নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ যুদ্ধ জয়ের ২৪ দিন পর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি নিজের স্বপ্নের স্বাধীন দেশে পা রেখেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তখন থেকে দিনটি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হিসেবে পালিত হলেও এবার আয়োজনে ভিন্ন আঙ্গিক নিয়ে এসেছে ‘মুজিববর্ষ’। বেঁচে থাকলে এই বছরই ১০০ বছর পূর্ণ করতেন জাতির জনক। আর তাই তাঁর জন্মশতবার্ষিকী ঘটা করে উদযাপনের যে পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে গতকাল থেকে সেটার ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে।
তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে ৪৮ বছর আগে জাতির জনকের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী মঞ্চায়নের সাথে গতকাল যুক্ত হয়েছিল যশোরও। এ জেলার মানুষ যশোর শহরের টাউন হল ময়দানে ভিডিও কনফারেন্সের কল্যাণে বড় পর্দায় জাতির পিতার প্রতীকী দেশে ফেরা অবলোকন করেন। বঙ্গবন্ধু যে আলোকবর্তিকা হয়ে সেদিন দেশে ফিরেছিলেন, তারই প্রতীকী উপস্থাপনা নতুন প্রজন্মকে আন্দোলিত করে। গভীর মনোযোগে জাতির পিতার প্রতীকী দেশে ফেরার দৃশ্য পর্দায় দেখেন হাজার হাজার মানুষ। এরপরই বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর ক্ষণগণনা উদ্বোধন করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সারা দেশের সাথে যশোরের টাউন হল ময়দানে স্থাপিত কাউন্টডাউন ক্লকও চালু হয়ে যায়। করতালি দিয়ে আনন্দ প্রকাশ করেন টাউন হল ময়দানের হাজার হাজার দর্শক। এর মধ্যে দিয়ে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি থেকে পৃথক হয়ে যায় যশোর। পরে যশোর প্রশাসনের নেওয়া কর্মসূচি শুরু হয়। বিকাল ৫ টার পরে হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে ‘সহ¯্র কণ্ঠে জাতীয় সংগীত ও শত কণ্ঠে জয় বাংলা গান’ পরিবেশন করা হয়।
সন্ধ্যায় যশোরের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনের যৌথ আয়োজনে রওশন আলী মঞ্চে কবিতা আবৃত্তি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই জেলা শিশু একাডেমির কর্মকর্তা সাধন কুমার দাস ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন। এর পরেই আবৃত্তি করেন শ্রাবণী সুর, শামীম আহসান, শীলা দাস, হারুন অর রশিদ, মিনারা খন্দকার, জাহিদুল ইসলাম যাদু, কাজী শাহেদ নওয়াজ। সঙ্গীত পরিবেশন করেন সুকুমার দাস, রফিকুল হোসেন, অনুপম দাস, সুরধুনী সংগীত নিকেতন, সুরবিতান, পুনশ্চ যশোর, উদীচী যশোরের শিল্পীরা। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে শেকড়, নৃত্যবিতান, চাঁদের হাট ও ভৈরব যশোর।
এর আগে দুপুরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’র জন্মশতবার্ষিকী’র ক্ষণগণনার উদ্বোধন ও স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়। র্যালিটি শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের বকুলতলা বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে বঙ্গবন্ধু ম্যুরালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। ম্যুরালে শ্রদ্ধা জানান, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, যশোরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, পুলিশ সুপার আশরাফ উদ্দীন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহিত কুমার নাথ ও সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম মাহমুদ হাসান বিপু, জেলা পরিষদ যশোর, যশোর পৌরসভা, যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক, জেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ, জাতীয় মহিলা সংস্থা যশোর শাখা, গণপূর্ত বিভাগ, সামাজিক বন অঞ্চল যশোর, জেলা পরিবেশ অধিদপ্তর, যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ড, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড যশোর, মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, বিসিক যশোর, জেলা আনসার ও ভিডিপি, জেলা শ্রমিক লীগসহ সামাজিক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ।
এদিকে বিকালে যশোর টাউনহল ময়দানে মুজিব বর্ষের ক্ষণগণনা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন, যশোর-৩ আসনের সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ, পুলিশ সুপার আশরাফ উদ্দীন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা একেএম খয়রাত হোসেন, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আলী রায়হান, জেলা জাসদের সভাপতি অ্যাডভোকেট রবিউল আলম, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সাইফুজ্জামান পিকুল, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল আলীম, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা জেলা কমান্ডার রাজেক আহমেদ, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, জেলা আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা জেলা কমান্ড্যান্ট ড. লুৎফর রহমান, জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স সহকারী পরিচালক ওয়াদুদ হোসেন, জেলা শিক্ষা অফিসার এ এস এম আব্দুল খালেক, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার সেখ অহিদুল আলমসহ বিভিন্ন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, মুক্তিযোদ্ধা, সাংবাদিকবৃন্দ প্রমুখ।