৩১শে মে ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রড়্গায় আবারো নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী
স্মরণকালের জনসমুদ্র নামিয়ে যশোরবাসীর ইতিহাস


নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে লাখ লাখ মানুষের জনসমুদ্রে আগামী দিনে আরও উন্নয়নের প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে নৌকায় ভোট চাইলেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ দেশের অনেক উন্নয়ন করেছি; আপনারা সুযোগ দিলে আগামী দিনে আরও উন্নয়ন করবো। আপনারা নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আমাদের সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আগামীতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আপনাদের সেবা করার সুযোগ দেবেন কি না ওয়াদা চাই। আপনারা হাত তুলে ওয়াদা করেন।’
বৃহস্পতিবার বিকেলে যশোর শামস্- উল- হুদা স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের জনসভায় ভাষণদানকালে তিনি একথা বলেন।
রিজার্ভ নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘রিজার্ভ নিয়ে অনেকে নানা সমালোচনা করছে। অনেকে প্রশ্ন করেন রিজার্ভ গেলো কোথায়? আমরা তো রিজার্ভ অপচয় করিনি। মানুষের কল্যাণে কাজে লাগিয়েছি। জ্বালানি তেল কিনতে হয়েছে, খাদ্যশস্য কিনেছি। বিভিন্ন প্রকল্প বা¯ত্মবায়ন করেছি। করোনার টিকা ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছি। এসব কাজে রিজার্ভ থেকে খরচ করতে হয়েছে আমাদের। কারণ আমরা সবসময় মানুষের কথা চিšত্মা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাচ্ছি।’
রিজার্ভ নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি আরও বলেন, ‘আমাদের সরকার রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ বাড়িয়েছে। আর কোনো সরকার রিজার্ভ বাড়াতে পারেনি। পর্যাপ্ত রিজার্ভ হাতে রেখেই সব কাজ করছি আমরা। রিজার্ভের কোনো সমস্যা নেই, আমাদের সব ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা আছে। সামনের দিনেও কোনো সমস্যা হবে না।’
কোনো মানুষ ভূমিহীন থাকবে না, ঠিকানাহীন থাকবে না উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি যখন ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসি, তখন থেকে সিদ্ধাšত্ম নিই একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। তাই এবার আমরা ক্ষমতায় এসে ৩৫ লাখ ভূমিহীনকে ঘর নির্মাণ করে দিয়েছি। ঘর পেয়ে মানুষের জীবন পাল্টে গেছে। জাতির পিতার আকাঙ্ক্ষা পূরণ করেছি।
তিনি বলেন, কারও জমি যেন অনাবাদি না থাকে। প্রত্যেকটা জমি আবাদ করতে হবে। যাতে করে আমাদের খাদ্য ঘাটতি না হয়। কারও কাছে হাত পাততে না হয়। কারো কাছে চেয়ে চলতে না হয়। যার কাছে যা আছে তা দিয়ে কিছু উৎপাদন করেন।
যশোরে জনসভা করতে পেরে আনন্দিত উলেস্নখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই যশোরে আমার নাড়ির টান আছে। এখানের মাটিতে আমার নানা শেখ জহুরম্নল হক শুয়ে আছেন। তিনি যশোরে চাকরি করতেন। আমার মায়ের বয়স যখন তিন বছর ছিল, তখন তিনি মারা যান। ওই সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা এতই খারাপ ছিল, যে লাশ টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যাওয়া যায়নি। তাই আমার নানাকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এখানে আমার নানার স্মরণে দারিদ্র্য বিমোচন ট্রেনিং সেন্টার হচ্ছে।’
মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নিয়ে বিএনপি নিজেদের উন্নয়ন করেছে উলেস্নখ করে তিনি বলেন, রক্ত আর হত্যা ছাড়া বিএনপি আর কিছু দিতে পারেনি। তারা (বিএনপি) কিছুই দিতে পারে না, শুধু পারে মানুষের রক্তচুষে খেতে। এটাই হচ্ছে বা¯ত্মবতা। বিচার পাওয়ার অধিকার আমার ছিল না। বাবা-মা-ভাই সবাইকে হারিয়েছি। তারপরও এ বাংলায় ফিরে এসেছি। বাংলার মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করাই ছিল আমার লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের পর জয় বাংলা ¯েস্নাগান নিষিদ্ধ ছিল। একের পর এক ক্যু হয়েছে। এর সঙ্গে জিয়া- মোশতাক সবাই জড়িত। জিয়া-মো¯ত্মাক সবাই খুনি। আমি বিচার চাইতে পারিনি। তারপরও সবকিছু মাথায় নিয়ে ফিরে এসেছি একটাই কারণে, এই জাতির পিতা আমার পিতা সারাজীবন সংগ্রাম করেছে। সেজন্য আমার লক্ষ্য ছিল, এই দেশের মানুষের জন্য কিছু করা। বার বার ক্ষমতায় এসেছি বলেই উন্নয়ন করা সম্ভব হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কমিউনিটি ক্লিনিক করেছে। সেখানে বিনা পয়সায় ৩০ ধরনের ওষুধ পাওয়া যায়। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। বিএনপি দিয়েছে অস্ত্র, খুন, হত্যা। শুধু হত্যা আর খুন ছাড়া কিছু দিতে পারেনি বিএনপি। মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছে। জিয়া যখন মারা যায়, কিছু রেখে যায়নি। ভাঙা বাক্স আর ছেঁড়া গেঞ্জি ছাড়া।
তিনি আরও বলেন, আজকে তারেক জিয়া সাজাপ্রাপ্ত আসামি। দেশের টাকা বিদেশে পাচার করেছে। সেজন্য তার সাজা হয়েছে। অস্ত্র চোরাকারবারি করতে গিয়ে দশ ট্রাক অস্ত্র ধরা খেয়েছে, সেখানেও তার সাজা হয়েছে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করে আমিসহ নেতাকর্মীদের হত্যা করতে চেয়েছে। আর খালেদা জিয়া এতিমের টাকা মেরে আজ সাজাপ্রাপ্ত। আর সাজাপ্রাপ্ত নেতা জনগণকে কী দেবে? তারা কিছুই দিতে পারে না, শুধু রক্তচুষে খেতে পারে।
