নিজস্ব প্রতিবেদক, মণিরামপুর (যশোর) : হাত—পা ছাড়াই জন্ম নেওয়া সেই লিতুন জিরা পাচ্ছে শেখ রাসেল পদক। আজ ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে এই পদক গ্রহণ করবে লিতুন জিরা। মুখ ও থুতনি দিয়ে লিখে লিতুন জিরা এখন বিজ্ঞান বিভাগ নিয়ে নবম শ্রেণিতে পড়ছে।
শেখ রাসেল পদক প্রাপ্তির বিষয়টি শেখ রাসেল আইসিটি দপ্তরের সহকারী প্রোগ্রামার তানভীর আহমেদ নিশ্চিত করেছেন। ব্যক্তিগত আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রতিভাবান বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু—কিশোর ক্যাটাগরিতে লিতুন জিরা এই পদক পাচ্ছে বলে সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানাগেছে।
লিতুন জিরা যশোরের মণিরামপুর উপজেলার সাতনল খানপুর গ্রামের প্রভাষক হাবিবুর রহমান ও জাহানারা খাতুন দম্পতির মেয়ে।
সংশি¬ষ্ট সূত্রে জানাগেছে, আজ বুধবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অনুষ্ঠানে লিতুন জিরার হাতে ‘শেখ রাসেল পদক—২০২৩’ তুলে দেবেন। জাতীয় পর্যায়ে এবার তৃতীয়বারের মত এই শেখ রাসেল পদক প্রদান করা হচ্ছে। দেশে ‘ক’ শ্রেণিভূক্ত হিসেবে শেখ রাসেল দিবস পালিত হচ্ছে।
মূখ ও থুতনি দিয়ে লিখে লিতুন জিরা পঞ্চম শ্রেণিতে বৃত্তি লাভসহ এ প¬াস পেয়ে বর্তমানে বিজ্ঞান বিভাগে নিয়ে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়ন করছে। লেখাপড়ার পাশাপাশি চিত্রাংকন, রচনা প্রতিযোগিতা, কবিতা আবৃত্তি ও গানে দারুণ প্রতিভা রয়েছে তার। উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে নানা পুরষ্কারও অর্জন করেছে লিতুন জিরা।
জানাযায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের কনিষ্ঠ পুত্র শেখ রাসেলের অমর স্মৃতি শিক্ষার্থী ও শিশু—কিশোরদের মাঝে জাগ্রত রাখতে ২০২২ সালে মন্ত্রিপরিষদ ১৮ অক্টোবর শেখ রাসেলের জন্ম দিনকে ‘শেখ রাসেল দিবস’ ঘোষণা করে। অনূর্ধ্ব ১৮ বছর বয়সী বাংলাদেশী শিশু কিশোর ও প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহ—উদ্দীপনা ও স্বীকৃতি প্রদানের লক্ষ্যে শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, ক্রীড়া, প্রতিভাবান বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু—কিশোর, শিল্পকলা ও সংস্কৃতি, ক্ষুদে প্রোগ্রামার, ক্ষুদে উদ্ভাবক, ক্ষুদে লেখক, ডিজিটাল স্কুল (প্রতিষ্ঠানিক ক্যাটাগরি), ডিজিটাল এক্সিলেন্স (প্রতিষ্ঠানিক ক্যাটাগরি)সহ সর্বমোট ১০ ক্যাটাগরিতে শেখ রাসেল পদক প্রদান করা হয়।
পুরস্কার হিসেবে ব্যক্তিগত আবেদনের ক্ষেত্রে পদক (২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ন/১১.৬৬ গ্রাম ওজন), সম্মাননাপত্র ও উন্নতমানের ল্যাপটপ প্রদান করা হবে। সরকারের আর্থিক বিধি—বিধান অনুসরণ করে এই পুরস্কার প্রদান করা হবে।
এবার ১০ ক্যাটাগরির মধ্যে প্রতিভাবান বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশু—কিশোর ক্যাটাগরিতে হাত—পা ছাড়াই জন্ম নেওয়া মণিরামপুরের লিতুন জিরা শেখ রাসেল পদকের জন্য চূড়ান্ত হয়েছে।
ছোট বেলা হতেই প্রখর মেধাবী লিতুন জিরার শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়েই লেখাপড়াসহ ছবি আঁকা, কবিতা আবৃত্তি ও সঙ্গীত চর্চায় সাফল্য অর্জন করেছে। লিতুন জিরার প্রবল ইচ্ছা শক্তির কাছে সব বাঁধা হার মেনেছে। ইতোমধ্যে কয়েকবার বিভিন্ন দিবসে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে নানা পুরস্কার লাভ করে লিতুন জিরা তার যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে।
এর আগে গত ১৫ অক্টোবর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তর হতে শেখ রাসেল পদক প্রাপ্তির বিষয়টি মৌখিকভাবে লিতুন জিরার পরিবারকে অবহিত করা হয়। ১৬ অক্টোবর একই অধিদপ্তরের এক পত্রে লিতুন জিরা শেখ রাসেল পদকের জন্য চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানানো হয়। এরপর থেকে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. মোস্তফা কামালসহ সংশি¬ষ্ট অধিদপ্তর ও সরকারের নানা সংস্থার উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তরা দফায় দফায় লিতুন জিরার পরিবারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন। পরিবারকে জানানো হয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণের সময় বাবা—মায়ের মধ্যে একজন থাকতে পারবেন। ১৬ অক্টোবর ওইদিনই করনা টেস্টসহ নানা আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্নে লিতুন জিরাকে ঢাকায় নেওয়া হয়। তাদের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির অধিদপ্তরের আওতায় রাখা হয়েছে।
লিতুন জিরার বাবা প্রভাষক হাবিবুর রহমান স্থানীয় শহীদ মুক্তিযোদ্ধা মহিলা কলেজের প্রভাষক। দীর্ঘ ১৮ বছরেও কলেজটি এমপিওভূক্ত হয়নি। তিনি বলেন, ছোট বেলা হতেই মেধাবী লিতুন জিরা। একবার দেখেই সব কিছু আয়ত্ব করতে পারে।
লিতুন জিরার মা জাহানারা খাতুন বলেন, হাত—পা ছাড়াই জন্ম নেওয়ার পর মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে বিচলিত ছিলেন। মেয়ের অনাগত ভবিষ্যত নিয়ে অনেক রাত কেঁদেছেন। কিন্তু একটু বড় হওয়ার পর বিশেষ করে স্কুলে ভর্তির পর লিতুন জিরার লেখা—পড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ ও মেধা দেখে আশান্বিত হতে থাকেন। এখন মেয়েকে নিয়ে তার অজানা ভাবনা পেয়ে বসে না। এই দম্পতি তাদের মেয়ের জন্য দেশবাসীর কাছে দোয়া চেয়েছেন।