আগামীকাল থেকে শীতের তীব্রতা কমার পূর্বাভাস
সমাজের কথা ডেস্ক : পৌষের শীতে কাঁপছে সারা দেশ। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে দেশের ভিন্ন ভিন্ন অঞ্চলে শুরম্ন হয় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। জানুয়ারির শুরম্ন থেকে শীতের দাপট বাড়তে থাকে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, শীতের এমন তীব্র অনুভুতি কাল রোববার থেকে কমতে শুরম্ন করবে। গত মঙ্গলবার একদিনে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা ৪ থেকে ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমে যায়।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, শুক্রবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশের পাঁচ জেলায় সর্বনি¤্ন তাপমাত্রা ছিল ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। জেলাগুলো হলো নওগাঁ, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, যশোর ও চুয়াডাঙ্গা। আবহাওয়াবিদদের ভাষায় এই অঞ্চলগুলোর ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে গতকাল দেশের সর্বনি¤্ন তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে মঙ্গলবার থেকে দিনের তাপমাত্রায় কিছুটা পরিবর্তন এসেছে রাজধানী ঢাকা ও এর পাশ্ববর্তী এলাকায়। ঢাকায় টানা চারদিন ধরে দিনের তাপমাত্রা রয়েছে ১৪ থেকে ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে। শুক্রবার দুপুর ১২টায় ঢাকার তাপমাত্রা ছিল ১৪ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ১৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসে আর্দ্রতা ছিল ৯১ ভাগ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, মৃদু শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে। মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে তাপমাত্রা হয় ৬ থেকে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শৈত্যপ্রবাহে ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয় তাপমাত্রা।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ‘সারা দেশ এখন কুয়াশার চাদরে ঢেকে আছে, যার ফলে সূর্যের আলোর অনুভূতি পাওয়া যাচ্ছে না, আবার দেখাও যাচ্ছে না।’
রোববার থেকে এই অবস্থার পরিবর্তন হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গতকাল কুয়াশা কাটতে প্রায় ৪টা বেজে গিয়েছিল। আজ (শুক্রবার) ৩টার পর পর কুয়াশা কেটে গেছে। কাল আর একটু এগিয়ে আসবে। এভাবে আশা করি রোববারের মধ্যে তীব্র শীতের অনুভূতি কমে যাবে।’
নদী, পাহাড় ও পাশ্ববর্তী দেশ থেকে কুয়াশার কারণে দেশের সব জায়গায় দিন ও রাতের তাপমাত্রার পরিবর্তন হয়েছে। রাতে তাপমাত্রা কমতে থাকলেও দিনে কুয়ায়াশার কারণে সেটি বাড়তে পারে না। যার ফলে দেশের সব অঞ্চলেই তাপমাত্রা ২০ ডিগ্রির ঘরে আটকে আছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপমহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে
মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং এটি দেশের কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য কমে যাওয়ার কারণে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি থাকতে পারে।
চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি জানান, চুয়াডাঙ্গায় দেশের সর্বনি¤্ন ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। শুক্রবার (৬ জানুয়ারি) সকালে জেলার আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান এ তথ্য জানান।
তিনি জানান, দেশের সর্বনি¤্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে। তাপমাত্রা হ্রাস পাওয়ায় শীতের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতি থাকবে দু-এক দিন। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলেও জানান তিনি।
