এস হাসমী সাজু : শীত আসে, শীত যায়, শিশুসুরড়্গা যন্ত্র ইনকিউবেটর ও ফটোথেরাপি আসে না। গত ১০ বছর ধরে একটি ইনকিউবেটর ও তিনটি ফটোথেরাপি মেশিন দিয়ে চলছে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড।
সংশিস্নষ্ট বিভাগের চিকিৎসকদের মতে, গত ৪/৫দিনের শীতে ঠাণ্ডাজনিত শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। শীতের কারণে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ নিয়ে অভিভাবকরা তাদের শিশুদের হাসপাতালে ভর্তি করছেন। ভর্তি শিশুদের একটি বড় অংশের প্রয়োজন হচ্ছে ইনকিউবেটর অথবা ফটোথেরাপি মেশিন। শুধুমাত্র মেশিন না থাকায় শিশুদের যথাযথ চিকিৎসা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। নিরূপায় হয়ে চিকিৎসকরা শিশুদের খুলনায় রেফার করছেন। প্রতিবছর শীত এলেই ইনকিউবেটর ও ফটোথেরাপির প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। এ চিকিৎসাযন্ত্র কেনার বিষয়ে আলোচনাও হয়। কিন্তু কেনা আর হয় না। এভাবে ১০ বছর পার হয়ে গেছে।
এদিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের রেজিস্টার অনুযায়ী বুধবার বেলা ১২টা থেকে বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যšত্ম শিশু ওয়ার্ডে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ ঠাণ্ডাজনিত রোগ নিয়ে ৪৫ শিশু ভর্তি হয়েছে। বর্তমানে ওয়ার্ডে নতুন ও পুরাতন মিলে ৬৫ জন শিশু রোগী অবস্থান করছে। এর মধ্যে ১৩ জন শিশু রয়েছে নিউনেটাল বস্নকে। ফলে নিউনেটাল বস্নকে পাঁচটি বেবি ট্রলিতে চাপাচাপি করে ৪/৫ জন করে শিশু রাখতে হচ্ছে। অপর দিকে, সাধারণ বেডে জায়গা না থাকায় অনেক শিশুকে এই ঠাণ্ডার মধ্যেও ওয়ার্ডের ফ্লোরে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন কর্তৃপড়্গ।
এদিকে হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে যশোর জেনারেল হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীত হলে শিশু রোগীদের জন্য সেসময় পাঁচটি ইনকিউবেটর মেশিন, ছয়টি ফটোথেরাপি মেশিন ও বিভিন্ন সময় কয়েকটি সাকার মেশিন, সেলাইন ঝুলানোর স্ট্যান্ড এবং দুইটি অক্সিজেন সিলিন্ডার ওয়ার্ডে বরাদ্দ দেওয়া হয়। নবজাতকদের জন্য ২০১১ সালের জুলাইয়ে ওয়ার্ডের মধ্যে স্থাপন করা হয় নিউনেটাল বস্নক। তখন এই সকল মেশিনারিজ ওই বস্নকে স্থানাšত্মর করে একটি বিশেষ রম্নম বরাদ্দ হয় শিশুদের জন্য। এই রম্নম গরম ও ঠাণ্ডা করার জন্য ওয়ারমার মেশিনও স্থাপন করা হয়। কিন্তু২০১৩ সাল থেকে ওই মেশিনগুলো নষ্ট পড়ে আছে। ফলে দীর্ঘ ১০বছর নিউনেটাল বস্নকটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায়, বর্তমানে শিশু রোগীদের জন্য একটি নেবুলাইজার মেশিন, একটি ইনকিউবেটর, তিনটি ফটোথেরাপি মেশিন, একটি সাকার মেশিন, সেলাইন ঝুলানোর ৬টি স্ট্যান্ড এবং ৫টি অক্সিজেন সিলিন্ডার রয়েছে। যা রোগীর সংখ্যার তুলনায় অনেক কম।
ওয়ার্ডে কর্তব্যরত সেবিকা রাজিয়া সুলতানা জানান, যে পরিমাণ শিশু ভর্তি হয় সে তুলনা চিকিৎসা সামগ্রী ও মেশিনারিজের সংখ্যা ওয়ার্ডে কম রয়েছে। অনেক সময় এ সকল মেশিন রোগীরা ব্যবহারের সময় আরও ২/৩টি রোগী ওয়ার্ডে ভর্তি হচ্ছে। যে রোগীর জরম্নরি ভিত্তিতে মেশিনের প্রয়োজন কিন্তু তাৎড়্গণিক সে সহযোগিতা দেওয়া সম্ভব হয় না।
নিউনেটাল বস্নকে চিকিৎসাধীন শিশুর মা বসুন্দিয়া সিঙ্গিয়া গ্রামের বৃষ্টি জানিয়েছেন, তার দুই দিন বয়সের শিশুকে ওয়ার্ডে শ্বাসকষ্টজনিতকারণে ভর্তি করা হয়েছে। কিন্তু ভর্তির পর থেকে নেবুলাইজার দিতে গিয়ে সঠিকভাবে দেওয়া যাচ্ছে না। যখনি দেওয়া হচ্ছে পাঁচ মিনিট পরে আর একজন শিশুকে নেবুলাইজার দেওয়ার জন্য স্বজনরা আসছেন। চিকিৎসক দিনের বেশিরভাগ সময় শিশুকে ইনকিউবেটরের মধ্যে রাখতে বলেছেন। কিন্তু একটি মেশিন হওয়ার কারণে এক ঘণ্টার বেশি রাখতে পারছি না। রোগীর স্বজন আঞ্জুমান আরা, রোজিনা, ইসমত আরাসহ আরো অনেকে একই সমস্যার কথা তুলে ধরেন।