সরকারপ্রধান বলেন, যশোরে বিএনপি উন্নয়নের কিছুই করেনি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে করেছে। ’৭৫ এর পর এদেশের আর কোনো উন্নয়ন হয়নি। আ.লীগ মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। পদ্মা সেতু থেকে যেন যশোর আসতে পারে সেই রেললাইনের কাজ চলছে।
নির্বাচনে যশোরের সবকটি আসন থেকে নির্বাচিত করায় যশোরের মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, দেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হবে। সেখানে যুবকদের অনেক কর্মসংস্থান হবে। যুবকদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সেখান থেকে বিনা জামানতে ৩ লাখ টাকা ঋণ পাওয়া যায়। এটা নিয়ে নিজেরাই ব্যবসা করতে পারবে। এখনকার যুগে কেউ বেকার থাকবে না। কিছু না কিছু করতে পারবে। সেই সুযোগটা আওয়ামী লীগ সরকার করে দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো দেশ করোনা ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেয়নি। আমি দিয়েছি। এই করোনা মোকাবিলার জন্য বিশেষ বিমান পাঠিয়ে কোটি কোটি টাকা খরচ করে সামগ্রী এনেছি। রিজার্ভ মানুষের কাজে লেগেছে। যে গম ২০০ ডলারে কিনতাম, তা এখন ৬শ ডলার। যুদ্ধ আর নিষেধাজ্ঞার কারণে। তারপরও আমরা কিনে এনেছি, যাতে খাদ্য ঘাটতি না দেখা দেয়। এজন্য আমি জমি অনাবাদি না রেখে উৎপাদন করার কথা বলেছি।
‘দেশের একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না বলে জাতির পিতা যে প্রকল্প শুরম্ন করেছিলেন, তাঁর সেই পথ ধরে সারাদেশে গৃহহীনদের তালিকা করে জমিসহ ঘর করে দিয়েছি বিনা পয়সায়। প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ এই ঘর পেয়েছে যাদের কোনো ঠিকানা ছিল না। এটা তাদের জীবন পাল্টে দিয়েছে। এই দেশের কোনো মানুষ ঠিকানাবিহীন থাকবে না। যে বাংলাদেশে খালেদা জিয়া রেখে গিয়েছিল ৪০ ভাগ দারিদ্র্যতার হার, এটা আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। যে হতদরিদ্র ২৫ ভাগ ছিল, তা আমরা ১০ ভাগে নামিয়ে এনেছি।
তিনি বলেন, যশোরে ভবদহ জলাবদ্ধতা দূর করার প্রকল্প শেষ হয়েছে। এবার আমরা দ্বিতীয় প্রকল্প হাতে নিয়েছি। এর ফলে যশোর, খুলনা ও সাতক্ষীরার জলাবদ্ধতা দূর হবে। ৮২ কিলোমিটার নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে কাজ হাতে নিয়েছি। কপোতাক্ষের মতো ভবদহে জলাবদ্ধতা যেন না থাকে, সেই বিষয়েও আমরা পদক্ষেপ নেবো। যশোরে মেডিকেল কলেজ হয়েছে; ৫শ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।
এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোর বিমান ঘাঁটিতে বিমান বাহিনীর একটি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। এরপর দুপুর ২টা ৩৮ মিনিটে যশোর শামস- উল- হুদা স্টেডিয়ামে জনসভা মঞ্চে আসেন। মঞ্চে উঠে তিনি হাত নেড়ে নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানান। এ সময় উচ্ছ্বসিত নেতাকর্মীরা শেস্নাগানে শেস্নাগানে গোটা এলাকা মুখরিত করে তোলেন।
এর আগে দুপুর ১২টা ২২ মিনিটে সমাবেশ শুরম্ন হয়। বিকেল ৩টা ১৫ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাখো জনতার উদ্দেশে ভাষণ দেন। ৩৫ মিনিটের ভাষণে তিনি দেশের নানা উন্নয়নচিত্র; অতীত ও বর্তমান পরিস্থিতি তুলে ধরেন।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার এমপির পরিচালনায় জনসভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বাগেরহাট-১ (চিতলমারী, মোলস্নাহাট, ফকিরহাট) আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, পিযুষ কাšিত্ম ভট্টাচার্য্য, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সারহান নাসের তন্ময়, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়–য়া, সামছুন্নাহার চাপা, কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মো¯ত্মফা জালাল মহিউদ্দিন, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য আমিরম্নল আলম মিলন, শরিয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ইকবাল হাসান অপু, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সদস্য পারভিন জামান, কুষ্টিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সদর উদ্দিন খান, ঝিনাইদাহ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাঈদুল করিম মিন্টু, নড়াইল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন খান নীলু, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, যশোর-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন, পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম, স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য, যশোর-৩ সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহম্মেদ, যশোর-২ আসনের সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন, ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু, যুব মহিলা লীগ সভাপতি নাজমা খানম প্রমুখ।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
Fri Sat Sun Mon Tue Wed Thu
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram