ইমরান হোসেন পিংকু : মধ্য পৌষে মৌসুমের সবচেয়ে দাপুটে শীত দেখলো যশোরবাসী। মঙ্গলবার সূর্যোদ্বয় ও সূর্যাস্ত দেখতে হয়েছে ঘড়িতে। সরাদিন ঘন কুয়াশার আড়ালে ছিল সূর্য। উত্তরী হাওয়ায় প্রাণিক’ল কেঁপেছে থরথর। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টির মতো ঝিরঝির করে পড়তে থাকে কুয়াশা বৃষ্টি। শীতের তীব্রতা বাড়ায় বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া ও নি¤œ আয়ের মানুষ।
যশোরে গত তিন-চারদিন প্রচন্ড কুয়াশা ও হিমেল হাওয়া বইছে। দুপুরে সূর্যের দেখা মিললেও রোদের তাপমাত্রা ছিল কম। তবে মঙ্গলবার সূর্যের দেখা মেলেনি। দুর্ঘটনার এড়াতে দিনেও স্থানীয়সহ দূরপাল্লার যানবাহন চলছে হেডলাইট জ্বালিয়ে।
যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, মঙ্গলবার দুপুরে যশোরের তাপমাত্রা ছিল ১৫.২ সেলসিয়াস। জেলার সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ১২.২ সেলসিয়াস। সকাল থেকে মৃদু মৃদু বাতাস বইছে। আবহাওয়া বিষয়ক ওয়েবসাইট অ্যাকুওয়েদার জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১২টায় যশোরের সর্বনিম্ম তাপমাত্রা ছিল ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বুধবার সকাল ৬টায় তাপমাত্রা কমে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নামতে পারে।
হঠাৎ হাড়কাঁপানো এ তীব্র শীতে দুর্ভোগে পড়েছেন নানা বয়স ও শ্রেণি-পেশার মানুষ। বেলা বাড়লেও ঘর থেকে বের হতে বেগ পেতে হচ্ছে তাদের।
তীব্র শীতে কাহিল হয়ে পড়ছে জনজীবন। শহরের ধর্মতলা এলাকার রিকশা চালক জয়নাল আলী বলেন, গত তিন চার দিন যে পরিমাণ শীত পড়ছে; তাতে বাইরে রিকশা চালানো কষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমার সাথে রিকশা চালাতো কামাল হোসেন নামে একজন। সে গত দুই দিন জ্বর সর্দি কাশিতে আক্রান্ত হয়েছে। আমি যদি কামালের মতো অসুস্থ হয়ে ঘরে শুয়ে থাকি; তাহলে বাল-বাচ্চাদের পেটের ভাত জুটবে না। '
শহরের কাজীপাড়া এলাকার নুরুল ইসলাম বলেন, 'আজ সকাল থেকে যে কুয়াশা পড়েছে এবং যে শৈতপ্রবাহ বইছে তাতে বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে বের হতে ভাবতে হচ্ছে। ঠান্ডা লেগে যেতে পারে।'
এদিকে শীতের তীব্রতা বৃদ্ধির ফলে ঠান্ডাজনিত রোগের প্রকোপও বৃদ্ধি পাচ্ছে। হাঁচি-কাশিসহ কোল্ড ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। অপর দিকে শীতের কারণে সারাদিনই গরম পোশাক পরে মানুষজনকে ঘুরতে দেখা যায়। শীতকালীন রোগবালাই থেকে রক্ষা পেতে গরম পানি পান করাসহ গরম কাপড় ব্যবাহারের জন্য পরামর্শ দিচ্ছে চিকিৎসকরা।
এদিকে তীব্র শীতে কদর বেড়েছে গরম কাপড়ের। শীত নিবারণে মানুষ ছুটছে গরম কাপড়ের খোঁজে। গতকাল শহরের পুরনো মার্কেট ও কালেক্টরেট মার্কেটে ছিল ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। পুরনো কাপড় মাকের্টের ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম, বাবু রহমান ও মিঠু বলেন, ‘গত দুই দিন প্রচুর পরিমাণে বেলভাঙ্গা কাপড় বিক্রি হচ্ছে। মধ্যবৃত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষের গরম কাপড়ে চাহিদা বেশি।’
সদর উপজেলার চুড়মনকাটি ইউনিয়নের আবদুলপুর গ্রামের কৃষক আমিন উদ্দিন বলেন, ‘দুই দিন থেকে গায়ে প্রচন্ড জ্বর। তারপরেও ঠান্ডায় মাঠে আসতে হয়েছে শুধু পেটের দায়ে। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না।’
ক্ষেতে কাজ করা শ্রমিক আফজাল আলী বলেন (৬০) বলেন, দুই-তিনদিন শীত খুবই বেশি। দুপুর হয়ে গেলেও সূর্যের দেখা নেই। আমরা গরিব মানুষ কাজ করে খেতে হয়। তাই যতই কষ্ট হোক, আমাদের মাঠে কাজ করতেই হবে। শুনছি সরকার অনেককে গরম কাপড় দিচ্ছে। এমপি, চেয়ারম্যান ও মেম্বরা গরম কাপড়ের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে আমাদের উপকার হতো।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মুহাম্মদ রিজিবুল ইসলাম বলেন, জেলাতে সরকারি ভাবে ৪৯৫০০ কম্বল এসেছে। কম্বল বিতরণ প্রায় শেষের দিকে। নতুন করে বরাদ্দের জন্য প্রক্রিয়া চলছে দ্রুত আরও কম্বল আসবে।’
যশোর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রফিকুল হাসান বলেন, কয়েক দিন ধরে প্রচন্ড শীত পড়ছে। এতে সাধারণ মানুষে কষ্ট বেড়েছে। আমরা শীতার্ত মানুষে পাশে আছি।’