১০ই জুন ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ, ২৭শে জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে ‘ভূতের আছর’




এস হাসমী সাজু : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রাফি রিপোর্টে যেন ‘ভূতের আছর’ পড়েছে। টিউমার রোগীর রিপোর্টে আসছে গর্ভবতি, পেটে কন্যা সন্তান চিহ্নিত হলে ডেলিভারি হচ্ছে পুত্র। গত দেড় মাস যাবৎ এ ধরনের উল্টাপাল্টা রিপোর্ট দিচ্ছে আল্ট্রাসনোগ্রাফি যন্ত্রটি। চিকিৎসকরা বলছেন, যন্ত্রের সমস্যা আর স্টোরকিপার বলছেন যন্ত্র ভালো নতুন ডাক্তাররা রিপোর্ট ভুল করছেন। কর্তৃপক্ষ বিষয়টি জানে না বিধায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি কার্যক্রম চালু রেখেছেন। আর সেই এ অবস্থাতেই প্রতিদিন গড়ে ৬০-৬৫ রোগী আল্ট্রাসনোগ্রাফি করছেন।
গত ১৩ ডিসেম্বর ঝিকরগাছা উপজেলার মাগুরা গ্রামের শাহ নেওয়াজের স্ত্রী রুমি নেওয়াজ(৩২) হাসপাতালের গাইনী বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসক ওই নারীকে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করার পরামর্শ দেন। ওই দিনই তিনি হাসপাতালে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করান। চিকিৎসকরা তাকে জানান, তার গর্ভে কন্যা সন্তান আছে। সম্ভাব্য ডেলিভারি তারিখ দেন ২০জানুয়ারি। কিন্তু তিন দিন পর ২৫ ডিসেম্বর তিনি হাসপাতালে নরমাল ডেলিভারি মাধ্যমে পুত্র সন্তান জন্ম দেন। এ ঘটনার পর ভুল রিপোর্টের বিষয়টি সামনে আসে। তবে সাধারণ রোগীর এসব অভিযোগ আমলে নেয়া হয়নি।
সম্প্রতি হাসপাতালের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা তার এক আত্মীয়ের পেট ব্যথা ও রক্তক্ষরণের কারণ নির্ণয়ের জন্য হাসপাতালেই আল্ট্রাসনোগ্রাফী করান। রিপোর্ট বলা হয় তিনি ৩৭ সপ্তাহের গর্ভবতি। রিপোর্ট দেখে গাইনী চিকিৎসকের সন্দেহ হলে তিনি বেসরকারি ক্লিনিকে থেকে আলট্রাসোন করাতে বলেন। সেখানকার রিপোর্টে জানা যায় রোগীর ইউটেরাসে টিউমার হয়েছে। এ বিষয়টি হাসপাতালের মাসিক মিটিং সকলের নজরে আনেন ওই কর্মকর্তা। এরপরেও হাসপাতালে ‘ভুলভাব’ আল্ট্রাসনো বন্ধ হয়নি।
রেডিওলোজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে ৬টি আলট্রাসনো মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা টিক্কার অনুদানের প্রাপ্ত উন্নত মানের মেশিন। মেশিনটি ভালো থাকলেও এটি অজ্ঞাত কারনে ব্যবহৃত হয় না। আরো দুটি ফেলে রাখা হয়েছে। এছাড়া দুইটি মেশিন নষ্ট দেখানো হয়েছে। একটি মেশিন দিয়ে কাজ চলছে। যেটি এখন ভূতুড়ে রেজাল্ট দিচ্ছে। যে গুলো ফেলে রাখা হয়েছে সেগুলোও অব্যবহৃত থাকতে থাকতে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে রেডিওলোজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের ইনর্চাজ মৃত্যুঞ্জয় রায় জানিয়েছেন, হাসপাতালের একটি মাত্র সচল মেশিন আছে। কিন্তু গত দেড়মাস থেকে এই মেশিনের ‘থ্রেটবল’ নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে ছবি ভালো দেখা গেলেও, টিউমার, গর্ভের সন্তান, স্টোন এবং কিডনির মাপ বা মেজরমেন্ট সঠিক ভাবে নির্ণয় করা যাচ্ছে না। ফলে রিপোর্ট ভুল আসছে। ২০দিন আগে মেরামতের জন্য হাসপাতালে লিখিত আবেদন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত মেরামতের কোন উদ্যোগ নেননি।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অভিসার ডা. আব্দুস সামাদ জানান, হাসপাতালের আলট্রাসোন রিপোর্ট ভুল হচ্ছে বিষয়টি আমার জানান নেই।
হাসপাতালের স্টোর ইনর্চাজ সাইফুল ইসলাম জানান, হাসপাতালে মেশিন মেরামতের আবেদন পেয়েছি। টেকনেশিয়ানরা দেখে বলেছে মেশিনে কোন সমস্যা নেই। তিনি আরও জানান, সংশ্লিষ্ট বিভাগের চিকিৎসকরা পরীক্ষা না করে ইন্টানীদের দিয়ে আলট্রাসোন করানোর জন্য ভুল রিপোর্ট হচ্ছে।
রেডিওলোজি এন্ড ইমেজিং বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. আবু সাঈদ জানান, ‘হাসপাতালে আমিসহ ডা. ফারহানা হক ও মেডিকেল অফিসার ডা. নূরজাহান খাতুন আলট্রাসোন করি। কোন ইন্টানী চিকিৎসক আলট্রাসনো করে না। মেশিন একটু সমস্যা দিচ্ছে। মাঝ মধ্যে রিপোর্ট ভুল হচ্ছে । এজন্য মেশিন মেরামতের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন দেওয়া হয়েছে।’

হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. আখতারুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে ভুল রিপোর্টের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। এছাড়া মেশিন ঠিক আছে। কোন সমস্যা নেই, ভুল রিপোর্ট হাসপাতাল থেকে যদি সরবরাহ হয়ে থাকে তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। প্রমাণ মিললে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পাদক ও প্রকাশক : শাহীন চাকলাদার  |  ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক : আমিনুর রহমান মামুন।
১৩৬, গোহাটা রোড, লোহাপট্টি, যশোর।
ফোন : বার্তা বিভাগ : ০১৭১১-১৮২০২১, ০২৪৭৭৭৬৬৪২৭, ০১৭১২-৬১১৭০৭, বিজ্ঞাপন : ০১৭১১-১৮৬৫৪৩
Email : samajerkatha@gmail.com
পুরাতন খবর
Fri Sat Sun Mon Tue Wed Thu
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
স্বত্ব © samajerkatha :- ২০২০-২০২২
crossmenu linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram