লোহাগড়া (নড়াইল) প্রতিনিধি : সমিতিতে জমাকৃত ১০ কোটি টাকা ফিরে পাওয়ার শেষ সূত্রের মৃত্যুতে দিশেহারা লোহাগড়ার রামকান্তপুর মিলবাজার আদর্শ সমিতির ১২শ গ্রাহক। টাকা ফেরত দিতে সম্মত হওয়ার রাতেই সমিতি ম্যানেজারের মৃত্যু ‘বিনা শেঘে বজ্রপাতের’ মত তাদের ঘাড়ে সাওয়ার হয়েছে।
উপায়ন্ত না পেয়ে টাকা ফিরে পেতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে তারা। সোমবার(১১ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় মিল বাজারে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০০৮ সালে রামকান্তপুর মিল বাজারে রামকান্তপুর মিলবাজার আদর্শ সমিতি নামে একটি সমবায় সমিতির কার্যক্রম শুরু হয়। নোয়াগ্রাম ইউনিয়নের চরশামুকখোলা গ্রামের মৃত আব্দুল বারিক শেখের ছেলে মো. নুর ইসলাম ওরফে নুর মিয়া((৬০)সহ কয়েকজন ছিলেন এর উদ্যোক্তা।
সর্বশেষ গ্রাহক সংখ্যা ছিলো প্রায় ১২শ। ওই গ্রাহকদের কাছ থেকে সমিতির কর্মকর্তারা সঞ্চয়, আমানত, ডিপিএসসহ নানা উপায়ে প্রায় ৩ কোটি (আসল) টাকা গ্রহণ করে। সর্বশেষ সুদ—আসলসহ গ্রাহকদের পাওনা হয় প্রায় ১০ কোটি টাকা ।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, ওই সমিতির ম্যানেজার ছিলেন মো. নুর ইসলাম। তিনি শারীরিক প্রতিবন্ধিও ছিলেন। গ্রাহকরা হঠাৎ করেই টের পান সমিতির পরিচালকরা টাকা—পয়সা নিয়ে ছলচাতুরি করছেন। তারা টাকা ফিরে পাবার জন্য মো. নুর ইসলামসহ অন্যদের বারবার তাগিদ দিতে থাকেন। গ্রামে এ বিষয়ে কয়েক দফায় শালিসও হয়।
শালিসে মো. নুর ইসলাম টাকা ফেরত দিতে সম্মত হন। কিন্তু সম্মতি প্রদানের রাতেই (১৮ অক্টোবর ২০২৩) নুর ইসলাম এর মৃত্যু হয়। সকালে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে। গ্রাহকদের অভিযোগ, ‘নুর ইসলাম কে পরিবারের সদস্যরা শ^াসরোধসহ আঘাতে হত্যা করে নিজ ছেলের ঘরে দঁড়িতে ঝুঁলিয়ে রেখে আত্মহত্যা বলে প্রচার করা হয়েছে।’ পুলিশ খবর পেয়ে তার লাশ উদ্ধার করে এবং পোষ্ট মর্টেম সম্পন্ন করে। এ ঘটনায় লোহাগড়া থানায় অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়।
সমিতির গ্রাহক চরশামুক খোলা গ্রামের ওবায়দুর রহমান জানান তিনি সমিতির কাছে ৩৩ লাখ টাকা পাবেন। এছাড়াও গ্রাহক সবুজ মোল্যা ১ লাখ, ইদ্রিস মোল্যা আড়াই লাখ, তরিকুল ৫ লাখের বেশি, সাইফুল ১১ লাখ টাকা পাবেন। পাওনাদারের সংখ্যা প্রায় ১২শ।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, সমিতির সদস্যরাসহ নুর ইসলামের আত্মীয় স্বজনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাড়ি, গাড়ি ফ্লাট করেছেন গ্রাহকের টাকায়। গ্রহকের টাকা আত্মসাৎ করতেই নুর ইসলাম কে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেবার চেষ্টা করছে পরিবারের লোকজন।
মৃত নুর ইসলামের স্ত্রী মর্জিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী আত্মহত্যা করেছেন। পোষ্টমর্টেম রিপোর্ট এলে বোঝা যাবে। একই দাবি মৃত ব্যাক্তির ছেলে জুয়েল রানার স্ত্রী শারমিনের।
লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ নাসির উদ্দিন জানান, বিষয়টির তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে মৃত্যর প্রকৃত কারন বলা যাবে। তবে হত্যাকান্ড হলে দোষিরা অবশ্যই শাস্তির আওতায় আসবে।