নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরে এক পল্লী চিকিৎসককে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে তুলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার দুপুরে প্রেস ক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ করে নিখোঁজ পল্লী চিকিৎসকের দুই স্ত্রী। নিখোঁজ চিকিৎসক সেলিম হোসেন (৪৫) সদর উপজেলার বি-পতেঙ্গালী গ্রামের মৃত আলা বক্সের ছেলে।
গত দুই ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে শহরতলী খড়কি গাজির বাজারস্থ রিনা মেডিকেল চেম্বারে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। নিখোঁজের ৭দিন ধরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দপ্তরে ঘুরে ঘুরে স্বামীকে ফিরে না পেয়ে সংবাদ সম্মেলনে অঝোরে কাঁদলেন পল্লী চিকিৎসকের প্রথম স্ত্রী আলজিয়া খাতুন রিনা ও দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমা খাতুন। এসময় তাদের চার সন্তানও স্বজনেরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পল্লী চিকিৎসক সেলিম হোসেন দীর্ঘদিন ধরে যশোর শহরতলী গাজীর বাজারে রিনা মেডিকেল নামে একটি চেম্বারে নিয়মিত চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছিলেন। গত ২ ফেব্রæয়ারি সন্ধ্যা ৭টার দিকে দোকানের সামনে একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস থেমে দাঁড়ায়। গাড়ি থেকে ৩৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ১০ থেকে ১২ জন নেমে সেলিম হোসেনকে পরিচয় দেন তারা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর লোক। এখনই তাদের সঙ্গে যেতে হবে। সেলিম রেজা তাদের কাছে পরিচয় পত্র দেখতে চাইলে তারা কোন কার্ড না দেখিয়ে দোকানের সার্টার বন্ধ করে সেলিম হোসেনকে প্রাইভেটকারে করে তুলে নিয়ে যান। এরপর তার স্ত্রী ও স্বজনেরা তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে সেটি বন্ধ ও বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে কয়েক দফা সেলিমের পরিবার যশোর ডিবি-পুলিশ, পিবিআই, র্যাবসহ বিভিন্ন দপ্তরে খোঁজ নিয়েও সেলিমের কোন সন্ধান পাননি। সেলিম হোসেন কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত নন বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে অঝোরে কাঁদতে কাঁদতে দ্বিতীয় স্ত্রী নাজমা খাতুন বলেন, ‘দুটি পরিবারে তাদের তিন ছেলে ও ১ মেয়ে রয়েছে। এর মধ্যে একটি ছেলে বাকপ্রতিবন্ধী। দুই পরিবারই পল্লী চিকিৎসকের উপার্জনের উপর নির্ভরশীল। তার অনুপস্থিতিতে পরিবার দুটিই অসহায়ভাবে দিন অতিবাহিত করছে। শিশুরা তাদের বাবাকে না পেয়ে ‘বাবা বাবা’ বলে কান্নাকাটি করছে। প্রতিবন্ধী ছেলে ও ছোট মাসুম বাচ্চাদের দিকে মুখের দিকে চেয়ে স্বামীকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য প্রশাসন ও সরকার প্রধানের সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা।
জেলা পল্লী চিকিৎসক সমিতির সহ সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সেলিমকে আমরা সজ্জন হিসাবেই চিনি। আমাদের এক সহকর্মী নিখোঁজ হওয়ার পর থেকেই আমরা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি। এছাড়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও র্যাবকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সাত দিন পার হলেও কিন্তু কোনো ফলাফল না পেয়ে আমরা হতাশ। এদিকে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি না থাকায় পরিবার দুটি আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। আমরা আমাদের সহকর্মীর দ্রæতই সন্ধান চাই।
এই বিষয়ে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) বেলাল হোসাইন বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টির তদন্ত চলছে।