এদিকে চুয়াডাঙ্গায় হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্য¯ত্ম স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও অতিদরিদ্র মানুষের দুর্ভোগ চরমে। গতকাল চুয়াডাঙ্গায় চারদিন পরে সূর্যের দেখা মিললে শীতের তীব্রতা কিছুটা কমে আসে। যাতে বেড়েছে শীত ও ছিন্নমূল মানুষের কষ্ট। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আজও সূর্যের দেখা মিললেও শৈত্যপ্রবাহের কারণে কমেনি শীতের দাপট। ফলে আবার জনজীবনে স্থবিরতা নেমে বেকায়দায় রয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ।
শহরের রিকশাচালক মাসুম বলেন, ঠান্ডার জন্য রিকশা চালানো যাচ্ছে না। হাত-পায়ের পাতা মনে হচ্ছে বরফ হয়ে যাচ্ছে। পেটের দায়ে বাড়ি থেকে বের হলেও প্যাসেঞ্জার পাওয়া যাচ্ছে না। গতকাল শীত কিছুটা কমেছিলো কিন্তু আজ আবার শীত পড়ছে।
দিনমজুর কাশেম আলী বলেন, একদিন পরেই আবার শীত বেড়েছে। আজও কাজ পায়নি। এভাবে চললে আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে।
ইউসুফ নামের এক কৃষক বলেন, ভোরে কাজে যেতে পারিনি। এভাবে ঠান্ডা পড়লে কাজে যাওয়া সম্ভব হবেনা। ফসলের ঠিকমতো পরিচর্যা করা সম্ভব হচ্ছে না।
এদিকে শীতজনিত কারণে হাসপাতালগুলোতে নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধরা। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ১৩টি বেডের বিপরীতে ভর্তি রয়েছে ৫০ জন। অপরদিকে প্রতিদিন ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগী ভর্তি হচ্ছে শতাধিক।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন জানান, তীব্র শীতে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়াসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে হাসপাতালের আউটডোরে প্রচুর রোগী চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া প্রতিদিন তিন থেকে চারশ শিশু আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছে। শীতজনিত কারণে নিউমোনিয়া রোগী সংখ্যাও বাড়ছে।
তালা (সাতড়্গীরা) প্রতিনিধি জানান, পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে সারা দেশের ন্যায় কাঁপছে দেশের দড়্গণি-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা সাতক্ষীরা। তালাসহ জেলার সব উপজেলায় কনকনে শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে সব শ্রেণির মানুষ। শীতের সাথে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহে শীতের তীব্রতা অধিক বেড়েছে। গত কয়েক দিন থেকে সূর্যের ঠিকমতো দেখা পাওয়া যাচ্ছেনা। দিনের অধিকাংশ সময় ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়ায় বিপর্য¯ত্ম হয়ে পড়েছে জনজীবন। কৃষি কাজ থেকে শুরম্ন করে অফিস ও ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে এসেছে। তীব্র শীতে দরিদ্র ও হতদরিদ্র মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে।
গত কয়েকদিন সূর্যের দেখা না মিললেও শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে তালায় সূর্যের মুখ দেখা যায়। তাতেও শীতের তীব্রতা কমেনি। বিকেলে সূর্যের আলো কমে গেলে শীতের কারণে দরিদ্র ও ছিন্নমূল মানুষের চরম ভোগাšিত্ম বাড়ে। জেঁকেবসা এই শীত থেকে রড়্গা পাওয়ার জন্যে তালাসহ জেলার মার্কেট ও ফুটপাতের দোকানগুলোতে গরম পোশাকের কদর বেড়েছে। কিন্তু পোশাকের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে দ্বিগুণের বেশি। ফলে নি¤্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো গরম পোশাক কেনার ড়্গমতা হারিয়ে ফেলেছে। শীত এবং শৈত্য প্রবাহে ব্যাপকভাবে ভোগাšিত্মর মধ্যে বানভাসী ও নদী সংলগ্ন এলাকার ছিন্নমূল মানুষ। সকাল ও রাতে অনেক স্থানে যুবক ও বয়স্কদের খুড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা চালাতে দেখা যাচ্ছে।
এদিকে, সাতড়্গীরা আবহাওয়া অফিস বলছে, শীতের তীব্রতা সহসা কমছে না, শৈত্য প্রবাহ এখনও ২/৩দিন থাকবে। আবহাওয়া অফিসের উচ্চ পর্যবেক্ষক মাজেদুল হক জানান, পরপর ২দিন বৃহত্তর যশোর অঞ্চলে দেশের সর্ব নি¤্ন তাপমাত্রা চলছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরায় সর্বনি¤্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৫ ডিগ্রি সেলিসিয়াস।