এস হাসমী সাজু : যশোরের ২৭৫টি কমিউনিটি ক্লিনিকে মাসে গড়ে সাড়ে পাঁচ লাখ রোগী সেবা নিচ্ছে। মাতৃসেবা, শিশু স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার পরিকল্পনা পরামর্শ প্রদানের জন্য প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিককে গড়ে দুই হাজার রোগীর টার্গেট দেয়া হয়েছে স্বাস্থ্যবিভাগ থেকে। সবকটি ক্লিনিক টার্গেট পূরণ করেছে, উপরন্তু দু একটি টার্গেটের চেয়েও অনেক বেশি রোগী সেবা দিয়েছে। এ হিসেবে ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর অর্জন শতভাগ। যদিও ক্লিনিকগুলোতে কর্মরতদের দায়িত্ব পালনের ধরণ নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে সেবা গ্রহিতাদের। পাশাপাশি সুচিকিৎসার জন্য যোগ্য চিকিৎসক দেয়ার দাবিও জানিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
স্বাস্থ্যসেবাকে জনগণের দোর গোড়ায় পৌঁছে দিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কমিউনিটি ক্লিনিক নতুন দিগšত্ম সৃষ্টি করেছে। হাতের কাছেই স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার সুযোগ থেকে কেউই বঞ্চিত হতে চাচ্ছেন না। বরং সেবা নিতে ছুটছেন রোগাগ্র¯ত্ম মানুষ।
সাধারণত কমিউনিটি ক্লিনিকে গর্ভবতী মায়েদের প্রসবপূর্ব ও পরবর্তী সেবা, শিশুর সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা এবং স্বাস্থ্য পুষ্টি, পরিবার পরিকল্পনা শিড়্গা ও পরামর্শ প্রদান করা হয়। ক্লিনিক থেকে বিনামূল্যে মেলে ২৭ প্রকারের ওষুধ।
প্রথম দিকে সচেতনতার অভাবে ক্লিনিকগুলোতে সেবা গ্রহিতাদের তেমন ভিড় ছিল না। ক্রমশঃ বাড়ছে রোগী। আগে যেখানে রোগী খুঁজতে বাড়ি বাড়ি যেতেন হেলথ প্রভাইডাররা, সেখানে এখন রোগী সামাল দিতেই হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
তবে অভিযোগ আছে শহর কেন্দ্রিক কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো সময় মেনে চললেও জেলা সদর থেকে দূরে অবস্থিত ক্লিনিকগুলো দেরি করে খোলে ও তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়। আবার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের সেবা প্রদান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে কারো কারো মধ্যে।
সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে প্রথম কমিউনিটি ক্লিনিক প্রকল্প চালু হয়। ২০০১ সালের পর এগুলো বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় মেয়াদে ড়্গমতায় আসার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে দেশের সাথে যশোরের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোও চালু করেন। বর্তমানে যশোরের ৯১টি ইউনিয়নে ২৮২টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে চালু আছে ২৭৫টি; বাকি ৭টিতে সংস্কার কাজ চলছে। এই ২৭৫টি ক্লিনিকের মধ্যে সদর উপজেলায় ৬০টি, ঝিকরগাছা উপজেলায় ৩২টি, মণিরামপুর উপজেলায় ৪৭টি, বাঘারপাড়া উপজেলায় ২৩টি, কেশবপুর উপজেলায় ২৮টি, অভয়নগর উপজেলায় ২৬টি, শার্শা উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে ৩৯টি এবং চৌগাছা উপজেলায় ২৭টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।
সিভিল সার্জন অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বলেন, বর্তমানে এই ক্লিনিকগুলো গ্রামের মানুষদের একমাত্র আশ্রয়স্থলে রূপাšত্মরিত হয়েছে। গ্রামের গরিব মানুষ যেকোনো অসুখে প্রথমেই ঘরের পাশে কমিউনিটি ক্লিনিকে যাচ্ছেন। সব রোগের চিকিৎসা না পেলেও পাচ্ছেন সঠিক পরামর্শ। সপ্তাহের ৬দিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ৩টা পর্যšত্ম কমিউনিটি ক্লিনিকে একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার(সিএইচসিপি) রোগীকে সেবা ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
