হাটখোলা ফ্লাইওভার। সময় আজ রাত সাড়ে নটা। স্বামীবাগে সোহেল ভাইয়ের সাথে দেখা করবো ভেবে একটু একটু করে এগোচ্ছি। সামান্যই পথ। হঠাৎ সেলফোন বেজে ওঠে। রঞ্জনার কল। লকডাউনে কথাই হয় না। আমরা বর্ণমালার বন্ধুরা এমনই! অনেক অনেক দিন পর কথা হলেও দূরত্ব বাড়ে না বরং কমে আসে।
কথা বলছিলাম। পাশ দিয়ে একটা মটরসাইকেল চলে যাচ্ছিল। পেছনে বসা ছেলেটা অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সেলফোনটা টেনে নিলো। নিয়েও পুরো আয়ত্তে নিতে পারলো না। হাত থেকে পড়ে গেল। আমার থেকে পঞ্চাশ মিটার এগিয়ে ওরা। সব পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। মটরসাইকেল থেকে একজন নামলো। সেলফোনটা তুললো। সিটে বসে যেই ছুট লাগাবে তখনই বিধিবাম! একজন পুলিশ সার্জেন্ট সামনে দেয়াল হয়ে দাঁড়ালেন।
আমি ততক্ষণে তাদের কাছাকাছি। পাশে র্যাব অফিস। আরো কয়েকজন পুলিশ চলে এসেছে। আমি পেছনের সিটের ছেলেটার হাত থেকে সেলফোনটা নিয়ে নিলাম। বললাম, বেশ কদিন ধরে খুব ডিস্টার্ব দিচ্ছে। নিয়েও তেমন কাজ হতো না।
পুলিশ ওদের তুলে নিয়ে যাচ্ছে। ওদের সারা শরীরে ভয়ের সংক্রমণ দেখতে পাচ্ছিলাম। একটু পর তাদের উপর কি ধকল যাবে ভেবে শিউরে উঠলাম। পুলিশ আমাকে বললো, চলুন আপনাকেও থানায় যেতে হবে।
বললাম, থানা থেকেই তো আসছি। দরকার হলে যাবো। সেটা বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে আমাদের রিহার্সালের মাঝে আপনি ঢুকে পড়লেন সেটা। চোখ কপালে তুলে বললেন, পুলিশের সঙ্গে মজা করার মজা টের পাবেন একটু পরেই।
আরে ভাই মজা কোথায়! আমরা একই পেশার মানুষ। ওরা সাংবাদিক পত্রিকায় লেখে, আমি সাদা কাগজে। তাই বলে একজন আরেকজনের মোবাইল টেনে নিয়ে যাবো দুনিয়া এমন নয়। আমরা একজন আরেকজনকে টেস্ট করছি। এমন পরিস্থিতি কিভাবে সারভাইভ করবো। আপনি শুধু শুধু জট পাকাচ্ছেন।
ওরা আমার কলম সম্পর্কের আত্মীয়। ওরা টানমারা পার্টির কেউ নয়। এবার পুলিশ প্রমাদ গুনলেন। দেখি দেখি আপনাদের আইডি কার্ড। ওরা দুজন নিজ নিজ কার্ড দেখালেন। মটর সাইকেলের সামনের দিকে বড় করে লেখা প্রেস কেমন জ্বলজ্বল করে উঠলো।
পুলিশ আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, দেখি আপনারটা। হেসে বললাম, সাদা কাগজে লিখতে কোন আইডি কার্ড লাগে না। ছেলেদুটির মুখের দিকে তাকাতেও ইচ্ছে হলো না। বন্ধ সেলফোনটা হাতে নিয়ে চলে এলাম। বাসায় এসে চার্জ দিয়ে চালু করলাম। এই বোবা সেটটা কি কোনদিন বুঝবে আমার ভেতরে এখন কেমন লাগছে?