২৫শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১২ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যশোর শিক্ষাবোর্ড
যশোর শিক্ষা বোর্ড : লাইব্রেরিয়ান প্রধান পরীক্ষক, স্ত্রী নিরীক্ষক!

তহীদ মনি : যশোর শিক্ষা বোর্ডের এসএসসি খাতা বন্টন ও পরীক্ষক নির্বাচনে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নের বিষয়টি গুরুত্ব পায়নি। প্রতিষ্ঠান যে সকল শিক্ষকের নাম ও বিষয় প্রস্তাব করেছে বোর্ড কোনো যাচাই ছাড়াই পরীক্ষক নিয়োগ দিয়েছে। ফলে এক প্রতিষ্ঠানের তিনজন শিক্ষক একই বিষয়ের খাতা পেয়েছেন। কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছাড়াই লাইব্রেরিয়ান হয়ে পড়ছেন বাংলা বিষয়ের প্রধান পরীক্ষক, তার স্ত্রী হয়েছেন আইসিটি শিক্ষক বাংলা বিভাগের নিরীক্ষক ।


ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ড উপজেলার কেবি একাডেমির লাইব্রেরিয়ান এটিএম শফিকুজ্জামান প্রথমবারের মত পরীক্ষক হিসেবে তালিকা প্রেরণ করেন। তাকে বাংলা ১ম পত্রের প্রধান পরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে বোর্ড।
একটি সূত্র জানিয়েছে, খাতা পাওয়ার নিয়ম যিনি যে বিষয়ে পড়ান ওই বিষয়ের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে প্রথমে পরীক্ষক নির্বাচন করা হয়। কয়েকবার পরীক্ষক হিসেবে অভিজ্ঞতা অর্জনের পর দক্ষতার ভিত্তিতে তাকে প্রধান পরীক্ষকের দায়িত্ব দেওয়া হয়। প্রধান পরীক্ষক খাতা সার্বিক মুল্যায়নের পর তা আবার স্কুটিনাইজারের(নিরীক্ষকের) মাধ্যমে নিরীক্ষা করা হয়। তারপর সেই নম্বর বোর্ডে জমা পড়ে এবং বোর্ড সেটি পদ্ধতি অনুসারে শিক্ষার্থীর নাম-রোল অনুসারে সংযুক্ত করে। সব বিষয়ের নম্বর উঠানো হলে ফলাফল প্রস্তুত হয়। সে হিসেবে পরীক্ষক, প্রধান পরীক্ষক, নিরীক্ষক কোনো একটি স্তুরে সামান্য ভুল করলে পুরো ফলাফল পাল্টে যেতে পারে। এমন একটি স্পর্শকাতর বিষয়ে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি।


শফিকুজ্জামান লাইব্রেরিয়ান হওয়ার পরও তিনি একই সাথে প্রায় সাড়ে ৪শ খাতার পরীক্ষক এবং একই সাথে তিনি ওই বাংলা ১ম পত্রের প্রধান পরীক্ষকও। তার আওতায় বেশ কয়েকজন পরীক্ষক রয়েছেন। তিনি যে একাডেমির শিক্ষক ওই একাডেমিতে আরও দুইজন শিক্ষক রয়েছেন তারাও বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষক হিসেবে শফিকুজ্জামানের আওতায় খাতার মূল্যায়ন করছেন।

আবার শফিকুজ্জামানের স্ত্রী নাসিমা খাতুন সাধুহাটি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞানের শিক্ষক, তিনিও এবার ভূগোল ও পরিবেশ বিদ্যার প্রধান পরীক্ষক নিযুক্ত হয়েছেন। তিনি আবার তার স্বামীর বাংলা খাতার নিরীক্ষক নিয়োজিত হয়েছেন। এর আগে মেহেরপুর গাংণীতে একজন আইসিটি শিক্ষক বাংলা ২য় পত্রের খাতা গ্রহণ করেছেন বলেও তথ্য পাওয়া গিয়েছিল।বোর্ডের একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ক্ষেত্রে এ ধরনের অসঙ্গতি হয়েছে।
শফিকুজ্জামান বা তার স্ত্রী নাসিমা খাতুন বলেছেন, স্কুল পর্যায়ে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক থাকে না। সমাজ বিজ্ঞানে ডিগ্রি পাস হলেই সাধারণ শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। তাছাড়া তারা প্রধান পরীক্ষক হতে চাননি। বোর্ড দিয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের করনীয় নেই।


