সমাজের কথা ডেস্ক : ঢাকার বেইলি রোডের ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নাজমুল ইসলাম এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে সদ্য পাস করা ছাত্র কে এম মিনহাজ মারা গেছেন বলে সন্দেহ করছেন তাদের পরিবার। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) মর্গে রাখা একটি মরদেহকে দুই পরিবারের সদস্যরা তাদের নিখোঁজ হওয়া ব্যক্তি বলে দাবি করছেন।
এ অবস্থায় ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে মরদেহ সনাক্ত করতে নাজমুল ও মিনহাজের বাবা-মায়েদের নমুনা নেওয়া হয়েছে। সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিটের এক কর্মকর্তা জানান, ৬টি মরদেহ এতো বেশি পুড়েছে যে, খালি চোখে সনাক্ত করা সম্ভব না। যে কারণে মরদেহ পেতে দুই পরিবারকেই ডিএনএ রিপোর্ট পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া জানান, এ অগ্নিকাণ্ডে নিহত ৪৬ জনের মধ্যে ছয়জনকে আর চেনার উপায় নেই। ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে পরিচয় শনাক্ত হলে তাদের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। ছয়জনের মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।
নাজমুল ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চতুর্থ বর্ষের ছাত্র ছিলেন জানিয়ে তার বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মর্গে কয়েকটি মরদেহ দেখে একটি তার ছেলের বলে মনে হয়েছে।’ একই কথা বলেছেন নাজমুলের মামা আনোয়ার হোসেন গাজী। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘আমি মর্গের রুমে গিয়ে সবগুলো মরদেহ উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে দেখেছি। এতো বেশি পুড়ে ছাই হয়েছে যে খালি চোখে দেখে বোঝা যাচ্ছে না। তবে একটি বডি দেখে নাজমুলের দেহ বলে মনে হচ্ছে। বডি স্ট্রাকচার মনে হচ্ছে তা নাজমুলের।’
এদিকে আগুনে মৃত্যুও সংবাদ শুনে মিনহাজের খোঁজে তার বাবা অলি উল্লাহ, মা আমেনা বেগমসহ অন্যান্য স্বজনরা হাসপাতালে ছুটে আসেন। স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতালে আসা মিনহাজের দূর সম্পর্কের মামা আবু রায়হান শরীফের সঙ্গে কথা হয়। তিনি আমাদের সময়কে বলেন, ‘রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়ার সময় মিনহাজের হাতে ঘড়ি ছিল। আমরা একটি মরদেহের হাতে ঘড়ি দেখছি, এছাড়া মিনহাজের সামনের দাঁত দুটি উঁচু, আমরা সেই মরদেহের সামনের দুটি দাঁত উঁচু দেখছি। এছাড়া মিনহাজের পেটে একটি অপারেশন হয়েছিল, সেই দাগও বোঝা যাচ্ছে।’
আবু রায়হান শরীফ বলেন, ‘আমরা যে মরদেহটি মিনহাজের বলে দাবি করছি, একই মরদেহ নাজমুলের বলে দাবি করছেন তাদের পরিবারও। এ বিষয়ে হাসপাতালেই দুই পরিবারের সদস্য একে-অপরের সঙ্গে কথা হয়েছে। যেহেতু মরদেহ নাজমুলের পরিবার থেকে তাদের ব্যক্তি বলে দাবি করছেন, এখন ডিএনএ রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে।’
নাজমুলদের বাড়ি মুন্সিগঞ্জের সদরে, তার বাবা নজরুল ইসলাম ঢাকায় ব্যবসা করেন। পরিবারের সঙ্গে বনশ্রীতে বসবাস করতে তিনি। অপরদিকে, মিনহাজদের বাড়ি চাঁদপুরে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা শেষে একটি সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরি নিয়েছিলেন। বড় ভাই মেহেদী হাসানের সঙ্গে ঢাকায় বসবাস করতেন।
গতকাল শুক্রবার রাত পৌনে ১০টার দিকে বেইলি রোডের ‘গ্রিন কোজি কটেজ’ ভবনে লাগা আগুন লাগে। দুই ঘণ্টার চেষ্টায় রাতে ১১টা ৫০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। এ ঘটনায় আজ দুপুর পর্যন্ত ৪৬ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে ৪৩টি মরদেহ সনাক্ত এবং তাদের মধ্যে ৩৫ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ছাড়া আরও ১২ জন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।
ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, বেইলি রোডের যে ভবনে আগুন লেগেছে সেটির নিচতলায় দুটি ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম বিক্রির দোকান ও একটি জুসবারের দোকান ছিল। দ্বিতীয় তলায় কাচ্চি ভাই নামের একটি রেস্টুরেন্ট, তৃতীয় তলায় ইলিয়ন নামের একটি পোশাকের ব্র্যান্ডের দোকান, চতুর্থ তলায় খানাস ও ফুকো নামের দুটি রেস্টুরেন্ট, পঞ্চম তলায় পিৎজা ইন নামের একটি রেস্টুরেন্ট, ষষ্ঠ তলায় জেস্টি ও স্ট্রিট ওভেন নামের দুটি রেস্টুরেন্ট এবং ছাদের একাংশে অ্যামবেশিয়া নামের আরেকটি রেস্টুরেন্ট ছিল।"