বাগেরহাট ও চিতলমারী প্রতিনিধি : বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় এক মাদরাসা ছাত্রীকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় ছুরিকাঘাতে যুবলীগ কর্মী আব্দুল জব্বার শেখ (২৬) খুন হয়েছেন। শুক্রবার দিবাগত রাত পৌনে দশটার দিকে তিনি মারা যান। এসময় রাজীব শেখ (২৬) নামের এক যুবক আহত হন। এদিকে হত্যাকা-ের খবর পেয়ে উত্তেজিত জনতা হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত দেলোয়ার মুন্সী ওরফে আকাশদের তিনটি বসত ও দুটি রান্নাঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। উপজেলার গোড়ানালুয়া গ্রামের বাংলাদেশ সেবাশ্রমের পাশে এই হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে।
নিহত আব্দুল জব্বার শেখ বড়বাগ গ্রামের আব্দুল হক শেখের ছেল। আহত রাজীব শেখ গোড়া নলুয়া গ্রামের মো. তৈয়ব শেখের ছেলে। আহত রাজীবকে মুমূর্ষু অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। ছুরিকাঘাতকারী দেলোয়ার মুন্সী ওরফে আকাশ ওই গ্রামের ডাবলু শেখের ছেলে।
নিহতের সেজে ভাই মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ভাই জব্বার দুবাই প্রবাসী। মাস তিনেক আগে সে বাংলাদেশে এসেছে। বংশীয় এক চাচাতো বোনের শ্লীলতাহানীর প্রতিবাদ করায় দেলোয়ার, দীন ও তাদের বাবা ডাবলু মুন্সি বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে আমার ভাইকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। আমরা এ হত্যাকা-ের সাথে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারসহ ফাঁসির দাবি জানাই।’
চিতলমারী উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও নিহতের চাচাতো ভাই শেখ মাহাতাবুজ্জামান জানান, এ ধরণের ন্যাক্কারজনক ঘটনা চিতলমারীর ইতিহাসে এই প্রথম। এলাকার মানুষ শোকাহত হয়ে পড়েছে। এ ঘটনায় দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।
পুলিশ জানায়, দুই-তিন দিন আগে দেলোয়ার মুন্সী ওরফে আকাশ নিহত আব্দুল জব্বার শেখের প্রতিবেশী এক মাদরাসা পড়–য়া কিশোরীকে উত্যক্ত করে। এই বিষয়ের প্রতিবাদ করে আব্দুল জব্বার শেখ এবং রাজীব শেখ। তাদের সাথে শুক্রবার সন্ধ্যার দিকে দেলোয়ার মুন্সী ওরফে আকাশ, তার ভাই দিনু মুন্সি ও বাবা ডাবলুর সাথে বাকবিতা-া হয়। একপর্যায়ে শুরু হয় হাতাহাতি।
এসময় আকাশ ধারালো ছুরি দিয়ে রাজীব ও জব্বারকে কুপিয়ে আহত করে। স্থানীয়রা তাদেরকে উদ্ধার করে চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপে¬ক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আব্দুল জব্বার শেখকে মৃত ঘোষণা করেন। এছাড়া, মো. রাজীব শেখের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্যে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে বড়বাগ এলাকার মোজ আলীর স্ত্রী রহিমা বেগম জানান, ফজরের আজানের সময় ১৫/১৬ জনের একটি দল তার বাড়িঢুকে গোয়াল ঘর থেকে তিনটি গরু হাঁস মুরগি, চাষকরা ট্রাকটার লুটকরে নিয়েছে।
চিতলমারী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহাতাব উদ্দিন বলেন, নিহত আব্দুল জব্বার ইউনিয়ন যুবলীগের কর্মী ছিলেন।
চিতলমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এএইচএম কামরুজ্জামান খান জানান, খবর পেয়ে শুক্রবার রাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। উত্তেজিত জনতা ছুরিকাঘাতকারী দেলোয়ার মুন্সিদের বসতঘরে অগ্নিসংযোগ করে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। হামলাকারীদের আটক করতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে। আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
সর্বশেষ জানাগেছে, শনিবার বাদ আসর নামাজে জানাজা শেষে নিহত জব্বারের মরদেহ আড়–য়াডিহি মাদরাসা গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে।