা হয়, কিভাবে হত্যা করা হয়, কারা হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সে বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে আটক শহিদুল মাস্টার। সে শনিবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আটক অপর দুই আসামীর রিমান্ড আবেদন সোমবার শুনানীর দিন ধার্য্য রয়েছে।