যশোরের বাহাদুরপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, ইছালি ও কিসমত রাজাপুর কমিউনিটি ক্লিনিক, বার্লিয়াডাঙ্গা, লেবুতলা ফুলবাড়ি, বিরামপুর ও নওয়াপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে গত এক সপ্তাহে পরিদর্শনে দেখা যায়, নির্ধারিত সময়ে খোলে এবং বন্ধ হয়। গত মঙ্গলবার সদর উপজেলার কাঠমারা কমিউনিটি ক্লিনিকে এক প্রসূতীর নরমাল ডেলিভারি হয়। পরে কমিউনিটি ক্লিনিকের পড়্গ থেকে ফুল দিয়ে ছাড়পত্র দেওয়া হয় মা ও সšত্মানকে।
সদরের বাইরের কয়েকজন সেবা গ্রহিতার অভিযোগ, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডাররা বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অনেক সময় ক্লিনিক বন্ধ রখেন। কোনো কোনোটা আগেই বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া যশোর সদর উপজেলার হাশিমপুর, কাশিমপুর ও ভেকুটিয়ায়ও ক্লিনিক মাঝে মাঝে বন্ধ থাকে বলে অভিযোগ করেন এলাকাবাসী।
বিরামপুর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি শহিদুল ইসলাম জানান, এখন আগের মত পরিবেশ নেই। এখন সপ্তাহের প্রায় দিনই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরিদর্শনে আসেন।
বাহাদুরপুর গ্রামের বাসিন্দা নাছির উদ্দিন জানান, গত সোমবার হঠাৎ শরীর গরমসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্য দেখা দেয় তার। কমিউনিটি ক্লিনিকে গেলে কর্মরতরা কিছু ওষুধ দেয়। সেই ওষুধেই সুস্থবোধ হচ্ছিল। পরে হাসপাতালে গিয়ে উন্নত সেবা নিয়েছি।
শহরের লেবুতলা কমিউনিটি ক্লিনিকে গিয়ে দেখা যায়, আশা এনজিওর সোলায়মান নামে এক কর্মকর্তা অফিসের কাজ করতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি ছুটে যান কাছের কমিউনিটি ক্লিনিকে। দায়িত্বরত সিএইচসিপি (হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার) কে বুকে ব্যথা আর শ্বাসকষ্টের কথা জানান। তখন সিএইচসিপি তাকে প্যারাসিটামলের সঙ্গে একটি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ দেন। তখন সোলাইমানের নিজের রোগের উপসর্গ আর ওষুধের ধরণ নিয়ে দ্বিধায় পড়ে যান। পরে ওষুধ না নিয়েই বেরিয়ে আসেন ওই ক্লিনিক থেকে। পরে হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নেন।
যশোর সদর উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মীর আবু মাউদ জানান, যশোর সদরের ৬০টি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ে খোলা ও বন্ধ করা হয়। এই ৬০টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিটিতে গড়ে ৩০ থেকে ৪৫জন রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। এছাড়াও প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মাসে ২ হাজার রোগী দেখার টার্গেট দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান টার্গেট পূরণ করতে সড়্গম হয়েছে। এজন্য জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের মাসিক মিটিংয়ে অর্জন শতভাগ দেখানো হয়েছে।
যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের একজন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) বলেন, ‘এক সপ্তাহের প্রশিড়্গণে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) কিভাবে মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিতে পারে। অনেক সময় ভুল চিকিৎসাও দিয়ে দেন।’ এজন্য তিনি কমিউনিটি ক্লিনিকের সুফল পাওয়ার জন্য উপযুক্ত চিকিৎসক নিয়োগের দাবি জানান।
সিভিল সার্জন বিপস্নব কাšিত্ম বিশ্বাস বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিক হওয়ায় মানুষের দোড়গোড়ায় স্বাস্থসেবা পৌঁছে গেছে। ফলে তৃণমূল মানুষের কাছে এ ক্লিনিক এখন মডেল। তিনি আরও বলেন জেলা ও উপজেলার কিছু ক্লিনিকে একটু সমস্যা আছে। তবে আগামীতে সেগুলো দ্রম্নত সমাধান করা হবে।