মনিরুজ্জামান মনির : খোলা বাজার (ওএমএস) ও খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় যশোরের ৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ স্বল্পমূল্যে চাল ও আটা কিনতে পারছে। খোলা বাজারে লাইনে দাঁড়িয়ে ৩০ টাকা কেজি চাল ও ২৪ টাকা কেজি দরে আটা কিনছেন তিন লাখের বেশি মানুষ। আর খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় জেলার এক লাখ ৪০ হাজার ব্যক্তি ১৫ টাকা কেজি দরে প্রতি দু’মাসে একবার ৩০ কেজি চাল পাচ্ছে। তবে অতিরিক্ত চাপের কারণে ওএমএসের চাল কেনার সময় কিছুটা বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
স্বামীহারা দুই সšত্মানের জননী রাশিদা ওএমএসের চালের জন্য ঝুমঝুমপুরে ডিলারের দোকানের সামনে আসেন ভোর ৪টায়। তখনও ফজরের আজান দেয়ার ঘণ্টা বাকি। এরই মধ্যে দেখেন বেশ কয়েকজন লাইনে আছেন। কেউ কেউ ইট ও প্যাকেট রেখে লাইনের জায়গা দখল করে আছেন। ডিলার দোকান খোলেন সকাল ৯টার পর। আর তিনি ৬ ঘণ্টা অপেড়্গার পর সকাল ১০ টায় চাল পান। তার ভাষায়, এ চালে আমার হবে না, কিন্তু বাড়িতে ছোট দুই বাচ্চা রেখে প্রতিদিন লাইনে এসে দাঁড়ানোও সম্ভব না। তাছাড়া এখানে কয়েকজন মহিলা দালাল আছে, যারা জায়গা ধরে বিক্রি করে। আর দালালদের কারণে আমাদের পেছনে পড়তে হয়।’
রাশিদার মত অনেকেই প্রয়োজনে বাজারের থলে হাতে দাঁড়াচ্ছেন ওএমএসের লাইনে। খাদ্য বিভাগের তথ্য মতে যশোর জেলায় ৪২ জন ডিলারের মাধ্যমে ৩০ টাকা দামে চাল এবং ২৪ টাকা দামে আটা বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে ৭৬ হাজার কেজি চাল ও আটা। সরকারি ছুটির দিন ছাড়া সপ্তাহে ৫ দিনেই বিতরণ হয়ে থাকে। যশোরে প্রতিদিন ১৫ হাজার ২০০ জন ৫ কেজি করে চাল অথবা আটা পাচ্ছেন। এ হিসাবে মাসে তিন লাখেরও বেশি মানুষ ওএমএসের সুবিধা পাচ্ছে। যশোর সদর ও পৌরসভায় ওএমএসের চাল বরাদ্দ ১১ হাজার কেজি এবং আটাও বরাদ্দ ১১ হাজার কেজি। এ চাল ও আটা ১৪ জন ডিলার বিতরণ করছেন। প্রতি ডিলার পাচ্ছেন ৭৮৫ কেজি চাল এবং ৭৮৫ কেজি আটা। সদর পৌরসভা বাদে অন্য উপজেলাতে ২৬ জন ডিলারের মাধ্যমে ২৫ হাজার কেজি চাল এবং ২৫ হাজার কেজি আটা বিক্রি করা হচ্ছে। শুধুমাত্র শার্শা উপজেলাতে ২ জন ডিলারের মাধ্যমে ২ হাজার কেজি চাল এবং ২ হাজার কেজি আটা বিক্রি হয়। এর বাইরে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় দরিদ্র অসহায় পরিবারের সদস্যরা কার্ডের মাধ্যমে ১৫ টাকা কেজি দরে প্রতি দুই মাসে ৩০ কেজি চাল পাচ্ছেন। জেলায় ৯৩টি ইউনিয়নে ২৬৪ জন ডিলারের মাধ্যমে ১লাখ ৩৫ হাজার ১৩২ জন ১৫ টাকা কেজি চাল পাচ্ছেন।
চাল নিতে আসা মনোয়ারা বেগম জানান, ‘চালের জন্য আমরা ফজরের আগে আসি। তারপরেও আগে সিরিয়াল পাই না। কয়েকজন মহিলা দালাল লাইনের প্রথমে ইট পেতে রাখে। যার কারণে আগে আসলেও লাইনের প্রথমে দাঁড়াতে পারি না। ৩ দিন এসে ফিরে গেছি।’
ভোক্তা সুফিয়া বেগম জানান, এই টোকেন অনেকের ভাগ্যে মেলে না। আর যারা টোকেন পায় তারা সবাই চাল পায়। আমার পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচজন। এ চালে অনেক সাশ্রয় হয়। গরিবের জন্য সরকার খুব ভালো কাজ করেছে।
ডিলার রবিউল ইসলাম জানান, ‘টোকেন দেওয়া হয় ৩১৪ জনের, কিন্তু ৪-৫শ লোক হয় যে কারণে শেষের দিকে আড়াই কেজি করে চাল দিয়ে থাকি। এখানে চাল ও আটার জন্য রাত ৪ টায়ও লোক চলে আসে। চাল, আটার পরিমাণ লোকের তুলনায় অনেক কম, পরিমাণে আরো বেশি হলে ভালো হতো।’
ডিলার নিতাই চন্দ্র জানান, ‘চাল ও আটা প্রায় শেষ পর্যায়ে। লাইনে অনেক লোক। তাই ৩ কেজি করে চাল দিচ্ছি। চালের পরিমাণ বাড়ালে আমরাও সবাইকে দিতে পারতাম। ’
ডিলার তোঁতা মিয়ার ভাগ্নে টিটো জানান, লাইনে ৪-৫শ লোক দাঁড়ায়। আমি সাড়ে ৮টায় দোকান খুলে ৩১৪টি টোকেন লাইনের লোকের হাতে দিয়ে থাকি। এখানে টোকেন ছাড়া কাওকে চাল, আটা দেওয়া হয় না।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুন্ডু জানান, আমরা ওএমএসে চাল আটা বিক্রি যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় সেজন্য ১৪টি পয়েন্টে ১৩জন তদারককারী নিযুক্ত করেছি। লাইনের মাধ্যমে ৩শ ১৪টি টোকেন হাতে দেওয়ার পরে ভোক্তাদের কাছে চাল ও আটা বিক্রি করা হয়। খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে সার্বড়্গণিক মনিটরিং হয়। এখানে কোনো প্রকার চুরি বা আত¥সাতের সুযোগ নেই। যদি কেউ অনিয়ম করে এমন অভিযোগ প্রমাণিত হলে সাথে সাথে তাদের ডিলারশিপ বাতিল করা হবে। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কড়া নির্দেশনা রয়েছে একজন ব্যক্তি চাল নিলে সে আর আটা পাবে না।