২০শে এপ্রিল ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭ই বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
যশোর জেনারেল হাসপাতাল
যশোর জেনারেল হাসপাতালে রাজস্ব বেড়েছে ৩ গুণ


এস হাসমী সাজু : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রোগীর তুলনায় বেড়েছে রাজস্ব। দুই বছরের ব্যবধানে রাজস্ব ৫০ লাখ থেকে বেড়ে হয়েছে ২ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কর্মকর্তা কর্মচারীরা জবাবদিহিতার আওতায় আসায় রাজস্ব বেড়েছে। কেন্দ্রীয় ক্যাশ কাউন্টারের সুফল পাচ্ছে রোগী ও সরকার।


হাসপাতালের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম, সিটিস্ক্যান, বহির্বিভাগ টিকিট, জরুরি বিভাগ টিকিট, কেবিন, পেয়িংবেড, অ্যাম্বুলেন্স, প্যাথলজিসহ বিভিন্ন উৎস থেকে রাজস্ব পায় সরকার। হাসপাতালের ভাষায় একে বলা হয় ইউজার ফি।

২০০৩ সালে হাসপাতাল ১শ শয্যা থেকে ২৫০ শয্যায় উন্নতি হওয়ার পর থেকে ইউজার ফি আদায়ে স্বচ্ছতা ছিল না। অভিযোগ ছিল, ইউজার ফি’র ষোলো আনা কখনো রাজস্ব হিসেবে জমা হয়নি। এগুলো ভাগবাটোয়ারা করে নিতেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অনেক সময় অডিটে দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ পেলেও তা নানাভাবে ‘ম্যানেজ’ করা হয়েছে। এসব দুর্নীতি রোধের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক ডা. ইয়াকুব আলী কেন্দ্রীয় ক্যাশ কাউন্টার চালুর উদ্যোগ নেন। তিনি কার্যক্রম শুরু করলেও অবসরজনিত কারণে চালু করে যেতে পারেননি। ২০১৯ সালের ৫ জুলাই হাসপাতালের কেন্দ্রীয় ক্যাশ কাউন্টারের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য। সেসময় তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ডা. আবুল কালাম আজাদ লিটু।

এরপর থেকে অধিকাংশ ইউজার ফি ক্যাশ কাউন্টারের মাধ্যমে জমা দেয়ার নির্দেশনা থাকলেও তা সফল হয়নি। ২০২১ সালের ১ জুন তত্ত্বাবধায়ক হিসেবে যোগদান করেন ডা.আখতারুজ্জামান। তিনি যোগদানের পর থেকেই কেন্দ্রীয় ক্যাশ কাউন্টারের কার্যক্রম জোরালো করেন। কাউন্টার ছাড়া টাকা গ্রহণ বন্ধ হয়ে যায়। যাবতীয় অর্থ কাউন্টারে জমা হতে থাকে।

এরফলে বাড়তে থাকে রাজস্ব। তবে এখনো কেবিন, পেয়িংবেড ও অপারেশন চার্জ, বহিঃবিভাগের টিকিটের একটি অংশ রাজস্বখাতে জমা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২০ সালে হাসপাতাল থেকে সেবা নেয় ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৬২০জন। রাজস্ব আয় হয় ৫১ লাখ ২৬ হাজার ৬৮৫ টাকা। এ সময়ে এক্সরে বিভাগের মাসে সর্বনি¤œ আয় ছিল ৪২০ টাকা।


২০২১ সালে সেবা নেয় ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৩১৩জন। প্রায় সমসংখ্যক রোগী থেকে ২০২০ সালের তুলনায় রাজস্ব বাড়ে তিনগুণ। এ বছর রাজস্ব জমা পড়ে ১ কোটি ৫৫ লাখ ৯৫হাজার ৪১০ টাকা। এর মধ্যে জুলাইয়ে এক্স-রে বিভাগের সর্বনি¤œ আয় ছিল ৮৪ হাজার ৬০০ ও সর্বোচ্চ সেপ্টেম্বরে ২ লাখ ১৮ হাজার ৬৫০ টাকা ২০২২ সালে সেবা গ্রহীতার সংখ্যা বেড়ে হয় ৬ লাখ ২০ হাজার ৫৪০। রাজস্ব বাড়ে আড়াই গুণ।

এ বছরে রাজস্ব জমা হয় ২ কোটি ৫৮ লাখ ৮৬ হাজার ৮৮৫ টাকা। এ বছর সেপ্টেম্বরে এক্স-রে বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ আয় এসেছে ৩ লাখ ৯৭ হাজার টাকা। এক্স-রে বিভাগের দায়িত্ব প্রাপ্ত মৃত্যুঞ্জয় রায় দাবি করছেন, আগে ফিল্ম সংকট ছিল। রোগীও আসত কম। এজন্য সেসময় আয়ও কম ছিল। পরে এ সংকট কেটে যাওয়ায় আয় বেড়েছে।


হাসপাতালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিদায়ী বছর ২০২২ হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন ৭০ হাজার ৩৬৬ রোগী। জরুরি বিভাগ ও বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসাসেবা নিয়েছেন ৫ লাখ ৫০ হাজার ১৭৪ জন।


২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রাজস্ব বৃদ্ধির হার আরো বেড়েছে। এক মাসেই বিভিন্ন বিভাগ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২৩ লাখ ৪০ হাজার ১১৫ টাকা।

এরমধ্যে জরুরি বিভাগে ভর্তি রোগীর টিকিটের বিপরীতে ১ লাখ ৫ হাজার ৫ টাকা, সিসিইউতে ভর্তি রোগীর ইসিজির বিপরীতে ৩৩ হাজার ৪৪০টাকা, একই বিভাগের কেবিন থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১০ হাজার ৪শ টাকা, হাসপাতালের বহিঃবিভাগে রোগীর টিকিটের বিপরীতে ১ লাখ ৬৪ হাজার ৩শ টাকা, করোনা আইসোলেশন ওয়ার্ড থেকে ১ হাজার ৬শ টাকা এবং প্যাথলজি বিভাগে ৬ হাজার ৬শ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

কেবিন থেকে ৬০ হাজার ১৫০টাকা, পেয়িংবেড থেকে ৩ লাখ ৩৩ হাজার ৪শ টাকা, এক্স-রে বিভাগ থেকে ৩লাখ, ৯২ হাজার ৪শ টাকা, প্যাথলজি বিভাগ থেকে ৬লাখ ১৫ হাজার ১০টাকা, আল্ট্রাসোনো বিভাগ থেকে ৩ লাখ ১ হাজার টাকা, সিসিইউ’র ইকো কার্ডিওগ্রাম বাবদ ৪ হাজার ৬শ টাকা এবং হাসপাতালের ইকোকার্ডিওগ্রাম থেকে রাজস্ব আয় হয়েছে ১ হাজার টাকা এবং হাসপাতালের দুইটি গাড়ি থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৭৪ হাজার ৫১০টাকা।


হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আব্দুস সামাদ বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষা বিভাগ হয়েছে সহজ। বেড়েছে স্বচ্ছতা। বর্তমান তত্ত্বাবধায়কের কঠোরতায় প্রতিটি বিভাগের দুর্নীতি কমিয়ে আনা হয়েছে। এজন্য রাজস্ব আয় বেড়েছে প্রায় তিনগুণ।’


হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান জানান, হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় হাতে হাতে টাকা গ্রহণ যাতে না হয় সে বিষয়ে সবাইকে কঠোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গত বছর সেন্ট্রাল ক্যাশ কাউন্টারের কার্যক্রম ডিজিটাল করা হয়েছে। ক্যাশ কাউন্টারে অর্থ জমা দেয়ার কারণে আর্থিক স্বচ্ছতার পাশাপাশি কমেছে রোগীর ভোগান্তিও। জবাবদিহিতা থাকায় বর্তমানে রাজস্ব বেড়েছে প্রায় তিনগুণ। এখন অনলাইনে এ কার্যক্রমের তথ্য থাকায় রাজস্ব আরো বাড়বে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
FriSatSunMonTueWedThu
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
2627282930 
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram