তহীদ মনি : ধারাবাহিক উন্নয়নে বদলে গেছে যশোর রেলওয়ে স্টেশন। ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে স্টেশনটি পেয়েছে নান্দনিক রূপ। প্রশস্ত ও পরিচ্ছন্ন প্লাটফর্মে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দে অবস্থান করতে পারছেন। চালুর অপেক্ষায় রয়েছে নতুন একটি লাইন। শহরবাসীর বিনোদনের স্থানেও পরিণত হয়েছে স্টেশনটি।
রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তথ্যমতে, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে স্টেশন এলাকায় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। তাছাড়া রেলের কাজ-কর্মে গতি বৃদ্ধি ও সহজীকরণের জন্যে আরো প্রায় আড়াই কোটি টাকার কাজ হয়েছে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে। স্টেশনের প্লাটফর্মের উচ্চতা ছিল ২ ফুট ১ ইঞ্চি। এতে শিশু-বৃদ্ধসহ অনেকেরই ট্রেনের সিঁড়ি দিয়ে উঠতে অসুবিধা হতো। অনেক সময় পা পিছলে দুর্ঘটনাও ঘটত। পা পিছলে পড়ে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে কয়েকজনের।
এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য ১ নং ও ২ প্লাটফর্ম উঁচু করা হয়েছে। ১ নং প্লাটফর্ম বর্তমানে ৩ ফুট ৯ ইঞ্চি ও ২ নং প্লাটফর্মটি সাড়ে ৩ ফুট উঁচু করা হয়েছে। এতে যাত্রীরা ঝুঁকি ছাড়াই সহজে ট্রেনে পা রাখতে পারছেন। প্লাটফর্ম শুধু উঁচু হয়নি, সম্প্রসারিতও হয়েছে। ফ্লোরে বসানো হয়েছে ব্লক , বাড়ানো হয়েছে দৈর্ঘ্য। ১ নং পস্নাটফর্মের শেড বা যাত্রী ছাউনি আগে যা ছিল তার সাথে আরও দেড়শ ফুট যুক্ত করা হয়েছে। সব মিলিয়ে এ দুটি প্লাটফর্ম এখন বৃদ্ধি করে ১ হাজার ২৪০ ফুট করা হয়েছে। মালামালের লোড-আনলোড ক্ষমতা বৃদ্ধি ও সুবিধার জন্যে ১ হাজার ৬৫৮ ফুট সংস্কার, রূপান্তর ও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাছাড়া স্টেশনে সহজে ট্রেন প্রবেশ, অবস্থান ও লোড-আনলোডের স্বার্থে ৪ নং প্লাটফর্মের কংক্রিটের স্লিপারসহ ৮৫৫ মিটার লাইন সম্প্রসারণ সম্পন্ন হয়েছে। একই সময়ে নিরাপত্তা বেষ্টনির জন্যে সাড়ে ১৮শ ফুট এক্সেস কন্ট্রোল ফেন্সিং করা হয়েছে। বিশ্রাম কক্ষ, পয়ঃনিষ্কাশন, পানীয় জলের ব্যবস্থাও হয়েছে উন্নত।
স্টেশনে কর্মরত এক কর্মকর্তা জানান, সেতুমন্ত্রী ও অওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তার মেয়াদে দায়িত্ব পেয়েই যশোর রেলস্টেশন এলাকা পরিদর্শন করেন। সেসময় স্টেশনের হাল দেখে তিনি ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। ঐ সময়ই তিনি এর সংস্কারের আশ্বাস দিয়েছিলেন। তারই প্রেক্ষিতে মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে স্টেশনটির উন্নয়নে বরাদ্দ পাওয়া যায়। তবে চেহারা বদলালেও সেবার মান নিয়ে যাত্রীদের অসন্তোষ রয়েই গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ, টিকিট কালোবাজারি হয় এবং বিশ্রামাগারগুলো পরিষ্কার থাকে না।
যশোর রেলস্টেশন মাস্টার মো. আয়নাল হাসান জানান, অনেকে বাস বা সড়ক এড়িয়ে সহজে নিরাপদে গন্তব্যে যেতে রেলভ্রমণ করতে চান, কিন্তু যাত্রীদের আসন দিতে খুব চাপে পড়তে হয়। অনেক সময় অনেক সম্মানিত ব্যক্তির জন্যে রিজার্ভেশন দিতে না পেরে সামাজিকভাবেও বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। এজন্য রেলের বগি বাড়ানো প্রয়োজন।
টিকিট কালোবাজারির বিষয়ে তিনি বলেন, এখন অনলাইনে টিকিট বুকিং দেয়ার ব্যবস্থা থাকায় মানুষ আরো রেলমুখী হচ্ছে। শুধু আসন ও বগি বৃদ্ধি করতে হবে, তা হলে যাত্রীদের ক্ষোভ অনেক কমে আসবে। তারমতে, যশোর রেলস্টেশনে এখন বগির সংখ্যা বেড়েছে। দিনরাত ২৪ ঘণ্টায় আন্নগর ট্রেন হিসেবে চিত্রা, সুন্দরবন, রূপসা, সাগরদাঁড়ি, কপোতাক্ষ, সীমান্ত এক্সপ্রেস আপডাউন একজোড়া করে ১২ টা ট্রেন, বেনাপোল ও বেতনা এক্সপ্রেস নামে ৪টি লোকাল ট্রেন, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মহানন্দা, নকশীকাঁথা ও রকেট মেইল নামে ৬ টি ট্রেন চলছে। এছাড়া সপ্তাহে দুদিন খুলনা-কোলকাতায় সরাসরি চলছে বন্ধন এক্সপ্রেস । সব মিলিয়ে যাত্রী, মালামাল ও অন্যান্য চাপ বেড়েছে, তাই এই সংস্কার জরুরি ছিল। তবে তিনি স্বীকার করেন বিশ্রামাগার, আরো একটি ওভার ব্রিজসহ আরো কিছু সংস্কার ও উন্নয়ন হওয়া আবশ্যক। তাহলে যাত্রীরা আরো ভালো সার্ভিস পাবেন।
যশোর রেলস্টেশনগুলোর দায়িত্বে থাকা সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এএনই) কাজী ওয়ালিউল হক জানান, দৃশ্যমান উন্নয়ন ছাড়াও সিগন্যালিং সিস্টেমও আধুনিকায়ন এবং রঙীন বাতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। উন্নয়ন কাজ শেষ হয়েছে। এখন হস্তান্তরের অপেক্ষায় আছি।