মনিরুজ্জামান মনির : ঋতুচক্রে এখন হেমšত্মকাল হলেও হিম হিম অনুভূতি জানান দিচ্ছে শীত এসে গেছে। বিশেষ করে ভোররাতে ও সন্ধ্যায় হিমেল হাওয়ায় শীত অনুভুত হচ্ছে। এজন্য শহরের মার্কেটগুলোতেও বাড়ছে শীতবস্ত্রের কদর । শহরের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে শীতের অনুভূতি আরো বেশি।
এদিকে শীত পড়তে শুরম্ন করায় শীতের কাপড় বিক্রিও বেড়েছ। ক্রেতারা পছন্দের পোশাক কিনতে র্মাকেটগুলোতে যাচ্ছেন। বিক্রেতারা জানান, শীতের কাপড় বিক্রি শুরম্ন হয়েছে বেশ আগ থেকেই। ফুটপাত থেকে শুরম্ন করে অভিজাত শপিং সেন্টারেও প্রায় একই দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ক্রেতারা পছন্দের জ্যাকেট, সোয়েটারসহ ও বিভিন্ন ধরনের গরম পোশাক দেখছেন। তবে বরাবরের মত শহরের কালেক্টরেট মসজিদ মার্কেট ও টাউন হল মার্কেটের পুরাতন বস্ত্রের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় তুলনামূলক বেশি।
বিক্রেতারা বলছেন, গত বছর করোনাভাইরাসের কারণে বেচাবিক্রি তেমন একটা জমেনি। অনেকের পুরোনো কাপড় রয়ে গেছে। সেগুলোই আবারো বিক্রির জন্য এনেছেন। বাজার ঘুরে দেখা গেছে ক্রেতারা দাম কমের দিকেই ঝুঁকছেন বেশি। গত বছরের তুলনায় এ বছর সব জিনিসের মূল্য বেড়েছে। এবার শীতবস্ত্রের দামও বেড়েছে। যশোরের ব্যবসায়ীরা প্রতিবছর হেমšেত্মর শুরম্নতে মৌসুমী শীতবস্ত্র চট্টগ্রামের আমিন মার্কেট থেকে বেল হিসেবে নিয়ে আসেন। গত বছরের তুলনায় প্রতিটি বেলে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কিনতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা। যার কারণে পুরাতন শীতবস্ত্রের বাজারে ক্রেতা বাড়লেও বিকিকিনি অনেক কম।
অভয়নগর থেকে যশোরে শীতবস্ত্র কিনতে আসা শারমিন আক্তার জানান, গতবছরের তুলনায় কাপড়ের দাম ৫শ থেকে ৬শ টাকা বেড়েছে। দুটি কম্বল কিনতে চেয়েও দামের সাথে পারছি না। ক্রেতা রেহেনা পারভিন জানান, আগের থেকে সব জিনিসের দাম অনেক বেশি। গতবছর যে কম্বলের দাম ছিলো ৩ হাজার ৩শ টাকা। সে কম্বল এ বছর কিনতে হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। সব জিনিসই আমাদের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে।
ক্রেতা ফেরদৌসী আরা শিল্পী জানান, বাচ্চাদের জন্য কাপড় কিনতে এসেছি। কিন্তু কোনোভাবেই তা মিলাতে পারছি না এবং যেটা পছন্দ হচ্ছে সেটার দাম বলছে অনেক বেশি।
কালেক্টরেট মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক নেছার আহম্মেদ মুন্না জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রতিটা ব্রান্ডের জিনিসে ৫শ থেকে ১হাজার টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দুই বছর করোনাভাইরাসের কারণে কেনাবেচা অনেকটাই কম ছিল। কিন্তু এ বছর প্রতিটা জিনিসের দাম বৃদ্ধি হওয়ার কারণে ক্রেতারা পছন্দমত কিনতে পারছে না। তারপরেও আশা করি ভালো বেচাকেনা হবে।
বিক্রেতা কৃষ্ণচন্দ্র দাস জানান, গত বছর যে জ্যাকেটের বেলের দাম ছিল ১৮ হাজার টাকা সেই বেল এ বছর ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা। ছোট বাচ্চাদের জ্যাকেটের বেলের দাম ছিলো ৯ হাজার টাকা এখন ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা। বেবি স্যুটের বেল ছিল ৭ হাজার টাকা সেই বেল হয়েছে ১০ হাজার টাকা। যে কম্বলের বেলের দাম ছিল ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকা এখন কিনতে হচ্ছে ১৮ থেকে ১৯ হাজার টাকায়। আর বাছাইকৃত কম্বলের বেল আগে কিনতাম ৩২ হাজার টাকায় এ বছর সেই কম্বলের বেল কিনতে হচ্ছে ৩৭ হাজার টাকায়।
বিক্রেতা আবদার ফারম্নক জানান, এ বছর আমাদের অনেক বেশি টাকা দিয়ে মাল কিনতে হচ্ছে। গতবছরের তুলনায় তেলের দাম বাড়ায় গাড়িভাড়া এবং লেবার খরচ হচ্ছে অনেক বেশি। তাই আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। ক্রেতারা শীতবস্ত্র দেখছে কিন্তু দামাদামিতে মিলছে না যার কারণে বেচাকেনা অনেক কম হচ্ছে। গত দুই দিন শীত বৃদ্ধি পাওয়ায় একটু বেচাকেনা বেড়েছে।
বিক্রেতা শরিফুুল ইসলাম বাবু জানান, শীত উপলক্ষে এখনো তেমন বেচাকেনা শুরম্ন হয়নি। তবে একটু একটু করে বেচাকেনা বাড়ছে।
বিক্রেতা শেখ সালাউদ্দিন মিঠু জানান, এ বছর সব জিনিসের অতিরিক্ত মাত্রায় দাম বাড়ার কারণে বেশিরভাগ ক্রেতারা দেখে দেখে চলে যাচ্ছেন।
বাজার কমিটির সভাপতি মঈনুদ্দিন টেনিয়া জানান, এ বছর তেলের দাম বৃদ্ধি এবং ডলারের দামও বেড়েছে। যার কারণে বাংলাদেশেও সম¯ত্ম দ্রব্যমূল্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। শুধু শীতবস্ত্র না প্রতিটা কাপড়ের দাম বেশি। ঢাকা এবং চট্টগ্রামের পাইকারি মার্কেটেই কাপড়ের বেল প্রতি ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা বেশি হয়েছে। যার কারণে আমাদেরও বেচাকেনা করতে হচ্ছে বেশি দামে। ব্যবসায়ীদের আশা শীত বাড়লে বিকিকিনি বাড়বে।