২রা এপ্রিল ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ১৯শে চৈত্র ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
বাংলা ভাষার প্রেমে ৫৯ বছর কাটিয়ে দিলেন রোজ
বাংলা ভাষার প্রেমে ৫৯ বছর কাটিয়ে দিলেন রোজ


মেহেরপুর প্রতিনিধি : জন্মগতভাবে ব্রিটিশ নাগরিক। মাতৃভাষা ইংরেজি হলেও বাংলার প্রেমে পড়ে দ্বিতীয় মাতৃভাষা তার বাংলা। বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষাকে ভালবেসে ৫৯ বছর ধরে সেবা দিয়ে চলেছেন জিলিয়ান এম রোজ। ১৯৬৪ সালে বাংলাদেশে আসেন এই ব্রিটিশ নাগরিক। এখন কথা বলেন বাংলায়, পরেন শাড়ি। ২১ শে ফেব্রুয়ারিতে শ্রদ্ধা জানান ভাষার জন্য জীবন দেওয়া শহীদদের।


১৯৬৪ সালে ২৫ বছর বয়সে ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ড ছেড়ে এ দেশে আসেন। বরিশালে কয়েক বছর থেকে নিজ দেশে ফিরে গেলেও ১৯৭৪ সালে বাংলার টানে আবারও চলে আসেন। ৪৯ বছর আগে সেবা দিতে মেহেরপুরের মুজিবনগর উপজেলার বলস্নভপুর মিশন হাসপাতালে যোগ দেন তিনি। পেশায় একজন নার্স জিলিয়ান এম রোজ। এদেশের প্রেমে পড়ে ৫৯টি বছর কাটিয়ে দিয়েছেন বাংলার মাটিতে। এই মাটিতেই না ফেরার শেষ ঠিকানাও চান তিনি।

সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিজ হাতে বিভিন্ন রোগীকে সেবা দিয়ে চলেছেন জিলিয়ান এম রোজ। অন্য দেশের নাগরিক হয়েও এ দেশের মানুষকে পরম মমতা ও যত্নে সেবা দিচ্ছেন তিনি। সবার কাছে প্রিয় মুখ এখন নিভৃতচারী রোজ। রোজের এখন একটিই- চাওয়া বাংলার মাটিতে শেষ বিদায়। তিনি নিজ উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন বৃদ্ধাশ্রম।

তার প্রত্যাশা বাংলাদেশ তাকে দ্বৈত নাগরিকত্ব দেবে। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া মানুষটি ৯২ বছরে পা রাখবেন।
বলস্নভপুর মিশন হাসপাতালের নার্স পাপিয়া মন্ডল বলেন, ‘সিস্টার রোজের সঙ্গে কাজ করতে খুব ভালো লাগে। দেখে মনে হয় না তিনি ভিনদেশী। প্রথমদিকে তার কথা বুঝতে সমস্যা হলেও এখন তিনি শুদ্ধভাবে বাংলা বলতে পারেন। যেকোন সমস্যায় তার কাছে সমধান পাওয়া যায়। এই এলাকার মানুষ তাকে মা হিসেবে ডাকে। রাত-দিন ২৪ ঘণ্টা তিনি সেবা দিয়ে চলেছেন। নিজের জন্য কোনও কিছু করেন না। আমরা তাকে নিয়ে গর্ব করি।’


বলস্নভপুর গ্রামের ইউপি সদস্য বাবুল মলিস্নক বলেন, ‘বয়স বাড়লেও সেবা দেওয়ার আগ্রহ একটুও কমেনি। সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যšত্ম রোগীদের সেবা দিতে তিনি সব সময় ব্যšত্ম। তার শেষ ইচ্ছে এই বাংলার মাটিতে তার সমাধি হোক। দেশ স্বাধীনের আগে থেকে তিনি এই বাংলাকে ভালোবেসে থেকে গেছেন। মিশন হাসপাতালে আসার পর তার পরিবার কয়েকবার তাকে নিজ দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য আসলেও ব্যর্থ হয়। সেবার মাঝে নিজের জীবনটা বিলিয়ে দিলেন তিনি।

লন্ডন থেকে পাওয়া পেনশন দিয়ে মিশন হাসপাতালে একটি বৃদ্ধাশ্রম চালান তিনি। গরিব রোগীদের ওষুধ কেনার টাকাও দেন এই মানুষটি। আমাদের দাবি তাকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দেওয়া হোক।’


বাগোয়ান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আয়ুব হোসেন বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে জিলিয়ান এম রোজ এই অঞ্চলের মানুষকে সেবা দিয়ে আসছেন। আমরা সরকারের কাছে আবেদন করছি তার দ্বৈত নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। তিনি নিজেও এই দেশের মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত থেকে যেতে চান। তার মৃত্যুর পর এই মুজিবনগরের মাটিতে সমাধির ইচ্ছার কথাও জিনিয়েছেন আমাদের। তার দ্বৈত্ব নাগরিকত্বের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবারও আবেদন করবো।’


মিস জিলিয়ান এম রোজ জানান, ‘১৯৬৪ সালে প্রথম বরিশালে এসে বাংলা ভাষা শিখেছি। বাংলা আমার দ্বিতীয় ভাষা হয়ে গেছে। আপনাদের দেশের মানুষ বাংলা ভাষার জন্য জীবন দিয়েছে এটা আমি জানি ও তাদের শ্রদ্ধা করি। প্রতি বছর ২১ শে ফেব্রম্নয়ারি এই মিশন হাসপাতাল চত্বরে মেয়েদের নিয়ে পালন করি। বাংলা ভাষায় কথা বলতে ভালো লাগে। বাংলাদেশ আমাকে সেবা দেওয়ার সুযোগ দিয়েছে, এজন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি একজন সেবিকা, আমার কাজ মানুষকে সেবা দেওয়া। যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন এভাবে সেবা দিয়ে যাবো।


দ্বৈত নাগরিকত্ব পেলে খুশি হতেন জানিয়ে বলেন, ‘কখনও বাংলাদেশ ছেড়ে লন্ডনে ফিরে গেলে কষ্ট হবে। বহুদিন ধরে এখানে আছি। আমি তো এদের সঙ্গে মিশে গেছি। বাংলাদেশে মারা গেলে আমাকে পাঠিয়ে দেবে কিনা বলতে পারি না। তবে বাংলার মাটিতে থাকার ইচ্ছা। অনেকদিন ধরে আছি এখানে। এ দেশের নাগরিকত্ব পেলে খুশি হতাম।’

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
Fri Sat Sun Mon Tue Wed Thu
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930  
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram