এস হাসমী সাজু : মধ্য অগ্রহায়ণে একদিকে হিমেল বাতাস অন্য দিকে সূর্যোতাপে বাড়ছে রোগ ব্যাধি। নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। শিশু বৃদ্ধ বয়স্ক কেউই বাদ পড়ছে না এই বৈরি আবহাওয়ার প্রকোপ থেকে। তবে শিশু ও বয়স্করা সবচেয়ে বেশি ভুগছেন।
সাধারণ ঠাণ্ডা জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্টে অধিকাংশ মানুষ হাসপাতালমুখী হয় না। পাড়ামহল্লার চিকিৎসকদের কাছ থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে থাকেন। কেউ কেউ নিজেরাই ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান। তবে মারাত¥ক অবস্থা হলে উচ্চবিত্তরা ছোটেন বেসরকারি হাসপাতালে। মধ্য ও নি¤্নবিত্তরা আসেন সরকারি হাসপাতালে। এরপরেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপ বাড়ছে। যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে শিশু বিভাগে রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমসিম খাচ্ছেন চিকিৎসক, সেবিকা ও কর্মচারীরা। এছাড়া হাসপাতালের বহিঃবিভাগ ও চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারেও এ ধরনের রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। এ হাসপাতালে শিশুদের ২৪ বেড থাকলেও রোববার সকাল ৮টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যšত্ম বিভিন্ন রোগে নতুন করে ২৩জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
গতকাল হাসপাতালে নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রাšত্ম হয়ে মোট ২৯০জন শিশু চিকিৎসা নিয়েছে। এর মধ্যে পূর্বের ৬ ও নতুন ২৩ মোট ৮৫ শিশু ২৪ শয্যার শিশু ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের বহিঃবিভাগের দুইটি কড়্গ থেকে চিকিৎসা নিয়েছে ২০৫জন শিশু।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ওয়ার্ডে ভর্তি শিশুদের মধ্যে ১০ শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রাšত্ম। এছাড়া বাকি ১৩জন শিশু বমি, ব্রঙ্কাইটিস, শ্বাসকষ্ট ও ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগে আক্রাšত্ম হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। নিউমোনিয়ায় আক্রাšত্ম শিশুদের ব্যাপারে চিকিৎসক-সেবিকা বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছেন। আক্রাšত্ম শিশুদের বয়স ৬ মাস থেকে দেড় বছরের মধ্যে। শিশুদের জন্য ওয়ার্ডে আলাদা নিউ নেটাল বস্নক তৈরি করা হয়েছে। সেখানে ৫টি বেবি ওয়ারমেন্স (শিশুকে লাইট থেরাপি দেওয়ার মেশিন) এবং ৬টি ইনকিউবেটর প্রিমাচ্যুয়েটে শিশুদের রেখে চিকিৎসা সেবা দেয়ার কথা। কিন্তু ওই বস্নকে গিয়ে দেখা যায় ৬টির স্থলে একটি ইনকিউবেটর রয়েছে তাও অচল। এ সময় নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সেবিকা বলেন বাকি ৫টি নষ্ট।
রোববার সকালে শিশু ওয়ার্ডে শামছুন নাহার তার ২০দিনের শিশু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চিকিৎসক ব্যবস্থাপত্র দিয়ে জানান শিশু নিউমোনিয়া আক্রাšত্ম হয়েছে।
যশোর মেডিকেল কলেজের শিশু বিভাগের প্রধান প্রফেসর ডা. মাহাবুবুর রহমান জানান, অগ্রহায়ণ মাসের শুরম্ন থেকে শীতের অবহাওয়া দেখা দেয়ায় শিশুরা জ্বর ও ঠাণ্ডাজনিত রোগে আক্রাšত্ম হচ্ছে বেশি। এসব রোগে আক্রাšত্ম হলে শিশুরা ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেয়। জ্বরের সঙ্গে খাবারে অরম্নচি থাকে এবং পালসও বেড়ে যায়। এসব শিশুদের দ্রম্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারলে কোনো সমস্যা হয় না। শিশুদের ঠাণ্ডা থেকে দূরে রাখার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আব্দুস সামাদ জানিয়েছেন, এ সময় শিশুরা যাতে ধুলোবালিতে খেলতে না যায়, আইসক্রিমসহ অন্যান্য ঠাণ্ডা পানীয় বা খাবার না খায় সেদিকে অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। কুসুম কুসুম গরমপানি শিশুদের ব্যবহার ও খাওয়ানোর কাজে ব্যবহার করতে হবে। তিনি আরও জানিয়েছেন, নবজাতক শিশুর তাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা খুবই কম, তাই অল্প শীতেই তারা কাবু হয়ে যায়। যে বাচ্চা পূর্ণ ৩৭ সপ্তাহ মাতৃগর্ভে কাটিয়ে জন্ম নিয়েছে তার ক্ষেত্রে জটিলতা কম। এ সময় মায়েদের উচিত বাচ্চাকে ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ানো। বুকের দুধে রোগ প্রতিরোধ শক্তি বাড়ায়। ফলে শিশু সহজে ঠাণ্ডা, কাশি ইত্যাদিতে আক্রাšত্ম হয় না।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আখতারম্নজ্জামান বলেন, মৌসুম পরিবর্তনের কারণে ঠাণ্ডা-কাশি-জ্বর হতেই পারে। বিশেষ করে এ সময় শিশুদের ভাইরাসজনিত রোগ ব্রঙ্কাইটিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। এ রোগে আক্রাšত্ম শিশুর কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়ে থাকে। তিনি আরও জানিয়েছেন, গ্রামাঞ্চলের অনেক বাবা-মা শিশু ঠাণ্ডাজনিত শ্বাসকষ্টে ভুগলে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে নিজেরা চিকিৎসা শুরম্ন করেন। এতে শিশুরা আরো বেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে রোগের মাত্রাও বেড়ে যায়। তাই কাশির জন্য বাড়িতে সাধারণ চিকিৎসা দেয়া গেলেও শ্বাসকষ্ট উপশমে দ্রম্নত চিকিৎসকের কাছে নেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। কোনো অবস্থাতেই নিজেদের খুশিমত অ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়ানোর কথাও বলেছেন তিনি।