কেবি একাডেমির প্রধান শিক্ষক মো. জামাল হোসেন জানান, লাইব্রেরিয়ানে নিয়োগ পেলেও সরকারি নিয়মে তিনি এখন শিক্ষক। যেকোনো শিক্ষক যে কোনো বিষয়ে ওটিপি পূরণ করতে পারেন, তাতে তার কোনো দায় নেই। ফলে তার বিদ্যালয়ের ৩ জন শিক্ষক ওটিপিতে বাংলা ১ম পত্র পূরণ করেছেন এবং তারা বাংলা খাতা পেয়েছেন। তিনি উল্টো জানতে চান, যে শিক্ষক প্রথমবারের মতো ওটিপি বাংলা ১ম পত্র পূরণ করলো সে কীভাবে প্রধান পরীক্ষক নিযুক্ত হন।


একইভাবে, গাংনী স্কুলে প্রধান শিক্ষক ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে জানান, এতে তো কোনো সমস্যা নেই। বোর্ডের ওটিপিতে আইসিটি দেওয়া আছে। ২য় পত্রে খাতা চাওয়া হয়েছে। দিয়েছে। মূল্যায়নেও সমস্যা হবে না। অভিজ্ঞতার কথা জানতে চাইলে দুজনেই জানান, মাঝে মাঝে ক্লাস তো নেওয়া হয়, তাই খাতা দেখতে সমস্যা হবে না।


বোর্ডের কয়েকটি সূত্র জানায়, কর্মকর্তাদের উদাসীনতার সুযোগে কয়েকজন কর্মচারীর যোগসাজসে এমন ঘটনা ঘটছে। এ সব কারণে মেধাবী অনেক শিক্ষক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক অভিজ্ঞ শিক্ষক খাতা মূল্যায়নে অনাগ্রহী। অনেক সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষককে প্রধান পরীক্ষক হওয়ায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের কাছে খাতা জমা দিতে হয় এটাকে তারা সম্মানের মনে করেন না। বোর্ড এই সমস্যা সমাধানে কার্যকরী কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারছে না।


পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. বিশ্বাস শাহীন জানান, এ বিষয়ে খোঁজ নেয়া হবে। যিনি যে বিষয় পড়ান ও অভিজ্ঞতা আছে তাকে সেই বিষয়ের খাতা দেওয়া হয়। পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকলে প্রধান পরীক্ষক হওয়া যায় না এবং সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষক না হলে নিরীক্ষকও হওয়া উচিত না।


বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. আহসান হাবীব জানান, খাতা মূল্যায়নের জন্যে পরীক্ষক নির্বাচনে তারা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ওটিপি পূরণে আহ্বান জানান। যে শিক্ষক যে বিষয় পড়ান তিনি সেই বিষয়ে ওটিপি পূরণ করবেন এবং সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের প্রধান সেটিকে নিশ্চিত করবেন। কেউ যদি সমাজ পড়ায় এবং তিনি যদি ইংরেজির জন্যে ওটিপি পূরণ করেন, বোর্ড সার্ভারে তাকে ইংরেজির শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করা হবে। তার জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে পরীক্ষক, প্রধান পরীক্ষক বা নিরীক্ষক নির্বাচন করা হবে। এখানে পরিবর্তন করার বা কাউকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। যদি কেউ ভুল ওটিপি পূরণ করে তার দায়ভার ওই শিক্ষকের ও তার প্রতিষ্ঠান প্রধানের, বোর্ডের নয়।
এভাবে শিক্ষক নির্বাচন ও খাতা বন্টন কতটুকু মূল্যায়নের সহায়ক এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এতে ফলাফলে কোনো সমস্যা হবে না।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram