মনিরুজ্জামান মনির : ফাল্গুনের প্রথম দিনে প্রাণের উচ্ছ্বাসে বসন্ত বরণ করেছেন যশোরবাসী। প্রকৃতির পাশাপাশি দিনটি ঘিরে রঙিন সাজে সেজেছিলেন নানা বয়সী মানুষ। নানা আয়োজনের মধ্যে দিয়ে মঙ্গলবার সকাল থেকে এই জেলায় বসন্ত বরণ উৎসব ও ভালোবাসা দিবস পালিত হয়েছে।
এ উপলক্ষে সকালে যশোর পৌর পার্কে রক্তদান কর্মসূচি ও চিত্রাঙ্গন প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মনোয়ার হোসেন।
এসময় বক্তব্য রাখেন যশোর ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক ডা. আবুল কালাম আজাদ, প্রেস ক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, সদর উপজেলা মুক্তিযুদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দিপঙ্কর দাস রতন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হারুন অর রশিদ, স্বপ্ন দেখো সমাজকল্যাণ সংস্থার চেয়ারম্যান জহির ইকবাল নান্নু। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রক্তদান উৎসব-২০২৩ এর আহ্বায়ক অজয় দত্ত ও সদস্য সচিব গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস।
যশোর রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি, থ্যালোসেমিয়া ও হিমোফিলিয়া সমিতি, উৎসব কম্পিউটার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও আমার যশোরের যৌথ আয়োজনে দিনব্যাপী এ কর্মসূচিতে অর্ধশতাধিক ছাত্র-ছাত্রীসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ রক্তদান করেন। পরে অতিথিবৃন্দ চিত্রাংকন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। বিশ্ব ভালোবাসার শ্রেষ্ঠ উপায় হিসেবে সবাইকে রক্তদানে উৎসাহিত করতে এ কর্মসূচির আয়োজন করা হয় বলে জানান আয়োজকরা।
এদিকে বিকালে পৌর পার্কে উদীচী সংসদ যশোরের আয়োজনে এবং টাউন হলময়দানে বসন্ত উৎসবের আয়োজন করে। বিকাল থেকে রাত অবধি নৃত্যের ছন্দময় তালে সুরের মূর্ছনায়, আনন্দ দোলায় পৌর উদ্যান ও টাউন হল ময়দান গান-নাচের মধ্যে দিয়ে বসন্তকে বরণ করে নেয়া হয়। এছাড়া বাহারি ফুল ও রঙিন পোশাকে তরুণ-তরুণীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠে পৌর উদ্যান, কালেক্টরেট পার্ক, এম এম কলেজসহ বিনোদন স্থানগুলো।
যশোর পৌর উদ্যানের সবুজ চত্বরে নাচে, গানে, কথায় ও কবিতায় মাতিয়ে বরণ করেন বসন্তকে। অনুষ্ঠানে সমবেত গান করেন, আজি দখিন দুয়ার (রবীন্দ্র.), মধুর বসন্ত (মাইকেল), আশ্বিন ফাগুন মাসে (ইভা প্রিয়ন্তী, শ্রাবন্তী ও বুশরা), ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে (ছোটরা), আহা কি আনন্দ (ছোটরা), ওরে ভাই ফাগুন লেগেছে (বড়রা), বসন্ত এলো এলো (বড়রা)। বৃন্দআবৃত্তি করেন, আমার এ দেশ (ছোটরা)।
সমবেত নৃত্য করেন, ফাগুন হাওয়ায় (ছোটরা), দক্ষিণ পবনে (বড়রা), বিহুর লগনে (বড়রা), আজ ফাগুনে আগুন লাগে (বড়রা), কোকিলা আর ডাকিস না (বড়রা) ও প্রজাপতি প্রজাপতি (ছোটরা),আমি রূপনগরের রাজকন্যা (বড়রা)। একক গান করেন, এসো প্রিয় মন রাঙিয়ে সৃজিতা (নজরুল), বকুল ফুল বকুল ফুল মিতি (জলের গান), একক গান সখি তোরা প্রেম করিও না (প্রীতি), তুমি এসে আমার মনে (আঁচল), মহুয়ায় জমেছে আজ মৌ (নন্দিতা), তখন তোমার একুশ বছর (সমৃদ্ধি), আবার এলো যে সন্ধ্যা (শেখর), পথে চলতে পথে চলতে (সুব্রত), যেখানে সীমান্ত আমার (গোবিন্দ), বান্ধিলাম পীরিতের ঘর (নাহার), চলে আমার চান্দের গাড়ি (মুস্তাহিদ), আমারে আসিবার কথা (সুমন) এবং দ্বৈত গান করেন, তোমার ঘরে বাস করে (আদিতা ও জয়ী)।
পুনশ্চ যশোর যশোর টাউন হল মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করে। এখানে শিশুদের সমতে গান, গুচ্ছ গান এবং নৃত্য, কিশোর বিভাগের গুচ্ছগান এবং বড়দের গুচ্ছ গান পরিবেশন করা হয়।
অনুষ্ঠানে গান করেন, আহা কি আনন্দ আকাশে বাতাসে (আরোহী, অহনা, শীর্ষা, আরিশা রহমান, আরিশা জামান, স্বস্তি, রুদ্রানী), কোন মেস্তরী নাও বানাইছে (অশেষ, হিরা লাল, পরস, সূর্য, দিব্য, অভিরুপ, সস, উৎস), কালো জলে কুচলা তলে (রায়া, ছড়া, রাই, আদ্রিতা, শ্রেয়সী), মনের রঙ লেগেছে (ঐত্রী, তাথৈ, আরাধ্যা, দীক্ষা), বেলফুল এনে দাও (রিয়া, রোশনী, ছুটি), তোমার খোলা হাওয়া (অন্তরা, মৌমিতা, বিনিতা), সোহাগ চাঁদ বদনে (রিয়া, আবৃত্তি, পুষ্প, রোদেলা), মধু মালতী (প্রিয়ন্তী, তাথৈ) বকুল ফুল বকুল ফুল ( সুপর্বা, শর্মী, প্রীতিলতা), ময়না ছলাৎ ছলাৎ (ঝংকার, অর্ণিল, অর্পন, প্রদীপ্ত, অর্ঘ্য), রসুবর্তী রঙ্গবর্তী (টিসা, মিথি, মৌলি), আমার ফড়িং হয়ে (অঞ্জন, অমিয়) আইলো দারুন ফাগুন রে (পিংকী, মৌমিতা, শিখন), টাপাটানি (লাবন্য, গোপা, অর্থী, উর্বী) এবং শ্রুতি নাটক, (লিচু চোর) একক ও দ্বৈত গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের পর্দা নামে।