সমাজের কথা ডেস্ক॥ আক্রমণাত্মক বাংলাদেশের সামনে শুরু থেকেই এলোমেলো হয়ে পড়ল মালয়েশিয়া। সাবিনা খাতুন-আঁখি খাতুনরা মেলে ধরলেন দৃষ্টিনন্দন ফুটবল। গোল করলেন একের পর এক। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৬১ ধাপ এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষকে ম্যাচ জুড়ে কোণঠাসা করে রেখে বড় জয়ের উৎসবে মাতল গোলাম রব্বানী ছোটনের দল।
কমলাপুরের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী মোস্তফা কামাল স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার প্রীতি ম্যাচে ৬-০ গোলে জিতেছে বাংলাদেশ। জোড়া গোল করেছেন আঁখি খাতুন; একটি করে গোল সাবিনা খাতুন, সিরাত জাহান স্বপ্না, মনিকা চাকমা ও কৃষ্ণা রানী সরকারের।
দারুণ এই জয়ে মধুর প্রতিশোধও নিল ছোটনের দল। সবশেষ ২০১৭ সালের দেখায় মালয়েশিয়ার কাছে ২-১ গোলে হেরেছিল বাংলাদেশ।
আগামী রোববার দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচে মুখোমুখি হবে দল দুটি।
প্রীতি ম্যাচ দুটি হওয়ার কথা ছিল সিলেট জেলা স্টেডিয়ামের ঘাসের মাঠে। সিলেটে বন্যার কারণে তা সরিয়ে আনা হয় কমলাপুরের টার্ফে। মালয়েশিয়া কোচ জ্যাকব জোসেফের সবচেয়ে বড় চাওয়া ছিল, টার্ফে খেলতে গিয়ে তার দলের কেউ যেন চোট না পায়।
কিক অফের পরই আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে মনিকা বাড়ান স্বপ্নাকে। এই ফরোয়ার্ডের কাট ব্যাকে সানজিদা খাতুনের শট আটকান গোলরক্ষক। তৃতীয় মিনিটে গোলের সহজ সুযোগ নষ্ট করেন সাবিনা। সানজিদার নিচু ক্রসে গোলমুখ থেকে অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ডের শট ক্রসবারের উপর দিয়ে যায়।
মালয়েশিয়ার রক্ষণে চাপ ধরে রেখে নবম মিনিটে গোল তুলে নেয় বাংলাদেশ। মারিয়া মান্দার কর্নারে গোলরক্ষক আজুরিন বিনতে মাজলান ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে গোলমুখ থেকে আলতো টোকায় বাকি কাজ সারেন আঁখি। বাংলাদেশের গোল উৎসবের সেই শুরু।
দ্বাদশ মিনিটে থ্রো ইনের পর প্রতিপক্ষের ভুল পাসে বল পেয়ে যান বক্সে ফাঁকায় থাকা সানজিদা। তাড়াহুড়ো করে ক্রসবারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মেরে হতাশ করেন তিনি।
ছয় মিনিট পর সানজিদার কোনাকুনি শট আটকান গোলরক্ষক, তার ফিরতি শটও যায় দূরের পোস্ট দিয়ে বেরিয়ে।
২৬তম মিনিটে সাবিনার দৃষ্টিনন্দন গোলে ব্যবধান হয় দ্বিগুণ। ডান দিক থেকে স্বপ্নার পাস ধরে সাবিনা ¯¬াইড করা গোলরক্ষককে কাটিয়ে কোনাকুনি শটে দূরের পোস্ট দিয়ে জাল খুঁজে নেন।
একটু পরই ম্যাচে চালকের আসনে বসে বাংলাদেশ। ছোট করে কর্নার নেওয়ার পর সাবিনা বক্সে লং পাস বাড়ান, দুই সতীর্থ হেড করতে ব্যর্থ হওয়ার পর আঁখির পে¬সিং শট ঠিকানা খুঁজে নেয়।
৩৬তম মিনিটে সতীর্থের ক্রসে নুর শাফিকা বিনতে জয়নালের শট যায় রুপনা চাকবা বরাবর। পোস্টে প্রথমার্ধে এটাই ছিল মালয়েশিয়ার প্রথম শট।
৪২তম মিনিটে সাবিনার শট ক্রসবারের উপরের দিকে লেগে বেরিয়ে যায়। বিরতির আগে মাশুরার লং পাস অফসাইডের ফাঁদ ভেঙে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সাবিনা আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান ফাঁকায় থাকা স্বপ্নাকে। অনায়াসে স্কোরলাইন ৪-০ করেন তিনি।
যোগ করা সময়ে কৃষ্ণার দূরপাল¬ার শট পোস্টে লেগে প্রতিহত হয়।
দ্বিতীয়ার্ধেও একইভাবে প্রেসিং ফুটবলের পসরা মেলে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। জুলাইয়ের এএফএফ কাপের প্রস্তুতি সারতে আসা মালয়েশিয়া ছিল কোণঠাসা।
৬৭তম মিনিটে ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেয় স্বাগতিকরা। সিতি নুরফাইজা গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করার পর আবার বল পেয়ে শুরুতে দুই বার ঠিকঠাক শট নিতে ব্যর্থ হন মনিকা। পরে জটলার ভেতর থেকে সুযোগসন্ধানী শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনিই।
সাত মিনিট পর ঋতুপর্না চাকমার ক্রসে কৃষ্ণার হেডে বল জালে জড়ালে বড় জয়ের পথে ছুটতে থাকে বাংলাদেশ।
এরপর খেলার গতি একটু একটু করে কমতে তাকে। বড় জয় অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে যাওয়ায় বাকি সময়ে মরিয়া ভাব ছিল না বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মাঝেও।